এডিলেড টেস্টের দ্বিতীয় দিনশেষে এশেজ সিরিজ জয়ের পথে অস্ট্রেলিয়া

বিশ্বক্রিকেটে দুই কুলীন প্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়া ইংল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী লড়াই এশেজ ২০২৫ অস্ট্রেলিয়া ২-০ এগিয়ে। এডিলেড ওভালে অনুস্থানরত তৃতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া টেস্ট জিতে আরো একটি এশেজ জয়ের সোনালী সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে।

অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসে সংগ‍ৃহীত ৩৭১ রানের জবাবে ব্যাটিং করতে নেমে অনেকের মতে এই মুহূর্তে বিশ্বসেরা টেস্ট বোলিং মোকাবেলায় অনেকটা আত্মঘাতী ব্যাটিং করে দ্বিতীয় দিনশেষে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ ২১৩/৮। দুই উইকেট হাতে নিয়ে ইংল্যান্ড পিছিয়ে আছে ১৫৮ রানে।

এই টেস্টে অলৌকিক কিছু না ঘটলে বলা যায় অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ জিতে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ৩-০ এগিয়ে এশেজ ধরে রাখবে। সেই ক্ষেত্রে আলোচনা থাকবে মেলবোর্ন এবং সিডনী টেস্টে ঘুরে দাঁড়িয়ে ইংল্যান্ড ধবল ধোলাই (ক্যাঙ্গারু ওয়াশ) এড়াতে পারবে কিনা।

দলনায়ক পাট কামিন্স এবং তুখোড় স্পিনার নাথান লায়ন দলে ফেরায় সমৃদ্ধ অস্ট্রেলিয়ান আক্রমণ সামাল দেওয়ার মতো দক্ষতা এবং মানসিক দৃঢ়তা ইংল্যান্ড দলের আছে বলে দৃশ্যমান নয়।  অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে এবারের এশেজ সিরিজে হয়তো ক্যাঙ্গারু ওয়াশ হতে চলেছে বেন স্টোকসের থ্রী লায়ন্স দল। চুনকালী মেখেই দেশে ফিরবে দাপুটে বার্মি আর্মি।

এশেজ সিরিজ তৃতীয় টেস্ট, এডিলেড ওভাল।

দ্বিতীয় দিনশেষে সংক্ষিপ্ত স্কোর

অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস: ৩৭১ অল আউট (আলেক্স কারী ১০৬, উসমান খাজা ৮২, মিচেল স্টার্ক ৫৪, জোশ ইংলিস ৩২, জোফরা আর্চার ৫/৫৩, ব্রেইডন কার্স ২/৮৯, উইল জ্যাক্স ২/১০৫)

ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস: ২১৩/৮ (বেন স্টোকস ৪৫*, হ্যারি ব্রুকস ৪৫, জোফরা আর্চার ৩০*, পাট কামিন্স ৩/৫৪, স্কট বোলান্ড ২/৩১, নাথান লায়ন ২/৫১ )

এডিলেড ওভাল উইকেটে যথেষ্ট পেস বাউন্স থাকলেও পার্থ এবং ব্রিসবেনের তুলনায় কিন্তু অধিকতর ব্যাটিং সহায়ক ছিল। ম্যাচের সকালে হঠাৎ  করে অস্ট্রেলিয়ার ব্যটিংয়ের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ স্টিভ স্মিথ আনফিট হয়ে পড়ায় লাইফ লাইন পায় টেস্ট ক্যারিয়ার শেষ হওয়ার আশংখায় থাকা উসমান খাজা।

এই টেস্টে শুরুতে দুর্দান্ত গতিতে বোলিং করে জোফরা আর্চার সূচনায় অস্ট্রেলিয়াকে কোনঠাসা করে ফেলে। ট্রাভিস হেড (১০) , জেক ওয়েদারল্যাড (১৮), মার্নাস লেবুচাঙ (১৯) আর ক্যামেরুন গ্রীন (০) রানে বিদায় নিলে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর দাঁড়ায় ৯৪/৪।

উসমান খাজা আসে মিডল অর্ডারে। ৫ রানের মাথায় ওর সহজ ক্যাচ লুফে নিতে বার্থ হয় হ্যারি ব্রুক। জীবন ফিরে পাওয়া খাজা খেলেন ১২৬ বলে ৮২ রানের একটি দুর্দান্ত ইনিংস। আলেক্স কারীর সঙ্গে ৫ম উইকেট জুটিতে সংগ‍ৃহীত ৯১ রানের জুটি ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাঁড়ায়। হয়তো খাজার টেস্ট ক্যারিয়ার পুনর্জীবন লাভ করে।

ইংল্যান্ড দলের একমাত্র আর্চার ছাড়া বাকি সবার বোলিং ছিল নিতান্তই স্বাভাবিক মানের। পরিস্থিতির সুযোগ নিজের মাঠ এডিলেডে জীবনের অন্যতম সেরা ইনিংস খেলে আলেক্স কারী  (১০৬)। বরাবরের মতো ক্যাঙ্গারুর লম্বা পেছনের পায়ের মতো লোয়ার মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানরা মিচেল স্টার্ক (৫৪), জোস্ ইংলিশ (৩২) রান করলে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস ৩৭১ পৌঁছে।

এই সিরিজে বল হাতে বিধ্বংসী রূপে আবির্ভুত মিচেল স্টার্ক আবারো অর্ধশত রান করে অস্ট্রেলিয়া দলে তার অপরিহার্যতা প্রমাণ করে। এই সিরিজে এই পর্যন্ত স্টার্ক ইংল্যান্ড দলের মূল ব্যাটসম্যানদের থেকেও বেশি রান করেছে। ইংল্যান্ডের হয়ে জোফরা আর্চার ৫/৫৩ ছিল সফল বোলার। অপর প্রান্তে যোগ্য সাথী থাকলে হয়তো ভিন্ন চিত্র দেখা যেতো।

দুই দলের দলীয় ভারসাম্য বিবেচনায় বিশেষত স্টার্কসের সঙ্গে কামিন্স এবং লায়ন যুক্ত হওয়ায় ইংলিশ ব্যাটিং ৩৭১ রান তাড়া  করতে  দারুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে অনুমিত ছিল। কামিন্স আর লায়ন ছিল চিরাচরিত ঘাতকের ভূমিকায়, সঙ্গে স্কট বোলান্ড নিজের মূর্তিতে সক্রিয় থাকায় ইংলিশ ব্যাটিং চাপের মুখে পরে।

এই ইনিংসেও উইকেটের পেছনে কারী এবং মাঠ জুড়ে অস্ট্রেলিয়ান ফিল্ডাররা ছিল তুখোড়। অধিনায়ক বেন স্টোকস  (৪৫*), হ্যারি ব্রুক  (৪৫) আর লেজের দিকে জোফরা আর্চার (৩০*) দায়িত্ব বোধের পরিচয় দিতে পারেনি।

কামিন্স (৩/৫৪), বোলান্ড (২/২২ ) এবং লায়ন্স (২/৫১) সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে ইংল্যান্ড দল ২১৩ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৫৮ রানে পিছিয়ে আছে। উইকেটে যত সময় যাবে স্পিন ধরবে। অস্ট্রেলিয়া যদি ইংল্যান্ডকে ৩৫০-৪০০ রান টার্গেট দেয় চতুর্থ ইনিংসে শক্তিশালী বোলিং আর তুখোড় আক্রমণ মোকাবেলা করা ইংল্যান্ডের সামর্থে কুলোবে বলে মনে হয় না।

এখন দেখার তৃতীয় দিন সকালে অধিনায়ক বেন স্টোকস, আর্চারকে সঙ্গী করে ইংলিশ ইনিংস কতটা এগিয়ে নিতে পারে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

seventeen − 5 =