এনডেভ বাংলাদেশ প্রোগ্রামের ১৬ বছর: সকলের জন্য টেকসই জ্বালানি নিশ্চিত করার প্রয়াস

জিআইজেড বাস্তবায়িত এনার্জাইসিং ডেভেলপমেন্ট (এনডেভ) প্রোগ্রামটি আজ “এনডেভের ১৬ বছরের যাত্রা” শীর্ষক একটি কর্মশালার আয়োজন করে। টেকসই, নির্ভরযোগ্য ও সাশ্রয়ী জ্বালানি সম্প্রসারণে এনডেভ বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের প্রয়াস সকলকে জানানোর উদ্দেশ্যে সরকারি কর্মকর্তা, বেসরকারি খাতের প্রতিনিধি, উন্নয়ন সহযোগী, এবং শিক্ষাবিদদের এই অনুষ্ঠানে একত্রিত করা হয়।

২00৯ সাল থেকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অংশীদারিত্বে বাস্তবায়িত এনডেভ বাংলাদেশ সারা দেশে চল্লিশ লক্ষেরও বেশি মানুষের কাছে, বিশেষ করে গ্রামীণ, আধা-শহর এবং সুবিধাবঞ্চিত সম্প্রদায়ের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে আধুনিক টেকসই জ্বালানি প্রযুক্তি পৌঁছে দিয়েছে।

উন্নত বায়োমাস কুকস্টোভ, ইন্ডাকশন স্টোভ, বায়োমাস ব্রিকেট, সোলার হোম সিস্টেম, সোলার মিনি-গ্রিড এবং সৌর চালিত ই-রিকশা চার্জিং স্টেশন সহ বাংলাদেশের জন্য উপযোগী বিভিন্ন নবায়নযোগ্য শক্তি প্রযুক্তির প্রচারের মাধ্যমে এনডেভ কার্বন নির্গমন হ্রাসেই শুধু ভূমিকা রাখেনি, বরং স্থানীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে পরিবেশবান্ধব ব্যবসা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনাতেও সহায়তা করেছে।

কর্মশালায় উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন জিআইজেড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর জনাব ইউরগেন শিলিং এবং জনাব রতন কুমার ঘোষ, সদস্য (যুগ্ম সচিব), টেকসই ও জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা)।

অনুষ্ঠানে এনডেভের বিভিন্ন অর্জন ও কর্মপদ্ধতি বিষয়ক প্রকাশনা ও অভিজ্ঞতাকে উপস্থাপন করা হয়। “বাংলাদেশে টেকসই জ্বালানির সার্বজনীন ব্যবহার বৃদ্ধি” শীর্ষক আলোচনায় বক্তারা বলেন, সরকার পরিচ্ছন্ন রান্না ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি পণ্যের মান নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। তাঁরা আরও বলেন, জলবায়ু ও বায়ু মান উন্নয়নের পরিকল্পনার সঙ্গে পরিচ্ছন্ন জ্বালানির লক্ষ্য যুক্ত করা, পরিচ্ছন্ন রান্না, ই-কুকিং ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রযুক্তিতে বিনিয়োগে উৎসাহ দেওয়া, এবং উন্নয়ন অংশীদার ও দাতা সংস্থাদের মধ্যে সমন্বয় জোরদার করা – ইত্যাদি পদক্ষেপ টেকসই জ্বালানি উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়াও কর্মশালায় এনডেভের অংশীদার ও উপকারভোগীদের স্বীকৃতি প্রদানের একটি পর্ব অনুষ্ঠিত হয় — যাঁরা নিজেদের কমিউনিটিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, এবং অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করেছেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন জার্মান রাষ্ট্রদূত ড. রুডিগার লোটজ, তিনি বলেন, “একটি গোষ্ঠী বা কমিউনিটি যখন বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ পায় – তখন শুধু আলো জ্বলে ওঠে তাই নয়, জীবন ও বদলে যায়। একজন নারী উদ্যোক্তা অন্ধকারের পরেও তার দোকানটি চালাতে পারেন, শিশুদের আর মোমবাতির আলোতে পড়তে হয় না, একজন কৃষক তাঁর উৎপাদিত পণ্য দীর্ঘ সময় ধরে ঠান্ডা ও সতেজ রাখতে পারেন। এভাবেই টেকসই জ্বালানি সমাজকে বদলাতে পারে। এনডেভ আমাদের এই পরিবর্তনটি দেখিয়েছে – এখন আমাদের একসাথে এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে কাজ করতে হবে, যাতে বাংলাদেশ পরিচ্ছন্ন, ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক জ্বালানি রূপান্তরের পথে এগিয়ে যেতে পারে।”

এনডেভ প্রোগ্রামের পরিচালক জনাব আলেকজান্ডার হাক তার সমাপনী বক্তব্যে এনডেভের ১৬ বছরের যাত্রা থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতার আলোকে টেকসই জ্বালানির তৃণমূল পর্যায়ে প্রসারে সরকারী ও বেসরকারী সংস্থাগুলির মধ্যে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার উপর জোর দেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

10 − four =