এমসিজিতে ২০২২ তে  ফিরে আসলো ১৯৯২

সালেক সুফী

নানা নাটক, ঐতিহাসিক মুহূর্তের জন্ম দিয়ে টি২০ বিশ্বকাপ ২০০২ পৌঁছেছে চূড়ান্ত পর্বে। রবিবার ১৩ নভেম্বর ভিক্টোরিয়া রাজ্যের  নয়ন মনোরম শহর মেলবোর্নের আইকনিক এমসিজিতে ফাইনাল খেলবে বাবর আযমের অধিনায়কত্তে পাকিস্তান, জস বাটলারের ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে।  ঠিক যেমন ১৯৯২ আইসিসি বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছিল কিংবদন্তি ইমরান খানের নেতৃত্বে পাকিস্তান গ্রাহাম গুচের ইংল্যান্ড দলের বিরুদ্ধে।

১৯৯২ -২০২২।  ব্যাবধান ৩০ বছর। অনেকের স্মৃতিতে ধুলো জন্মেছে হয়তো। ১৯৯২ এবারের মতোই খাদের কিনারা থেকেই সেমি ফাইনালে উঠেছিল ইমরান খানের কর্নার্ড টাইগার্স।  গ্রুপ পর্যায়ে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলাটি বৃষ্টিবিঘ্নিত হয়ে পরিত্যাক্ত না হলে পাকিস্তান ছিটকে যেত। এবারেও কিন্তু সুপার ১২ পর্বের শেষ দিন নেদারল্যান্ডস টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেভারিট দল দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে না দেলে দেশে ফিরে যেত পাকিস্তান।

 

১৯৯২ পাকিস্তান অকল্যান্ডে সেমি ফাইনালে হারিয়েছিল টুর্নামেন্টে উড়তে থাকা নিউ জিল্যান্ডকে।  তখন তরুণ উদীয়মান ওয়াসিম আকরাম আর ইনজিমাম ছিল পাকিস্তানের জয়ের নায়ক। এবারেও কিন্তু সেই নিউ জিল্যান্ডকে পেয়েছিলো পাকিস্তান সেমি ফাইনালে। সিডনি এসসিজি মাঠে টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম ম্যাচে নিউ জিল্যান্ড স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়াকে বড়ো ব্যাবধানে হারিয়ে শুভ সূচনা করেছিল। কিন্তু সেমি ফাইনালে ঠিক জ্বলে উঠে শাহীন শাহ আফ্রিদির দুরন্ত বোলিং আর রিজওয়ান, বাবর, হারিসের ব্যাটিং পাকিস্তানকে সহজ জয় এনে দিলো। অপর দিকে কাল এডিলেড ওভালে ভারতকে ১০ উইকেটের ব্যাবধানে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে পাকিস্তানের মুখোমুখি এখন ইংল্যান্ড।

ইতিহাসের নাকি আপনা থেকেই পুনরাবৃত্তি ঘটে।  অনেকেই ভাবছেন ১৯৯২ ইমরান খানের কর্নার্ড টাইগার্সরা কিন্তু বিশ্বকাপ  জিতেছিল। এবারেও কি তাই হতে চলেছে? সময়ের ব্যাবধানে অনেক জল গড়িয়েছে। জানিনা ১৯৯২ এমসিজিতে খেলা দেখা কতজন রবিবার মাঠে থাকবেন। প্রতিবেদক কিন্তু খেলাটি টেলিভিশনে দেখে বাংলাদেশের দৈনিক পত্রিকায় রিপোর্ট লিখেছিল। মনে আছে জাভেদ মিয়াদাদ, ইমরান খান ভালো ব্যাটিং করেছিলেন। এক পর্যায়ে ইংল্যান্ড জয়ের পথে ছিল। কিন্তু সে সময়ের তরুণ ওয়াসিম আকরাম একটি ওভারেই দুটি উইকেট নিয়ে মাঠের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন। ২১ রানে জয় পেয়েছিলো পাকিস্তান। সেট ছিল কিংবদন্তি চৌকষ ক্রিকেটার ইমরান খানের শেষ ম্যাচ।

এবারেও কিন্তু ওয়াসিমের মতোই পাকিস্তানের তুরুপের তাস শাহীন শাহ আফ্রিদি। সঙ্গে আছে দুরন্ত গতিতে বল করা হারিস রউফ, নাসিম শাহ, ওয়াসিম জুনিয়র। ১৯৯২ ইমরানের দলের মতো লেগ স্পিনার মুস্তাক আহমেদের মতো আছে শাদাব খান, পাকিস্তানের বোলিং বহুমুখী আর দুরন্ত। বাবর আজম আর রিজওয়ান সেমি ফাইনালে ফর্ম ফিরে পেয়েছে। শান মাসুদ, মোহাম্মদ হারিস, ইফতিখার ভালো ব্যাটিং করছে। এমনকি সাদাব খান ব্যাট হাতেও অবদান রাখছে। সর্বোপরি সেমি ফাইনালে পাকিস্তানের ফিল্ডিং ছিল দেখার মতো। পাকিস্তান এমন এক দল যে ওদের দিনে প্রতিপক্ষকে দুমড়ে মুচড়ে ফেলে।

ইংল্যান্ড কিন্তু এই মুহূর্তে সকল ফরম্যাটে তুখোড় দল। ২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সাথে হারের পর পাল্টে গেছে ওরা।  টি২০ ক্রিকেটে গুরুত্বের সাথে নিয়ে ব্লাস্ট টুর্নামেন্ট আয়োজন করে ওরা, ভারতে আইপিএল, অস্ট্রেলিয়ায় বিগ বাশ খেলে ওদের বেশ কিছু খেলোয়াড়। ২০১৯ কোভিড সংক্রমণের সময় যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে ওরাই প্রথম খেলায় ফিরে আসে। কাল যেভাবে তুখোড় ক্রিকেট খেলে টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা দল ভারতকে উড়িয়ে দিলো তা থেকে মনে হয় ফাইনালে তারা তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলবে।

দুই ওপেনার জস বাটলার আর আলেক্স হেলস মূল ব্যাটিং স্তম্ভ হলেও ১১ জন খেলোয়াড় ব্যাটিং দক্ষ। বেন স্টোকস , ডেভিড মালান (যদি সুস্থ হয়ে ওঠে), লিয়াম লিভিংস্টোন, মঈন আলী, আদিল রাশিদ, ক্রিস ওকস সবাই কিন্তু ব্যাটিং করতে পারে। সম্প্রতি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অনেক ম্যাচ খেলেছে এবং বেশ কিছু জিতেছে।

দেখতে হবে পাওয়ার প্লেতে শাহীন, নাসিম, ওয়াসিম, রউফকে কিভাবে সামাল দেয় ওরা।  পাকিস্তান কিন্তু ভারতের মতো চুপসে যাওয়া ব্যাটিং করবে না। ইংল্যান্ডের বোলিং আক্রমণ কিন্তু পাকিস্তান থেকে পিছিয়ে। তবে খেলাটি হবে সেয়ানে সেয়ানে লড়াই।

দেখতে হবে কোন দল স্নায়ুক্ষয়ী ফাইনালে নিজেদের সেরা খেলা খেলে ট্রফি জিতে নেয়। ভারত ফাইনালে না আসায় মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে আইসিসির।  ক্রিকেট বিশ্ব বঞ্চিত হয়েছে আরো একটি ব্লকবাস্টার মহারণ দেখা থেকে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

twelve + 11 =