এশিয়া কাপ অনুর্ধ ১৯ চ্যাম্পিয়নশিপ: তারুণ্যের তেজোদীপ্ত বাংলাদেশের দাপুটে শিরোপা জয়

সালেক সুফী

মেধা, কৌশল, প্রয়োগ শক্তির মণিকাঞ্চন সম্মিলনে যোগ্যতম দল হিসাবে শিরোপা জয় করেছে বাংলাদেশের তরুণ দল।  টুর্নামেন্টের শুরু থেকে শেষ অবধি দাপুটে ক্রিকেট খেলায় বাংলাদেশ আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারতের মত দলগুলিকে বিপর্যস্ত করে শিরোপা ধরে রেখেছে। কাল ফাইনালে হারিয়েছে ইদানিং ক্রিকেটের নানা ফরম্যাটে বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠা ভারত তরুণ দলকে।  কঠিন উইকেটে প্রথমে ব্যাটিং করে বাংলাদেশ ১৯৮ রান করার পর অনেকেই ভেবেছিলো শক্তিশালী ভারত হয়তো জয় ছিনিয়ে নিবে। কিন্তু জয়ের নেশায় কৃতকল্প বাংলাদেশ উন্নত মানের বোলিং আর তুখোড় ফিল্ডিং করে ভারতকে ১৩৯ রানে গুটিয়ে দিয়ে ৫৯ রানের বিশাল ব্যাবধানে জয়ী হয়ে শিরোপা অক্ষুন্ন রাখে।

বাংলাদেশ দলের প্রতিটি খেলোয়াড়কে অত্যন্ত মেধা সম্পন্ন, কুশলী, শারীরিকভাবে প্রস্তুত আর জয়ের জন্য উৎবুদ্ধ মনে হয়েছে। গ্রুপ পর্যায়ের প্রথম ম্যাচ থেকেই দলের খেলা দেখে দলটিকে অন্নান্ন প্রতিদ্বন্দ্বী দল থেকে পৃথক মনে হয়েছে। একমাত্র শ্রীলংকার সঙ্গে গ্রূপ পর্যায়ে সামান্য ব্যাবধানে হেরে যাওয়া ছাড়া প্রতিটি ম্যাচ দাপটের সঙ্গে জিতেছে। বিশেষ করে সেমী ফাইনালে এবারের টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা দল পাকিস্তানকে বিদ্ধস্ত করেছে। ফাইনালেও প্রতাপশালী ভারতকেও দাঁড়াতে দেয় নি.বলা যায় যোগ্যতম দল হিসাবেই শিরোপা ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। দলের জয়ে প্রায় প্রতি খেলোয়াড় অবদান রেখেছে। বিজয়ের মাসে ভারত ,পাকিস্তানকে হারিয়ে শিরোপা অর্জন বাংলাদেশ ক্রিকেটকে সমৃদ্ধ করেছে।

কাল ফাইনালে উইকেট স্ট্রোকস খেলার উপযোগী ছিল না. বল সহজে উইকেটে আসেনি। ৬৬ রানে দলের ৩ নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান কালাম সিদ্দিকী (১) , জাওয়াদ আবরার (২০) এবং অধিনায়ক আজিজুল হাকিম তামিমকে ( ১৬) হারিয়ে বিপাকে ছিল বাংলাদেশের তরুণ দল। এই সময় হাল ধরে শিহাব জেমস ( ৪০) আর রিজান হোসেন (৪৭) ওদের যোগাযোগে চতুর্থ উইকেট জুটিতে যুক্ত হয় মূল্যবান ৬২ রান. শেষ দিকে ফরিদ হাসান ৩৯ রান করলে ১৯৮ রানের লড়াকু পুঁজি পায় বাংলাদেশ।

ভারত কিন্তু টুর্নামেন্টে প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের সঙ্গে হোঁচট খাবার পর তুখোড় ফর্মে ছিল. কিন্তু বাংলাদেশের তুখোড় এবং বিচিত্র বোলিং আক্রমণ ভারতকে কাল শুরু থেকেই স্বস্তি দেয় নি. দ্বিতীয় ওভারে আয়ুশ মাত্রে আর পঞ্চম ওভারে ১৩ বছরের বিস্ময় বালক বিধব সূর্যবংশীকে হারানোর পর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায় ভারত। মোহাম্মদ আমান (২৬) , হার্দিক রাজ্ (২৪), কেপি কার্তিকেয়া (২১) এবং সিদ্ধার্থ (২০) রান করে কিছুটা দৃঢ়তা দেখালেও কখনো মনে হয় নি ভারত জিতে যাবে। ভারত ইনিংসের শুরু থেকে শেষ অবধি নিয়ন্ত্রণ ছিল বাংলাদেশের অধিকারে। ইকবাল ইমন (৩/২৪) এবং বিস্ময়কর ভাবে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়া অধিনায়ক আব্দুল হাকিম তামিম (৩/৮) তুলে নিয়ে দলের সহজ জয় ছিনিয়ে নেয়।  ৩৫.২ ওভার খেলে ১৩৯ রানে শেষ হয় ভারতের ইনিংস।  ৫৯ রানে জয়ী হয়ে বাংলাদেশ মহান বিজয়ের মাসে ভারত জয় করে তরুণ এশিয়া ক্রিকেটে শ্রেষ্টত্ব অক্ষুন্ন রাখে।

বাংলাদেশ জাতীয় দল বিভিন্ন ফরম্যাটে নিয়মিত সাফল্য অর্জনে বার্থ হলেও তরুণ আর যুবকরা কিন্তু শিরোপা জিতে আশার আলো ছড়াচ্ছে নিয়মিত। এশিয়া কাপ, বিশ্ব কাপ জিতেছে অনুর্ধ ১৯ দল।  কিন্তু কেন এই অসামান্য প্রতিভাধর তরুণদের সঠিক পরিচর্যা করে জাতীয় দলের পাইপ লাইন সমৃদ্ধ করা যাচ্ছে না সেটি ভাবনার বিষয়। আশা করি উন্নত পরিবেশে, ভালো উইকেট, ভালো ঘরোয়া টুর্নামেন্টের মাদ্ধমে তরুণদের উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে বিকশিত করা হবে। এই দলটির খেলা দেখে বেশ কয়েক জনকে লম্বা রেসের ঘোড়া মনে হয়েছে। বিজয়ের মাসে জাতিকে অনাবিল আনন্দের মুহূর্ত উপহার দেয়ার জন্য প্রাণখোলা অভিনন্দন। কাল মাঝ রাতে প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ে গোল্ড কোস্ট সার্ফার্স প্যারাডাইসে বসে বাংলাদেশের তরুণদের বিজয় উজ্জাপন করেছি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

three × four =