কপ৩০: জীবাশ্ম জ্বালানি লবিস্টদের উপস্থিতি আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে

আফরোজা আখতার পারভীন

কপ৩০-এর আলোচনার পঞ্চম দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সামনে এসেছে একটি তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য—এই সম্মেলনে জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্পের লবিস্টদের উপস্থিতি আগের সব কপের রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে। বিভিন্ন পর্যবেক্ষক গ্রুপের হিসাবে, তেল, গ্যাস ও কয়লা শিল্প সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, বিশেষ করে গ্যাস রূপান্তরের পক্ষে কাজ করা কনসোর্টিয়াম ও বহুজাতিক জ্বালানি কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে।

লবিস্টদের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ

বিশেষজ্ঞদের মতে, জীবাশ্ম জ্বালানি লবিস্টদের এই বিপুল উপস্থিতি কপ৩০-এর মূল আলোচনায় ‘ফসিল ফুয়েল ফেজ-আউট’ বিষয়ে সিদ্ধান্তকে জটিল করে তুলতে পারে। বিভিন্ন দেশ যখন জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার কমানোর সুস্পষ্ট ভাষা টেক্সটে অন্তর্ভুক্ত করতে চাইছে, তখন শিল্প প্রতিনিধিরা বিকল্প শব্দচয়ন, যেমন “অবাঞ্ছিত নির্গমন ধাপে ধাপে কমানো”, “অব্যাহত গ্যাস রূপান্তর”, বা “কার্বন ক্যাপচার প্রযুক্তিনির্ভর সমাধান” ইত্যাদি প্রস্তাবের পক্ষে জোর দিচ্ছে বলে জানা গেছে।

জলবায়ু ন্যায়বিচার গ্রুপগুলো বলছে—এই লবিস্টদের সংখ্যা বাড়ার অর্থ হলো, জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্প এখনো বৈশ্বিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় রূপান্তর বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে।

সিভিল সোসাইটির কড়া প্রতিক্রিয়া

এই পরিস্থিতিতে বেলেম কনভেনশন সেন্টারজুড়ে প্রতিবাদমূলক কার্যক্রম আরও জোরদার হয়েছে।

সিভিল সোসাইটি সংগঠনগুলো একাধিক র‍্যালি, শিল্পী-নেতৃত্বাধীন পরিবেশনা এবং নীরব অবস্থান কর্মসূচি করে জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্পের প্রভাবের প্রতিবাদ জানায়। তাদের দাবি কঠোর ও স্পষ্ট:

“ফসিল ফুয়েল পলিউটারদের কপ প্রক্রিয়া থেকে বাদ দাও।”

“১.৫ ডিগ্রি বাঁচাতে হলে ফসিল ফুয়েল ফেজ-আউটের স্পষ্ট রোডম্যাপ চাই।”

“জীবাশ্ম জ্বালানিতে ভর্তুকি বন্ধ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে অগ্রাধিকার দাও।”

একটি বড় আন্তর্জাতিক জোট ‘আমাদের ফসিল-ফ্রি ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক মানবশৃঙ্খল গড়ে, যেখানে শতাধিক দেশ থেকে আগত প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তারা অভিযোগ করে বলেন, উন্নত দেশগুলো তাদের জলবায়ু প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ, আবার একই সঙ্গে জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিগুলোকে নতুন বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে।

আয়োজক দেশ ব্রাজিলের অবস্থান

ব্রাজিলিয়ান কপ৩০ সভাপতিত্বপক্ষ এ বিষয়ে সতর্ক মন্তব্য দিয়ে জানিয়েছে, “প্রতিটি কণ্ঠই শুনতে আমাদের দায়িত্ব, তবে শেষ সিদ্ধান্ত হবে বিজ্ঞান ও বৈশ্বিক ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে।”

তবে সিভিল সোসাইটির একটি অংশ বলছে—জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিগুলোকে আলোচনার অংশ হতে দিলে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় ‘স্বার্থসংঘাতের ঝুঁকি’ বাড়ে এবং নেট জিরো লক্ষ্যের বাস্তবায়ন বিলম্বিত হতে পারে।

ফসিল ফুয়েল বিতর্কে আলোচনার গুরুত্ব বেড়েছে

যখন বেশিরভাগ বৈজ্ঞানিক মূল্যায়ন বলছে—১.৫°C লক্ষ্য অর্জনের জন্য দ্রুত ও পূর্ণাঙ্গ ‘ফসিল ফুয়েল ফেজ-আউট’ প্রয়োজন, তখন লবিস্টদের প্রভাব ও দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক স্বার্থ এক বড় বাধা হিসেবে দেখা দিচ্ছে।

কপ৩০-এর আলোচনার শেষ পর্যায়ে এই ইস্যু আরও তীব্র হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে—বিশেষ করে ‘ফসিল ফুয়েল ফেজ-আউট বনাম ফেজ-ডাউন’ শব্দচয়নের লড়াই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে বড় ভূমিকা রাখবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

5 + seventeen =