২০১৯, ডিসেম্বর মাস। চিনের উহান প্রদেশে নতুন ভাইরাস ‘করোনা’ যখন আবিষ্কার হল তখনও বিশ্ববাসী বুঝে উঠতে পারেনি তাদের জন্য কি ভয়ংকর দুর্যোগ অপেক্ষা করছে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর একসাথে এত লোকক্ষয় আর কিছুতেই হয়নি।
চিকিৎসকরা তাদের পাঠ্যবই ইংরেজিতে পড়েন।চিকিৎসকরা নিজেদের মধ্যে যেসব জার্নালে লেখালেখি করেন সেগুলির ভাষাও ইংরেজি। ফলে চিকিৎসকদের বাংলায় লেখালেখির তেমন প্রয়োজন হয় না ।সাধারণ পাঠকদের জন্য করোনা সন্মন্ধে জ্ঞান ও তথ্যসমৃদ্ধ বই বাজারে কমই আছে। লেখক হিসেবে মেজর খোশরোজের বৈশিষ্ট্য হল সাবলীল ভাষায় সর্বসাধারণের জন্য জটিল বিষয়কে উপস্থাপন করা। তিনি যথাসাধ্য ‘টেকনিক্যাল’ ভাষা পরিহার করেছেন।ফলে করোনার মত দুর্বোধ্য বিষয়কে প্রায় ‘জলবৎ তরলং’ করে পরিবেশন করেছেন।বিজ্ঞান বিষয়ের পাঠ ও পঠন সাধারণত ওষুধের মতই তেতো। কিন্তু, ডা. খোশরোজের কলমের শক্তিতে এই বইটি ব্যপক প্রাণরসে জারিত, সুপেয় হয়ে উঠেছে।
লেখক করোনাভাইরাস আবিষ্কার থেকে শুরু করে আজ অবধি ঘটনাক্রম মোটামুটি ধারাবাহিকভাবে উপহার দিয়েছেন। কিন্তু, প্রত্যেকটি প্রবন্ধ স্বয়ংসম্পূর্ণ। তাই বইয়ের যে কোন জায়গা থেকে পড়লে পাঠককে হোঁচট খেতে হবে না।
ভ্যাক্সিন নিয়ে আমাদের ব্যাপক সন্দেহ ছিল।বুস্টার ডোজ হিসেবে চতুর্থ ডোজ দেওয়ার প্রশ্ন আমাদের নতুন করে ভীত করেছে। লেখক খুব সুনির্দিষ্ট করে ভ্যাক্সিনের নানা জানা অজানা কথায় আমাদের আলোকিত করে সন্দেহের দোলাচলে থাকা অনেক অস্বচ্ছ বিষয়কে পরিস্কার করেছেন।
‘করোনা মনে হয় পৃথিবী থেকে চলে গেছে বা তেজ হারিয়ে নিস্ক্রিয় হয়ে গেছে’ এমন ধারণাকে লেখক বিভিন্ন গবেষণালব্ধ ‘ফ্যাক্টস অ্যান্ড ফিগার’ এর প্রিজমে দেখিয়েছেন এটি অতিশয়োক্তি। তবে, ভীতি নয়, সতর্কতার প্রলেপ বুলিয়েছেন পরম মমতায়।
ডা. খোশরোজ করোনাকালীন সময়ে সশস্ত্র বাহিনী পরিচালিত সন্মিলিত সামরিক হাসপাতালে হাতে কলমে কাজ করেন। ফলে, কোভিড চিকিৎসায় নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলি বিশেষভাবে ঋদ্ধ। কিন্তু, সিএমএইচে চিকিৎসাধীন লেখকের মা‘কে মহাকালের কাছে পরাজিত হতে দেখেছেন। তার বাবাও একই সময়ে মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করে কোনক্রমে বেঁচে যান। এই বিষয় লেখকের মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে। তিনি অনেকটা আত্মজীবনীর ভাষায় করোনাজর্জর পরিবারের দাহ ও দহনকে পাঠকদের সাথে অশ্রুমথিত কলম দিয়ে শেয়ার করেছেন।
সামনেই রোজা। রোজার খাদ্যাভ্যাস নিয়ে প্রয়োজনীয় উপদেশ লিপিবদ্ধ করেছেন। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে অধুনা অনেক তথ্য ডা. খোশরোজ তার তুলির জাদুতে বিশাল ক্যানভাস আকারে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন।
বইটির দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদ এঁকেছেন ধ্রুব এষ। এটি প্রকাশ করেছে বিদ্যাপ্রকাশ। বইটির মূল্য ২৪৫ টাকা। স্বাস্থ্য সচেতন পাঠকের জন্য আজ ও আগামীতে সংগ্রহে রাখবার জন্য বইটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।