কলম্বো টেস্ট: শ্রীলংকা ইনিংস এবং ৭৮ রানে জয়ী

ইনিংস পরাজয়ে টেস্ট এবং সিরিজ পরাজয় বাংলাদেশের

বাংলাদেশ ২৪৭ এবং ১৩৩ শ্রীলংকা :৪৫৮

ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়: পিথুন নিশংকা

সিরিজের সেরা খেলোয়াড়: পিথুন নিশংকা ( ৩৬৯ রান)

তিন ফরম্যাটের পূর্ণাঙ্গ ক্রিকেট সফরে বাংলাদেশ এখন শ্রীলংকায়।  তিন ফরম্যাটেই আসিসি রাংকিংয়ে তলানিতে থাকা বাংলাদেশকে নিয়ে অনুরাগীরা আশাবাদী না থাকলেও গলে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টে অপ্রত্যাশিত ভাবে ভালো খেলে অনেককেই বিস্মিত করেছিল। সেই বাংলাদেশ মাত্র কয়েকদিনের ব্যাবধানে কলম্বো এসএসসিতে স্বরূপে আবির্ভূত হয়ে ইনিংস হারের কলঙ্ক তিলক বরণ করে সিরিজ হারলো। টেস্ট ম্যাচটির চতুর্থ দিন সকালে  বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩৩ রানে গুটিয়ে ইনিংস এবং ৭৮ রানে টেস্ট হেরে গেলো।

বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসের ২৪৭ রানের জবাবে ৪৫৮ রান করেছিল শ্রীলংকা।  যে উইকেটে অনায়েসে ব্যাটিং করেছে শ্রীলংকা সেই একই উইকেটে উভয় ইনিংসে বাংলাদেশ ব্যাটিং তাসের ঘরের মত ঝুর ঝুড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশকে নিয়ে যে কথাটি প্রযোজ্য সেটির সঠিক বাংলা আমার জানা নেই. ” প্রেডিক্টিবিলি আন প্রেডিক্যাবলে’ . নাহলে যেই দল একই বোলিং আক্রমণের মোকাবিলায় কয়েকদিন আগে গলে দুই ইনিংসে ভালো ব্যাটিং করে জয়ের সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছিল সেই একই দল কিভাবে মেরুদন্ডহীন ব্যাটিং করতে পারে।  তাহলে কি বলা ভুল হবে বাংলাদেশ ২৫ বছর টেস্ট ক্রিকেট খেলে এই ফরম্যাটের ব্যাকরণ শিখতে পারে নি.

আজ চতুর্থ দিনে ইনিংস পরাজয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ৯৭ রান। হাতে ৪ টি উইকেট। স্বাগতিক দলের সময় লাগে নি বাংলাদেশের লেজ মুড়িয়ে দিতে।  কলম্বোর এই উইকেটে শেষ দিকে বল হাতে দুধর্ষ হয়ে উঠে প্রভাত জয়াসুরিয়া।  ৫৬ রানে ৫ উইকেট নিয়ে আবারো সেটি প্রমান হলো. গল টেস্ট অমিমাংশীভাবে শেষ হবার পর শ্রীলংকা ইনিংস এবং ৭৮ রানে টেস্ট জিতে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৫-২৭ পর্বে দাপুটে সূচনা  করলো.

ফিরে তাকালে বাংলাদেশের অধারাবাহিক ক্রিকেট নিয়ে নতুন করে বলার কিছুই নেই।  গল টেস্টে বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত , নির্ভরযোগ্য মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রাহিম এবং লিটন দাস ব্যাটিং দৃঢ়তায় প্রথম ইনিংসে প্রায় ৫০০ রান করেছিল। দ্বিতীয় ইনিংসেও শান্ত টেস্টে যুগল সেঞ্চুরি করে , সাদমান সহ লেজের দিকের ব্যাটিং দৃঢ়তায় বাংলাদেশ শক্ত অবস্থানে ছিল. শেষ দিনে বৃস্টি বিঘ্ন না ঘটালে জয়ের সম্ভাবনাও সৃষ্টি হয়েছিল।

সেই বাংলাদেশ মাত্র সপ্তাহ খানিক সময়ের ব্যাবধানে কিভাবে আমূল পাল্টে গেলো? কলম্বো টেস্টে উইকেটের কথা বিবেচনা করে তিন স্পিনার আর দুই পেসার নিয়ে একাদশ সাজিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু একাদশে ছিল ওপেনার সংকট। ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো খেলা আনামুল হক যে আদৌ টেস্ট মেজাজের না সেটি কেন আঁচ করতে পারছে না বাংলাদেশ।  আনামুলকে দলে রেখে লেট অর্ডারে জাকের আলীকে বাদ দেয়া সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল না. কেন স্কোয়াডে বিকল্প ওপেনার রাখা হয় নি? এর পরেও টস জিতেছিল বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ৭ জন ব্যাটসম্যান ২১-৪৬ রান করেছে। কিন্তু কেউ ইনিংস বড় করতে পারে নি. অন্তত ৫ জন ব্যাটসম্যান উইকেটে স্থিতু হয়ে উইকেট বিলিয়ে দিয়েছে।

প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের স্কোর ২৪৭ না হয়ে ৩৫০-৪০০ হলে অবাক হতাম না. এখানেই হেরে গাছে বাংলাদেশ। শ্রীলংকান ইনিংসে প্রথম দিকে বাংলাদেশের পেস বোলাররা অযথা ক্রমাগত খাটো লেংথের বল করেছে। এই সিরিজের সেরা খেলোয়াড় পিথুন নিশংকা প্রথম টেস্টের মত এই টেস্টেও ১৫৮ রানের কার্যকরী ইনিংস খেলে শ্রীলংকান ব্যাটিং নেতৃত্ব দিয়েছে। পাশাপাশি চান্দিমালের ৯৩ আর কুশল মেন্ডিজের ৮৪ শ্রীলংকাকে ৪৫৮ রানের বিশাল স্কোর গড়ায় পথ দেখিয়েছে।

কলম্বোতে তৃতীয় এবং চতুর্থ দিন থেকে স্পিন সহায়ক হবে সবার জানা।  টস জিতে প্রথম ব্যাটিং করেও বাংলাদেশ সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারে নি প্রথম ইনিংসে মেরুদন্ড বিহীন দায়িত্বহীন বাটিংয়ের কারণে। সিরিজ থেকে বাংলাদেশের অর্জন অধিনায়ক নাজমুল শান্তর নিজের ব্যাটিং খুঁজে পাওয়া , টেস্ট জীবনের গোধূলি বেলায় মুশফিকের নিজেকে ফিরে পাওয়া।  তাইজুল এবং নাঈমের বোলিং সাফল্য। বাংলাদেশের পেস বোলিং বার্থ হয়েছে. নাহিদ বুঝতে পেরেছে টেস্ট ক্রিকেটে সাফল্য পেতে শুধু গতি যথেষ্ট নয়. এবাদতের প্রত্যাবর্তন শুভ হয় নি.

টেস্ট ম্যাচ শেষে নাজমুল শান্তর অধিনায়ক না থাকার ঘোষণা দলের রসায়ন বিষয়ে ভালো ইঙ্গিত দেয় না. কষ্ট লাগছে ২৫ বছর টেস্ট ক্রিকেট খেলেও বাংলাদেশ ক্রিকেটে ধারাবাহিকতা এলো না. অনেকেই বলবেন বাংলাদেশের চেয়ে আফগানিস্তান হয়তো টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ খেলার জন্য এখন অধিক যোগ্য।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

5 × three =