কাজল-রানীকে নিয়ে হঠাৎ হইচই

রোজ অ্যাডেনিয়াম

পূজার দিনে সকল বিভেদ ভুলে এক হয়ে গেছেন বলিউডের সবচেয়ে জনপ্রিয় দুই বাঙালি তারকা কাজল ও রানী মুখার্জি। গত ২৪ অক্টোবর ছিল শারদীয় দুর্গোৎসবের শেষ দিন। দশমির এই দিনে বলিউডের বাঙালি তারকাদের বউয়ের সাজে দেখা মেলে উত্তর মুম্বাইয়ের নামকরা পূজা মণ্ডপে। উৎসবের সাজে মেতে ওঠা বলিউডের তারকাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় চলে আসেন কাজল ও রানী মুখার্জি। প্রকাশ করার পর অল্প সময়ের মধ্যেই ইনস্টাগ্রাম থেকে ছড়িয়ে পড়ে তাদের ছবি।

শাড়ির সাজে কাজল-রানী

শারদীয় দুর্গোৎসবের সপ্তমিতে কাজল পরেছিলেন গোলাপিরঙা ও চুমকির কাজ করা শিফন শাড়ি। অষ্টমির দিন তাকে দেখা যায় কলাপাতা রঙের শাড়িতে। সঙ্গে ছিলো সিলভাররঙা সিøভলেস ব্লাউজ। এই সাজেই প্রশংসার বন্যায় ভেসেছেন তিনি। অন্যদিকে নবমির দিন কাজল হাজির হন জরির নকশা করা লাল পাড়ের ঐতিহ্যবাহী সেমি মসলিন শাড়িতে। হাতে পরেছিলেন মেরুন রঙের রেশমি চুড়ি। রানীও সেজেছিলেন জমকালো সাজে। শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে ডান হাত ভর্তি করে পরেছেন চুড়ি, বালা, কঙ্কণ, কানে পাথরের দুল। ঠোঁটে ম্যাট লিপস্টিক, কপালে সবুজ টিপ ও সিঁথিতে সিঁদুর পরেছিলেন তিনি। অষ্টমিতে রানী পরেছিলেন সেমি সিল্কের জরির পাড়ের মেটালিক শাড়ি ও সিøভলেস ব্লাউজ। নবমির দিন রানী পরেন সোনালি চকচকে হাফ সিল্কের শাড়ি। গলায় ছিল পাথরের চোকার ও হীরার মঙ্গলসূত্র। পাপারাজ্জিরাই ছড়িয়ে দিয়েছে এই ছবিগুলো।

কেন অবাক কাজল-রানীর ভক্তরা?

কাজল ও রানীকে একসঙ্গে দেখে অবাক হয়েছেন তাদের ভক্তরা। দুই বোন হলেও তাদের চিরকাল একে অপরের শত্রু হিসেবেই জেনে এসেছে সবাই। তারা দুইজন চাচাতো বোন। একই সিনেমায় দুই বোন অভিনয়ও করেছেন কিন্তু মিল হয়নি তাদের। ভারতীয় কয়েকটি গণমাধ্যম সূত্রেই জানা গেছে এই দুই বোন নাকি একে অপরকে দেখলেই রেগে যেতেন। তাদের ঝগড়ার কারণটাও অনেক আগের। ছোটবেলা থেকেই একে অপরকে এড়িয়ে চলতেন। জানা যায়, কাজল এবং রানীর পিতা রাম ও সোমু মুখার্জি দুই ভাই। বিবাদের শুরু সম্পত্তি ভাগাভাগি নিয়ে। সেই ঝগড়ার প্রভাব পড়ে দুই বোনের সম্পর্কে।

বলিউডে রানী মুখার্জির আবির্ভাব হয় ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ সিনেমার মাধ্যমে। সেখানে শাহরুখের নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেন রানী মুখার্জি। আর এই বিষয়টাই নাকি মেনে নিতে পারেননি কাজল। ওই সিনেমায় তিনিও অভিনয় করেন। তারপর থেকেই বলিপাড়ায় গুঞ্জন যে, রানী বলিউডে ক্যারিয়ার গড়ার চেষ্টা করলে কাজল সেখানে বাগড়া দেওয়ার ব্যাপক চেষ্টা করেন। জানা যায় যে কাজল নাকি যশরাজ ফিল্মসের কর্ণধার, আদিত্য চোপড়ার ওপরও চাপ সৃষ্টি করেছিলেন। কিন্তু সমস্ত চেষ্টা বিফল করে রানী মুখার্জি অভিনয় করেছিলেন সেই সিনেমায়। সিনেমাটি বক্স অফিস হিট হয়। সুপারহিট এই সিনেমায় কাজল মূল নায়িকা হলেও রানীর অভিনয়ও দর্শকদের মন জয় করে নেয়। ইন্ডাস্ট্রিতে নায়িকা হিসেবে পরিচিতি পান তিনি। এই সিনেমার সুবাদে ধীরে ধীরে রানী জায়গা করে নেন বলিউডে।

রানীর প্রভাবে কাজলই আউট

এক সময় রানী হয়ে ওঠেন বেশ প্রভাবশালী। যশরাজ ফিল্মসে আদিত্যর প্রভাব বাড়ে। রানী তাদের সিনেমার একের পর এক নায়িকা হন। চোপড়া পরিবার বিবাহিত আদিত্যর সঙ্গে রানীর সম্পর্ক মেনে নিতে চায় না। নায়িকা হিসেবে যশ চোপড়া পছন্দ করতেন কাজলকে। ফলে বাবা-ছেলের সম্পর্ক নিয়ে টানা পোড়েন চলতে থাকে। কিন্তু অবশেষে আদিত্য চোপড়া পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে ২০১৪ সালে বিয়ে করেন রানীকে। আদিত্য-রানীর বিয়ের পরে যশরাজ ফিল্মসের দরজা বন্ধ হয়ে যায় কাজলের জন্য। এমনকি ‘যাব তাক হ্যায় জান’ সিনেমার পর প্রিমিয়ার শো’তেও ডাক পাননি কাজল। রানীর বিয়েতেও দেখা যায়নি কাজলকে। প্রকাশ্যে দুই বোন একে অন্যের প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতেন।

সম্পর্ক জোড়া লাগে

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিক্ততা কমে তাদের সম্পর্কের। ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’-এর ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে একবার একটি টেলিভিশন শো-এ হাজির ছিলেন কাজল-শাহরুখ-রানী। সেখানে কাজলকে ধন্যবাদ জানান রানী। বলেন, ক্যারিয়ারের শুরুতে কঠিন সময়ে তার পাশে ছিলেন দিদি কাজল। তবে কাজল নিজস্ব ভঙ্গিতেই হাসতে হাসতে বলেন, তার মনেই পড়ছে না রানীকে কবে তিনি সাহায্য করেছেন! কারণ, তার কথায়, রানীর কোনোদিন সাহায্য প্রয়োজনই হয়নি। ক্যারিয়ারের প্রথম দিকের সিনেমা ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’-এর প্রথম শটেই নাকি তারকাসুলভ শট দিয়ে বাজিমাত করেছিলেন ১৭ বছরের রানী।

১৪ বছর পর ‘কফি উইথ করণ’-এ কাজল-রানী

জনপ্রিয় চ্যাট শো ‘কফি উইথ করণ’-এর সিজন ৮ নিয়ে হাজির হন করণ জোহর। সকলেই জানেন যে, এখানে উপস্থাপকের ভূমিকায় দেখা যায় এই তারকা পরিচালককে। আর তারকা অতিথিরা এসে নিজেদের জীবনের গোপন কথা ফাঁস করে দেন। এবার ১৪ বছর পর ‘কফি উইথ করণ’-এ হাজির হচ্ছেন দুই বোন কাজল ও রানি মুখার্জি। বিতর্ক থাকার পরেও গত ২৬ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে ‘কফি উইথ করণ’-এর অষ্টম সিজন। এবার কে কে আসছেন অতিথি হিসেবে, তা নিয়ে দর্শকদের মধ্যে দারুণ উন্মাদনা। দর্শকদের চাহিদা অনুযায়ী একাধিক বলিউড সুপারস্টাররা থাকছেন শো’তে। যাদের আগে কখনই এই শো’য়ে দেখা যায়নি তারাও এবার দর্শকদের সামনে হাজির হতে যাচ্ছেন। আর তারকাদের পেটের ভেতর থেকে করণ বের করছেন একাধিক গোপন কথা, তাই দেখার জন্যে অপেক্ষায় দর্শকরা। শো’য়ের প্রথম অতিথি হন, রণবীর সিং এবং দীপিকা পাড়ুকোন। এছাড়া ২০০৭ সালে ‘কফি উইথ করণ’ শোতে এসেছিলেন কাজল এবং রানী মুখোপাধ্যায় একসঙ্গে। এবারও তারা ১৪ বছর পর শো’তে পুনরায় একত্রিত হচ্ছেন। এছাড়াও এই মৌসুমে অনেক নতুন জুটিকে অভিষেক হতে দেখা যাবে। ইন্ডিয়া টুডের সূত্র অনুসারে, এবার বোন জুটি কাজল এবং রানি মুখার্জি ‘কফি উইথ করণ’ আবার একত্রিত হবেন। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, কাজল এবং রানি মুখার্জি একসঙ্গে একটি পর্বের শুটিং করার জন্য সম্মতি দিয়েছেন। ইন্ডাস্ট্রির দুই দূরবর্তী কাজিন শেষবার ২০০৭ সালে শাহরুখ খানের সঙ্গে একসঙ্গে দেখা দিয়েছিলেন। সিজন ২ এরপর এই প্রথম তারা কফি উইথ করণ শো’তে একসঙ্গে উপস্থিত হচ্ছেন। করণের নাকি এই জুটিকে নিয়ে অনেক মজার পরিকল্পনা রয়েছে।

এক নজরে কাজল

কাজল ১৯৭৪ সালের ৫ আগস্ট ভারতের বম্বের (বর্তমানে মুম্বই) বাঙালি-মারাঠি মুখার্জী-সমর্থ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার মা তনুজা সমর্থ অভিনেত্রী এবং বাবা শমু মুখার্জী ছিলেন পরিচালক ও প্রযোজক। ১৯৯২ সালে বেখুদি দিয়ে অভিনয়ের জগতে পা রাখেন কাজল। তরপরের বছরই কাজ শাহরুখ খানের সঙ্গে বাজিগর ছবিতে। ১৯৯৫ সালে করণ অর্জুন ছবি হিট করলে কাজলের গায়ে সেঁটে যায় এ লিস্টার হিরোইনের তকমা। তারপর তো গুপ্ত, ইশক, কুছ কুছ হোতা হ্যায়, রাজু চাচা, কাল হো না হো-র মতো একাধিক হিট দিতে থাকেন একের পর এক। মাত্র ১৬ বছর বয়সে অভিনয় শুরু করেন কাজল। ফলে লেখাপড়া শেষ করার সুযোগ মেলেনি। পড়াশোনাতে মোটেই খারাপ ছিলেন না এই নায়িকা। কপিল শর্মা শো-র একটি এপিসোডে কাজল জানিয়েছিলেন ক্লাস টেনের বোর্ড পরীক্ষায় তার নম্বর এসেছিল ৬০ শতাংশ। পঞ্চগনির সেন্ট জোসেপ কনভেন্ট স্কুলের ছাত্রী ছিলেন তিনি। স্কুলে থাকতেই, লেখাপড়ার পাশাপাশি ভালোবাসতেন নাচ করতে। অভিনয়ের পাশাপাশি একাধিক এনজিওর সঙ্গে কাজ করেন অজয় দেবগন-পত্নী, যারা দুঃস্থ বাচ্চাদের শিক্ষা নিয়ে কাজ করে। বহুদিন ধরে যুক্ত আছেন শিক্ষা সংক্রান্ত এনজিওর সঙ্গে। একই সঙ্গে প্রথম ও লুম্বা ট্রাস্টেরও ব্র্যান্ড অ্যাম্বেসেডর তিনি। এই দুটি সংস্থাও মেধাবী বাচ্চাদের লেখাপড়া নিয়ে কাজ করছে বহুদিন ধরে। কাজল ২০০৮ সালে সমাজসেবায় অবদানের জন্য কর্মবীর পুরস্কার লাভ করেন।

এক নজরে রানী

বড় হয়ে আইনজীবী বা অন্দরসজ্জা শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন রানী। কিন্তু হয়েছেন নায়িকা। রানীর বাবা রাম মুখোপাধ্যায় বেশ কিছু হিন্দি ও বাংলা ছবি পরিচালনা করেছেন। ‘হাম হিন্দুস্তানি’, ‘লিডার’-এর মতো বলিউড সিনেমার পরিচালক তিনি। অন্যদিকে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে দুই যুগেরও বেশি সময় কাটিয়ে ফেলেছেন রানী মুখার্জি। তার পরিচিতি গড়ে ওঠে ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’-এর সুবাদে। টিনার চরিত্রে অভিনয় করে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন এই বঙ্গ তনয়া। ১৯৯৬ সালে ‘বিয়ের ফুল’ সিনেমার মাধ্যমে রুপালি জগতে যাত্রা শুরু রানীর। তার প্রথম হিন্দি সিনেমা ছিল ‘রাজা কি আয়েগি বারাত’। রানীর জন্ম মার্চ ২১, ১৯৭৮ সালে। তিনি ২০০০-এর দশকের বলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় ও সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক প্রাপ্ত অভিনেত্রী ছিলেন। কর্মজীবনে পেয়েছেন সাতটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কারসহ একাধিক পুরস্কার।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: হলি বলি টলি

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

19 − eight =