কিংবদন্তি শিল্পী কবীর সুমনের জন্মদিন আজ

তার অনেক পরিচয়। একজন বাঙালি গায়ক, গীতিকার, অভিনেতা, বেতার সাংবাদিক, গদ্যকার এবং সংসদ সদস্য। আরও একটি পরিচয় হলো তিনি যোদ্ধা। তিনি যুদ্ধ করছেন শ্রেণিবৈষম্য, অপসংস্কৃতি, শুদ্ধ গানের চর্চা আর মনুষ্যত্ব টিকিয়ে রাখার আহ্বান নিয়ে।

বলছি কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী কবীর সুমনের কথা। এই মহান শিল্পীর জন্মদিন আজ। সময়ের স্রোতে গা ভাসিয়ে ৭৫ বছরে পা দিয়েছেন তিনি।

ভক্তদের ভালোবাসা আর শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যমে দিনটি পার করছেন কবির সুমন। ১৯৪৬ সালের ১৬ মার্চ ভারতের ওড়িশায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পূর্ব নাম সুমন চট্টোপাধ্যায়। পিতা সুধীন্দ্রনাথ এবং মাতা উমা চট্টোপাধ্যায়। ২০০০ সালে বাংলাদেশের আরেক কিংবদন্তি গায়িকা সাবিনা ইয়াসমিনকে বিয়ে করেন কবীর সুমন। সে সময় ধর্মান্তরিত হয়ে নিজের নাম রাখেন কবীর সুমন।

মূলত আধুনিক ও রবীন্দ্রসংগীতই বেশি গেয়েছেন এই গুণী শিল্পী। সুমন যে সবার থেকে আলাদা, তা বুঝতে হলে শ্রোতাদের সংগীত-বোদ্ধা হতে হয় না। সাধারণত নিজের গান নিজেই লেখেন, নিজেই সুর করেন।

শিল্পীজীবনের প্রথম পর্যায়ে সুমন ‘নাগরিক’ নামের কলকাতার একটি ব্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরবর্তী সময়ে সুমন নিজেই একটা ব্যান্ড খোলেন, নাম দিলেন ‘সুমন দ্য ওয়ান ম্যান ব্যান্ড’। সুমনই সুমনের ব্যান্ডের একজন এবং একমাত্র সদস্য। তার কনসার্টে অন্য কোনো যন্ত্রশিল্পীর প্রয়োজন পড়ে না। একই সঙ্গে গিটার, হারমোনিকা, কিবোর্ড বাজিয়ে নিজেই নিজের গান করেন।

১৯৯২ সালে ‘তোমাকে চাই’ অ্যালবামের মাধ্যমে তিনি বাংলা গানে এক নতুন ধারার প্রবর্তন করেন। তার স্বরচিত গানের অ্যালবামের সংখ্যা পনেরো। সংগীত রচনা, সুরারোপ, সংগীতায়োজন ও কণ্ঠদানের পাশাপাশি গদ্যরচনা ও অভিনয় ক্ষেত্রেও তিনি স্বকীয় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি একাধিক প্রবন্ধ, উপন্যাস ও ছোটগল্পের রচয়িতা এবং হারবার্ট ও চতুরঙ্গ প্রভৃতি মননশীল ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের রূপদানকারী।

প্রথম জীবনে রেডিও জার্নালিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন ডয়েচে ভেলে-তে, কাজ করেছেন অল ইন্ডিয়া রেডিওতে। কেরানি ছিলেন ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ায়। বন্ধু অঞ্জন দত্তের অনুরোধে অভিনয় করেছেন ‘রঞ্জনা আমি আর আসবো না’সহ কিছু ভারতীয় বাংলা সিনেমায়। সৃজিতের ‘জাতিস্মর’ সিনেমায়ও মিলেছে সুমনের উপস্থিতি।

কবীর সুমনের সৃষ্ট গানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে দুনিয়াটা, গানওয়ালা, তোমাকে চাই, তুমি ছিলে, হাল ছেড়ো না বন্ধু, অভিবাদন, খোদার কসম জান, জাতিস্মর ইত্যাদি।

যেখানে অন্যায়, সেখানেই সুমনের প্রতিবাদ। রাজনীতিতে নাকি দলই সবার ওপরে। কিন্তু নিজের দলকেও সুমন রেহাই দেননি। মানুষ হিসেবে তিনি আগাগোড়া অসাম্প্রদায়িক। লালন সাঁই তার আত্মার মন্দিরে থাকেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

three × two =