সালেক সুফী: বাংলাদেশ ক্রিকেটের সোনালী প্রজন্মের পঞ্চপান্ডব খাত মহিরূহদের এখন গোধূলি লগ্ন। পুরোপুরি রাজনীতিক মাশরাফি ক্রিকেটে থেকেও নেই। খেলোয়াড় ব্যাবস্থাপনায় বিসিবির আনাড়িপনার কারণে মুশফিক, তামিম টি ২০ ফরমেট থেকে অবসরে, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ টেস্ট থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেয়ার পর প্রথমে টি ২০ এখন ওডিআই থেকে বাদ দেয়া হলো। ম্যাচ ফিট না থাকায় এশিয়া কাপ খেলবে না তামিম। বিশ্বকাপের আগেও ফিটনেস ফিরে নাও পেতে পারে। সাকিবকে করা হয়েছে অধিনায়ক। ধারণা করা হয়েছিল পঞ্চ পাণ্ডবের সক্রিয় চার জনের সঙ্গে লিটন, শান্ত, হৃদয়, মেহেদী মিরাজ, তাসকিন, হাসান মাহমুদ, মুস্তাফিজ, শরিফুলরা যুক্ত হয়ে এশিয়া কাপ এবং বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে অধরা সাফল্য এনে দেবে। কিন্তু খেলোয়াড় -বিসিবি শীতল সম্পর্ক এবং বিসিবির অপেশাদার মনোভাব থেকে সৃষ্ট কিছু বিতর্কিত ঘটনার কারণে এশিয়া কাপ বা বিশ্বকাপে ভালো কিছু অর্জন এখন বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
এশিয়া কাপ শুরু হতে বাকি আছে মাত্র সপ্তাহ দুয়েক। সাকিব নেতৃত্বের দলে ওপেনার তামিম নেই, অদূরদর্শীর মতো স্কোয়াড থেকে বাদ দেয়া হয়েছে সাইলেন্ট কিলার খাত মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে। দেশ জুড়ে ক্রিকেট অনুরাগীরা মাহমুদুল্লাহকে দলে নেয়ার বিষয়ে সোচ্চার। দক্ষতা, অভিজ্ঞতা বিষয়ে মাহমুদুল্লার কমতি নেই। ফিটনেস নিয়েও প্রশ্ন তোলা যাবে না। বিশ্রামে রাখাসহ নানা ছল চাতুরী করে যেভাবে ওর মত বিশাল অবদান রাখা সিনিয়র ক্রিকেটারকে ছুড়ে ফেলা হলো না নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। তরুণদের সুযোগ দেয়াতে আপত্তি নেই। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে মাহমুদউল্লাহর বিকল্প হিসাবে আফিফ, শামীম পাটোয়ারী বা শেখ মেহেদী যাদের সুযোগ দেয়া হয়েছে তারা কেউ আহামরি কিছু করতে পারেনি। তাহলে কেন এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত ?
স্কোয়াড নির্বাচনের মূল দায়িত্ব অবশ্যই নির্বাচক ত্রয়ীর। মিনহাজুল আবেদীন নান্নু , হাবিবুল বাসার সুমন এবং আব্দুর রাজ্জাক দেশের খেলোয়াড়দের সবার দক্ষতা, সামর্থ এবং সক্ষমতা বিষয়ে সম্যকভাবে অবহিত। ব্যাক্তিগত পছন্দ, অপছন্দকে প্রাধান্য না দিয়ে কেবল মাত্র মেধার ভিত্তিতে স্কোয়াড নির্বাচিত হবে সেটি কাঙ্খিত ছিল. নির্বাচকরাও বরাবর বলে আসছে মাহমুদুল্লাহ সাময়িক ভাবে বিশ্রামে আছে, তাকে এশিয়া কাপ, বিশ্ব কাপের বিবেচনায় রাখা হয়েছে। তাকে প্রাক নির্বাচনী অনুশীলনে রাখা হলো. কিন্তু কার ইঙ্গিতে, কাদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য তার মত একজন অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ক্রিকেটারকে বাদ দিয়ে আনকোরা নবীনদের গুরুত্বপূর্ণ বৈষয়িক টুর্নামেন্টে সুযোগ দেয়া হয়েছে? স্কোয়াড নির্বাচনে কোনো ভাবে বেতনভুক বিদেশী হেড কোচ বা অধিনায়কের দোহাই দিয়ে পার পাওয়া যাবে না। নির্বাচক মন্ডলী এবং মুখরা বিসিবি সভাপতি কোনো ভাবেই দায় এড়াতে পারবে না।
এখন আসি স্কোয়াড নিয়ে। তামিম না থাকায় দুইজন ওপেনার বেছে নিতে হয়েছে। মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের টপ অর্ডার কিন্তু নড়বড়ে। লিটন, শান্ত কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সেরা ফর্মে নেই। এশিয়া কাপে শ্রীলংকা এবং আফগানিস্তানের সঙ্গে প্রাথমিক পর্বে ভালো মানের আক্রমণের বিরুদ্ধে সূচনা ভালো না হলে কিন্তু তৌহিদ হৃদয়, মুশফিক, সাকিবের উপর বিশাল চাপ পড়বে। এমন পরিস্থিতিতে কিন্তু লেট্ মিডল অর্ডারে মাহমুদুল্লার উপস্থিতি অপরিহার্য ছিল. এমারজিং এশিয়া কাপে ভালো খেলা তানজিদ হাসান তামিমকে নেয়া ঠিক আছে। বরং এই খেলোয়াড়টিকে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে সুযোগ দেয়া উচিত ছিল। তবে বার বার সুযোগ দিয়েও নিজেকে মেলে ধরতে না পারা মোহাম্মদ নাঈমকে সুযোগ দেয়া নিয়ে ভিন্ন মত থাকতেই পারে। মাহমুদুল্লাহর বিকল্প হিসাবে আফিফ, শেখ মেহেদী এবং শামীম পাটোয়ারী তিন জনকে বিবেচনা করে ১৭ জনের স্কোয়াড নির্বাচন করা হয়েছে। অথচ তিন জনের কেউ দক্ষতা, অভিজ্ঞতা বা রেকর্ডস দিয়ে মাহমুদুল্লাহ্রর ধারে কাছে নিয়ে। চাপের মুখে ওরা এমন কেন ভালো ইনিংস খেলে নি যা নিয়মিত খেলে অনেক ম্যাচে একক ভাবে জয় ছিনিয়ে এনেছে মাহমুদুল্লাহ। তাসকিন ,মুস্তাফিজ, শরিফুল, এবাদত, হাসান মাহমুদকে নির্বাচন সঠিক। তবে ওডিআই ক্রিকেটে ব্যাক আপ স্পিনার হিসাবে তাইজুলকে উপেক্ষা করে নাসুম আহমেদকে দলে নেয়া বিতর্কিত সিদ্ধান্ত। যদি এগুলো হেড কোচ এবং সাকিবের অনুরোধে করা হয়ে থাকে ব্যার্থতার দায় দায়িত্ত্ব সেই ক্ষেত্রেও নির্বাচক মন্ডলী এবং মুখরা বিসিবি সভাপতির উপর বর্তাবে।
অনেক সম্ভাবনা ছিল বাংলাদেশ দলের এশিয়া কাপ এবং বিশ্ব কাপে ভালো করার। সাম্প্রতিক কিছু অনাকাঙ্খিত ঘটনায় সেই সম্ভাবনায় জল ঢেলে দিয়েছে বিসিবি। তবুও চাইবো জ্বলে উঠুক বাংলাদেশ। অন্নান্য দেশ যেভাবে প্রস্তুত এবং এগিয়ে যাচ্ছে আগামীতে এই ধরণের সুযোগ কিন্তু সহসা আসবে না। পরবর্তী বিশ্ব কাপে হয়তো সাকিব ছাড়া পঞ্চ পাণ্ডবের কেউ থাকবে না।