রিয়াজ উদ্দীন
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ঈদুল আজহা পালিত হবে আগামী ১৭ জুন। ইতিমধ্যে কোরবানির পশু বিক্রি শুরু হয়ে গেছে। এবার সারাদেশে ১১ হাজারের মতো হাট বসছে। সঙ্গে থাকছে সরকারের ডিজিটাল হাটও। খামারগুলোতে বেড়েছে ক্রেতাদের আনাগোনা। এবার প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় ২৩ লাখ কোরবানির পশু বেশি হলেও আতঙ্কে আছেন খামারিরা। যদিও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আব্দুর রহমান বলেছেন, পশু আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে না। কিন্তু খামারিরা বলছেন, তারপরও প্রতিদিনই চোরাইপথে গরু ঢুকছে বাংলাদেশে। খামারিদের এই আতঙ্কের কারণ প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ও বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুর পরস্পরবিরোধী অবস্থান। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে ব্রাজিল থেকে গরু আনতে চান।
চাহিদার চেয়ে প্রায় ২৩ লাখ পশু বেশি
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান বলছেন, কোরবানিতে চাহিদা থাকে ১ কোটি ৭ লাখ ২ হাজার ৩৯৪টি পশুর। কিন্তু প্রস্তুত আছে এ বছর ১ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭টি পশু। চাহিদার চেয়ে প্রায় ২৩ লাখ পশু বেশি প্রস্তুত আছে। মোট পশুর মধ্যে ৫৩ লাখ ৬০ হাজার ৭১৬টি গরু ও মহিষ, ৭৬ লাখ ১৭ হাজার ৮০১টি ছাগল-ভেড়া, অন্যান্য প্রজাতির এক হাজার ৮৫০টি। পশুর সংখ্যা কীভাবে নিরুপণ করা হয়েছে জানতে চাইলে আব্দুর রহমান বলেন, আমাদের অধিদপ্তরের লোকজন ঘরে ঘরে গিয়ে জরিপ ও তথ্য সংগ্রহ করেছে। সে আলোকেই আমরা এ সংখ্যা নির্ধারণ করেছি।
অবৈধপথে গরু আসা বন্ধে কঠোর সরকার
যেহেতু চাহিদার তুলনায় পশু বেশি আছে তাই সরকার গরু আমদানির অনুমোদন দেয়নি। এছাড়া অবৈধভাবেও যাতে গরু না ঢোকে সে ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারপরও ফাঁকফোকর দিয়ে গরু ঢুকছে। ফলে উদ্বেগে আছেন খামারিরা।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইমরান হোসেন রঙবেরঙকে বলেন, ‘প্রতি ঈদে দেশের বাইরে থেকে অবৈধ পথে গরু আসে। এবারও মিয়ানমার এবং ভারত থেকে অবৈধভাবে সীমান্ত দিয়ে গরু আসছে বলে বিভিন্ন জায়গা থেকে খবর আসছে। অবৈধ পথে গরু আসা বন্ধ করতে হবে। হাত বদলের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি হাটে খাজনা দিতে হয়। যেকোনো একটি হাটে খাজনা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। পথে পথে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। হাটে পশুর চিকিৎসা ব্যবস্থা আরো উন্নত করতে হবে।’
প্রাণিসম্পদমন্ত্রী বলেন, চাহিদা ও সরবরাহে পার্থক্য থাকলে দামটা সামনে আসে। এবার যেহেতু যাচাই-বাছাই করে সংগ্রহের যে পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়েছে তাতে চাহিদা ও যোগানে বেশি পার্থক্য থাকবে না। সেজন্য মনে হয় দাম ঠিকই থাকবে।
দুই মন্ত্রীর পরস্পরবিরোধী অবস্থান
প্রাণিসম্পদমন্ত্রী বলছেন, চাহিদার তুলনায় পশু বেশি আছে। তাই গরু আমদানি করতে হবে না। কিন্তু বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলছেন সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা।
সম্প্রতি ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরা বাংলাদেশ সফর করেন। সফরকালে তিনি বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, আগামী ঈদুল আজহা সামনে রেখে ব্রাজিল থেকে গরু আনতে চায় বাংলাদেশ।
এ প্রসঙ্গে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক বলেন, ‘মাংস উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। গত কোরবানির ঈদেই ২৪ লাখ ৯৪ হাজার ৫২১টি পশু অবিক্রীত রয়েছে। এতে এখনও লোকসানের বোঝা টানছেন খামারিরা। এ অবস্থায় গরু কিংবা মাংস আমদানির প্রয়োজন নেই।’
গরু মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত খামারিরা
ঈদের আর বেশিদিন নেই। খামারিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন গরু মোটাতাজাকরণে। খামারিদের দাবি, কোরবানি উপলক্ষ্যে সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করছেন তারা।
ঢাকার নবাবগঞ্জের চুড়াইন ইউনিয়নের মোসলেম হাঁটি গ্রামের সাব্বির অ্যাগ্রো ফার্মের মালিক মো. রনি রঙবেরঙকে বলেন, কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে এই অঞ্চলের খামারিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। খামারের এসব গরু এক বছর আগে দেশের বিভিন্ন হাট থেকে কিনে লালনপালন করা হয়। সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে খামারিরা মোটাতাজা করছেন নিজ খামারে।
কেউ যাতে ওষুধ বা ক্ষতিকারক কিছু খাইয়ে গরু মোটাতাজা করতে না পারে সেজন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর তদারকি করছে। নবাবগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ফারহানা জাহান বলেন, ‘আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এসব গরু মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আমাদের উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে খামারিদের বিভিন্ন সময় পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।’
দেশে ১০ হাজার হাট, ঢাকায় ২০টি
২০২২-২৩ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী সারাদেশে মোট হাট-বাজারের সংখ্যা ১০ হাজার ২৬৫টি। এর মধ্যে কোরবানি ঈদ উপলক্ষ্যে বিপুল সংখ্যক অস্থায়ী হাট বসে। তাই সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার ১১ হাজারের মতো হাটে কোরবানির পশু বেচাকেনা হবে। অন্যদিকে, ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে ঢাকায় মোট ২০টি হাট বসবে। এর মধ্যে দুটি স্থায়ী ও বাকিগুলো অস্থায়ী হাট।
থাকছে পশুর ডিজিটাল হাট
এবারের কোরবানি ঈদ উপলক্ষ্যে বসছে সরকরের গরুর হাট ডিজিটাল। সরকারের একশপ প্রকল্প, এটুআই, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, আইসিটি বিভাগ ও ইউএনডিপি’র সহযোগিতায় এই হাট বসছে। এছাড়া আয়োজনে থাকছে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ)। ৬৪ জেলায় একযোগে চালু হবে এই কোরবানির ডিজিটাল হাট। কোরবানির পশু কেনাবেচায় জনসমাগম ও ভোগান্তি কমাতে বিগত কয়েক বছরের মতো এবারও অনলাইনে চালু হচ্ছে এই হাট। সকল জেলা ও উপজেলার হাটগুলো এই প্লাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত থাকবে।
ই-ক্যাব সংশ্লিষ্টরা জানান, ডিজিটাল হাটে পশু বেচাকেনা প্রতিবছরই বাড়ছে। ২০২০ সালে প্রথমবারের মতো পরিচালিত ডিজিটাল হাটে ২৭ হাজার পশু বিক্রি হয়। পরের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে ৩ লাখ ৮৭ হাজার পশু বিক্রি হয় ডিজিটাল হাটে। সর্বশেষ ২০২৩ সালে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৯৬টি পশু বিক্রি হয়েছে যার মূল্য ৪ হাজার ২৩১ কোটি ৫৮ লাখ ৯৮ হাজার টাকা।
ডিজিটাল হাটের ওয়েবসাইটে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শত শত পশু খামারি যুক্ত থাকবেন। ওয়েবসাইটের পাশাপাশি অ্যাপ থেকেও কিনতে পারবেন ক্রেতারা। ওয়েবসাইট ও অ্যাপে গ্রাহকের অভিযোগ জানানোরও ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া থাকবে অনলাইন পেমেন্টে সিস্টেমের সুবিধাও।
ডিজিটাল হাট সংশ্লিষ্টরা বলেন, ‘অনলাইন হাট থেকে পশু কিনে নিয়ে যাওয়া একটি বিরাট সমস্যা। কিন্তু ডিজিটাল হাটের উদ্যোগে পশু শিপমেন্টের ব্যবস্থাও থাকবে। এছাড়া মাংস প্রসেসিং করার জন্য থাকবে কসাইয়ের ব্যবস্থাও।’
লাইভ হাট থাকবে। ভিডিও কলে পশু দেখা যাবে এবং আপডেট দেওয়া হবে প্রতিনিয়ত। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও যশোরে জবাইসহ সবধরনের সেবা দেওয়া হবে।
ডিজিটাল হাট পরিচালনা প্রতিষ্ঠান ই-ক্যাবের পরিচালক আবদুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, বরবারের মতো এবারও পশুর ডিজিটাল হাট থাকবে। ডিজিটাল হাটে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে বিগত বছরগুলোতে। গত বছর ডিজিটাল হাটে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৯৬টি পশু বিক্রি হয়েছে যার মূল্য ৪ হাজার ২৩১ কোটি ৫৮ লাখ ৯৮ হাজার টাকা।
জনপ্রিয় হচ্ছে উট-দুম্বা কোরবানি
কোরবানির পশু হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মরুভূমির প্রাণী উট-দুম্বা। বরাবরের মতো এবারও হাটে উট-দুম্বা উঠবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। বিগত বছরগুলোতে দেখা গেছে, প্রতিটি উট ১১ থেকে ১৩ লাখ আর দুম্বা বিক্রি হয়েছে গড়ে ৩ লাখ টাকায়। ভারতের রাজস্থান থেকে ঈদ উপলক্ষ্যে আনা হয় এসব উট। প্রায় দুই মাস হাঁটিয়ে বাংলাদেশে এসব পশু আনা হয় বাংলাদেশ জানান সংশ্লিষ্টরা। প্রতি বছরই বাংলাদেশে উটের চাহিদা বাড়ছে। মরুভূমির পশু দুম্বা। বাংলাদেশে বেশকিছু খামারে এখন প্রজনন হচ্ছে দুম্বার। কোরবানি উপলক্ষ্যে এদেশে দুম্বা আনা হয় ভারত ও দুবাই থেকে। প্রতিটি উটের ওজন ১০ থেকে ১২ মণ। আর দুম্বা ৫০ থেকে ৬০ কেজি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে উটের খামার বাড়লে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকায় মিলবে এই প্রাণী।
বিক্রি শুরু রাজধানীর খামারগুলোতে
হাট না বসলেও খামারগুলোতে ক্রেতাদের আনাগোনা ও বিক্রি শুরু হয়েছে। অনেকেই হাট থেকে নয়, খামার থেকে গরু কিনতে পছন্দ করেন। তাই কোরবানি ঘিরে কয়েক মাস আগে থেকেই প্রস্তুতি নেন খামার সংশ্লিষ্টরা। গত কয়েক বছরে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে অনেক পশু খামার। এসব খামারে মূলত ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করেই পশু লালনপালন করা হয়। তবে বছরের অন্য সময়ও এসব খামার থেকে পশু কিনতে পারেন ক্রেতারা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছোট গরু সংগ্রহ করে এসব খামারে লালনপালন করে ঈদের সময় বিক্রি করা হয়।
এমনই একটি খামার রাজধানীর রামপুরার ডিআইটি রোডের ‘আলইকুয়া ক্যাটল ফার্ম’। খামারটি ঘুরে দেখা সেখানে বিভিন্ন জাতের গরু রয়েছে। পশু পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কর্মীরা। কর্মীদের কেউ কেউ পশুগুলোকে খাবার খাওয়ানোসহ নানাভাবে কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
খামারের তত্ত্বাবধায়ক মহিউদ্দিন বলেন, ‘আশপাশে খামার তেমন নেই। তাই এখানে রামপুরা ও শাহজাহানপুর এলাকার লোকজন বেশি আসেন। পাবনা, কুড়িগ্রাম ও চুয়াডাঙ্গাসহ বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে গরু সংগ্রহ করা হয়েছে। ফার্মে বেশ কয়েক জাতের ৩০টির বেশি গরু রয়েছে। এগুলো আমাদের ফার্মেই পালন করা হচ্ছে। এছাড়াও ২/৩ দিনের মধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আরও গরু আসবে। বর্তমানে ৮০ থেকে ৮০০ কেজি ওজনের গরু রয়েছে। ক্রেতারা চাইলে ৪০ হাজার টাকা বুকিং দিয়ে কোরবানির আগ পর্যন্ত এখানে গরু রাখতে পারবেন। তারা চাইলে আমরা কোরবানির আগে তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার সুবিধাও দেব।’
জানা যায়, রাজধানীসহ আশপাশের এলাকায় অর্ধশত গরুর খামার রয়েছে। পশুর বাজারের পাশাপাশি কোরবানির ঈদে এসব খামারে ক্রেতাদের ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে ঈদের আগের রাতে তো কথাই নেই। মূলত যারা পশু হাটের ঝামেলা এড়াতে চান, তাদেরই বেশি দেখা মেলে এসব খামারে।
খরচ বাড়ায় দাম বাড়বে
খামার সংশ্লিষ্টরা জানান, গো-খাদ্য, ওষুধসহ বিদ্যুতের বাড়তি দামে খরচ বেড়েছে তাদের। কোরবানির পশু প্রস্তুত করতে তাই খরচ বেড়েছে। সাইজ অনুযায়ী এবার গরুর দাম গতবারের চেয়ে কিছুটা বেশি মনে হতে পারে ক্রেতাদের। চাঁদপুরের গরু খামারি লিটন পাঠান বলেন, ‘গো খাবারের দাম অনেক। যার কারণে খরচ অনেক বেড়ে গেছে। প্রত্যেক গরুতে এবার ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বেশি খরচ হবে।’ খামারিরা বলছেন, অনিয়ন্ত্রিত গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ বিল ও শ্রমিকের মজুরি বাড়ায় কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে খামার চালু রাখা। গরুর খামার টিকিয়ে রাখতে গো-খাদ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আহ্বান তাদের।
কিস্তিতে মিলছে কোরবানির পশু
রাজধানী ও আশেপাশের খামারগুলোতে কিস্তিতে কেনা যাচ্ছে কোরবানির পশু। নামমাত্র মূল্য পরিশোধ করে বুকিং করে রাখছেন ক্রেতারা। তারপর ঈদের আগে কয়েক ধাপে মূল্য পরিশোধ করে বাসায় নিয়ে যাওয়া যাবে পশু। কোনো কোনো খামার আবার দিচ্ছে ডেলিভারি সুবিধাও। খামাারিরা জানান, বুকিং পদ্ধতি অতীতেও ছিল। তবে দিন দিন এ পদ্ধতি জনপ্রিয় হচ্ছে। বুকিং করা এসব পশু কোরবানির আগে কোনো ক্ষতি হলে বিনিময় বা মূল্য ফেরতের ব্যবস্থা রয়েছে।
ঈদ উপলক্ষ্যে প্রায় ৩ হাজার পশু তৈরি করেছে কেরাণীগঞ্জের শরীফ এগ্রো। এরই মধ্যে বুকিং হয়ে গেছে ২ হাজার পশু। রোজার ঈদের পর থেকেই নামমাত্র মূল্য বুক করার এই ব্যবস্থা শুরু হয়। চাইলে সপ্তাহে একদিন সময় কাটানো যাবে নিজের কেনা পশুর সাথে। এজন্য বুকিং রশিদটি সঙ্গে নিয়ে আসতে হবে। এমন সুবিধা মিলছে প্রায় সব খামারেই। বুকিং ও কিস্তি পদ্ধতি একেক প্রতিষ্ঠানের একেক রকম। কিস্তি দিয়েছেন এমন একজন সোহান রহমান বলেন, অনেক সময় টাকা থাকে না। কিস্তি সুবিধা থাকলে কোরবানিটা দিতে পারি।
শরিফ এগ্রোর ম্যানেজার সুমন বলেন, অনেকের হয়তো গরু পালার ইচ্ছা কিন্তু জায়গা নেই। তারাই বিভিন্ন খামারে গরুগুলো আগে থেকেই বুকিং দিয়ে রাখেন। ক্রেতাকে বলে দেই যদি তার কেনা গরু কোনো কারণে মারা যায়, সেক্ষেত্রে টাকা আমরা ফেরত দেবো। সর্বনিম্ন এক লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকায় মিলছে এসব পশু। আরেকটি খামারের ম্যানেজার রহিম বলছেন, মোট ১২০টি গরু প্রস্তুত করেছি। সবগুলোই বিক্রি হয়ে গেছে। সর্বনিম্ন ৩ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছি।
ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি
কোরবানির হাট শুরুর বেশ আগেই পশু বিক্রির আয়োজন শুরু হয়ে গেছে খামারগুলোতে। এবার ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। খামারিরা এজন্য চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতিকে দায়ী করছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোরবানির পশু আগেভাগে কিনতে পারলে কিছুটা কমে পাওয়া যায় বলে অনেকেই খামারে গরু বুকিং দিচ্ছেন। অনেকেই আবার হাটে গিয়ে গরু কেনার ঝামেলায় যেতে চান না বলে আগেভাগে কোরবানির পশু কিনে ফেলছেন।
খামারিরা জানিয়েছেন, গত বছর লাইভ ওয়েট পদ্ধতিতে গরুর দাম প্রতি কেজিতে ৪৮০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। এ বছর ৫০০ টাকা কেজি হিসাবে বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে। লাইভ ওয়েট পদ্ধতিতে পুরো গরুর ওজনের ভিত্তিতে এর দাম নির্ধারণ করা হয়।
শুধু রাজধানীতেই নয়, প্রায় সারাদেশেই ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি। ক্রেতারা বলছেন, মূল্যষ্ফীতির চাপে এমনিতেই নাজুক অবস্থা। কাজেই ছোট গরু ছাড়া তো উপায় নেই। ছোট গরুও তো লাখ টাকায় পাওয়া দুষ্কর হয়ে যায়।
লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: প্রচ্ছদ