ক্রিকেট মোড়লদের বাংলাওয়াশ

সালেক সুফী: পর পর তিন ম্যাচে সহজ জয় পেয়ে নতুন বাংলাদেশ বিশ্ব ক্রিকেট মোড়লদের টি২০ সিরিজে চুনকাম (হোয়াইট ওয়াশ ) করেছে। উত্তাল মার্চে মাইলফলক অর্জনকারী এই জয়ে এখন গোটা বিশ্বের ক্রিকেট পূজারী বাংলাদেশিরা উচ্ছসিত। বাঁধভাঙা আনন্দ জোয়ারে ভাসছে বাংলাদেশ।

চট্টগ্রাম, ঢাকায় খেলা প্রথম দুই ম্যাচ জয় করে সাকিব বাহিনী শেষ ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ জিতে নিয়েছিল। আজ ছিল প্রতাপশালী ইংল্যান্ডের মুখ রক্ষার ম্যাচ। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং সুসমন্বিত করা বাংলাদেশ ১৬ রানে ম্যাচ জয় করে কৃতিত্বপূর্ণ বাংলাওয়াশ অর্জন করলো।

টস জয় করে বাংলাদেশ লিটন (৭৩), শান্তর (৪৭*) দৃষ্টিনন্দন ব্যাটিং পুঁজি করে ১৫৮/২ করেছিল। এক সময়ের সুবিধাজনক অবস্থায় থেকেও ১৭০-১৮০ করতে না পারায় কিছুটা সংশয় ছিল।

ইংল্যান্ড দল শুরু করেছিল জয়ের মিশন। মালান-বাটলার জুটির ৯৫ রান ইংল্যান্ড দলকে জয়ের পথে ধাবিত করছিলো। বাংলাদেশ কিন্তু ভড়কে যায়নি। ১৪ ম ওভার থেকে দারুনভাবে ঘুরে দাঁড়ালো বাংলাদেশ।

মুস্তাফিজের একটি ওভারে লিটনের ক্যাচ আর মিরাজের রান আউট ম্যাচের ধারা পাল্টে দিলো। শেষ ওভারে তরুণ হাসান মাহমুদের চমৎকার বোলিং স্বস্তি এনে দিলো। ১৬ রানে ম্যাচ জয়, সিরিজ হোয়াইট ওয়াশ নতুন করে নতুন বাংলাদেশকে সাফল্যের হিমালয় চূড়ায় তুলে দিয়েছে।

সাদা বলের দুই ফরম্যাটে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে এসেছিলো কিছুটা খর্বশক্তির দল নিয়ে। ভেবেছিলো হেসেখেলে জয় পাবে দুই ফরম্যাটে। বাংলাদেশ লড়াই করে হেরেছে ওডিআই সিরিজ (১-২)।

কিছু তরুণ, কিছু অনিয়মিত খেলোয়াড় নিয়ে সাকিবের নেতৃত্বে দল সাজিয়েছিল বাংলাদেশ। বলাবাহুল্য সেই দলের প্রতিটি সদস্য নিজেদের সেরা নিবেদন করে দলকে স্মরণীয় সিরিজ জয় উপহার দিয়েছে। এমনিতেই ওডিআই ক্রিকেটে বাংলাদেশ ঘরের মাঠে দুধর্ষ দল হিসাবে স্বীকৃত।  এখন থেকে টি২০ ক্রিকেটেও বাংলাদেশকে নতুন করে গুরুত্ব দিতে হবে।

আজ টস জয় করে ব্যাটিং নিয়েছিল বাংলাদেশ। কাঙ্ক্ষিত ছিল লিটন যেন রানে ফিরে। সঙ্গী রনি পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গিতেই লিটনের সাথে প্রথম উইকেট জুটিতে ৭.৩ ওভারে ৫৫ রান জুড়ে দিয়েছিলো। আজ কিন্তু শুরু থেকে নিজ মূর্তিতে সক্রিয় ছিল লিটন। ওর ৫৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংসে ছিল ১০টি দর্শনীয় চার আর একটি ছয়।

অপর দিকে ফর্মের তুঙ্গে থাকা শান্ত আরো একটি অপরাজিত ৪৭ রানের পরিণত ইনিংস খেললো। তবে ধীর, কঠিন উইকেটে শেষ ৫ ওভারে কাঙ্ক্ষিত রান তুলতে না পারায় ১৫৮/২ শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস। দিন কিন্তু ইংল্যান্ডের ফিল্ডিং ছিল সাধারণ মানের।  হয়তো ইংরেজরা বলবে স্কুলের মেয়েদের মতো।

যাহোক জয়ের জন্য মরিয়া ইংলন্ড কিন্তু মালান-বাটলার দ্বিতীয় উইকেট জুটির ৯৫ রানের ভেলায় চড়ে জয়ের স্বপ্নে বিভোর ছিল। পথ হারায়নি বাংলাদেশ। আজ দারুন ছন্দে থাকা মুস্তাফিজের এক ওভারে পর পর  দুইজন সেট ব্যাটসম্যান মালান (৫৩), বাটলার (৪০) ফিরে গেলে মুষড়ে পড়ে ইংল্যান্ড। বিচক্ষণ সাকিব ওর বোলিংসম্পদ সেরা ব্যবহার নিশ্চিত করে ইংলান্ডকে কোনঠাসা করে ফেলে। ১৬ রানে জয় পে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের সিরিজ জয়,  বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলকে কে হোয়াইটওয়াশ নিঃসন্দেহে বিশাল অর্জন। তার থেকেও বড় কথা আত্মবিশ্বাস আর কঠিন পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর নতুন মানসিকতা। সাকিব তরুণ দলকে এক সুতায় বেঁধে নিয়েছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

4 − 3 =