সালেক সুফী
চতুর্থ দিনশেষে চলতি পর্যায়ের এশেজ ক্রিকেট মহাযুদ্ধের প্রথম টেস্ট চতুর্থ দিন শেষে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আগুনে জ্বলছে। ক্যাঙ্গারুদের সিংহ বধ করতে হলে শেষ দিনে ৭ উইকেট হাতে নিয়ে সংগ্রহ করতে হবে ১৭৪ রান। উইকেটে আছে পাকিস্তানে জন্মগ্রহণকারী অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার প্রথম ইনিংসে শতরান কারী উসমান খাজা, সঙ্গী নৈশ প্রহরী স্কট বোলান্ড। এখনো বাকি আছে বর্তমানে টেস্ট ক্রিকেটে আলো ছড়ানো ট্রাভিস হেড। নির্ভরযোগ্য আলেক্স কারী, ক্যামেরুন গ্রিন।
বেজবল কৌশল নিয়ে খেলা ইংল্যান্ড টস জয়ী হয়ে প্রথম ব্যাটিং করে প্রথম দিনের শেষে ৩৯৩/৮ করে ইনিংস ঘোষণা করলে অনেকেই বিস্মিত হয়েছিল। নাথান লায়নের ঘূর্ণি (৪/১৪৯), হ্যাজেলউড, বোলান্ড, কামিন্সদের বিরুদ্ধে একদিনের ক্রিকেট ঘরানায় খেলে জো রুট (১১৮ ), জনি বেয়ারস্টো (৭৮) এবং জ্যাক ক্রলির (৬১) রান পুঁজি করে ৩৯৩/৮ করে পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ইনিংস ঘোষণা করে ইংল্যান্ড দলপতি বেন স্টোকস।
ইংল্যান্ড দলের পেস, স্পিন যুগল আক্রমণের মোকাবিলায় অস্ট্রেলিয়া ভালো ব্যাটিং করেও ৩৮৬ রানে সব উইকেট হারায়। খাজা ১৪১ রানের ম্যারাথন ইনিংস খেলে এক প্রান্ত আগলে রাখে। আলেক্স কারি (৬৬) এবং ট্রাভিস হেড (৫০) রানের ইনিংস দুটি আরো একটু বড় হলে অস্ট্রেলিয়া হয়তো লিড পেতো। ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসে পাট কাম্মিনস ( ৪/৪৩) এবং নাথান লায়ন্সের (৪/৮০) যুগল আক্রমণের মুখে ২৭৩ রানে সব উইকেট হারায়। জো রুট (৪৬), হ্যারি ব্রক (৪৬), বেন স্টোকস (৪৩) ভালো সূচনা করেও ইনিংস বড় করতে পারেনি। আশা নিরাশার দোলক দোলায় দোলা ম্যাচের ভাগ্য টেস্ট ক্রিকেটের লাস্যময়ী রূপে বিকশিত হয়।
২৮১ রান জয়ের নিশানা করে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে ডেভিড ওয়ার্নার এবং উসমান খাজা প্রথম উইকেট জুটিতে ৬১ রান জুড়ে দিয়েছিলো। বিশ্ব টেস্ট ক্রিকেটের ১, ২ ও ৩ নম্বর শীর্ষ ব্যাটসম্যান মার্নাস লারুসাং , স্টিভ স্মিথ এবং ট্রাভিস হেডকে নিয়ে বাজির ঘোড়া ছিল অস্ট্রেলিয়ার অনুকূলে। বোলিং করছে ইংলান্ডের সর্বযুগের অন্যতম সেরা পেস বোলিং যুগল চির সবুজ জেমস অ্যান্ডার্সন (৬৮৬ ) এবং স্টুয়ার্ট ব্রড (৫৮৭ ) . যুগল আঘাত হানলো বিশ্বস্থ ব্রড। মোক্ষম আঘাতে ফিরে গেলো অস্ট্রেলিয়ার দুই ব্যাটিং স্তম্ভ লারুসাং এবং স্মিথ। মাঠের পাল্লা ঝুঁকে পড়েছে ইংল্যান্ডের দিকে। কিন্তু জেগে আছে উসমান খাজা সঙ্গে নৈশ প্রহরী স্কট বোলান্ড।শেষ দিন বৃষ্টি বিঘ্ন না ঘটালে শেয়ানে শেয়ানে লড়াই হবে। এশেজ আগুনে জ্বলছে ক্রিকেট বিশ্ব।
ক্রিকেটের সনাতন প্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়া। যখনই মুখোমুখি হয় টেস্ট ক্রিকেটে অবধারিতভাবে স্মরণে আসে এশেজ যুদ্ধ স্মৃতি। ইদানিং ভারত-অস্ট্রেলিয়া বা ভারত-পাকিস্তান প্রতিদ্বন্দ্বিতা আলো ছড়ালেও কখনো সেগুলো গুনে মানে আকর্ষণে এশেজ সমপর্যায়ে পৌঁছেনি। এইতো সেদিন বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল হয়ে গেলো ভারত-অস্ট্রেলিয়ার মাঝে। সেটি কি এশেজের মতো উত্তাপ চড়িয়েছিল ?
জানিনা রমণীয় ক্রিকেট এশেজ সিরিজের সূচনার ম্যাচটির ভাগ্যে নির্ধারিত রেখেছে। দুই দলের সমান সুযোগ আছে। ৩ উইকেট তুলে নিয়ে হয়তো কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। কিন্তু শেষদিনে শেয়ানে শেয়ানে লড়াই দেখতে ক্রিকেট বিশ্ব মুখিয়ে থাকবে।
সালেক সুফী: আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিশ্লেষক