অ্যান্ডার্সন – টেন্ডুলকার টেস্ট সিরিজ
প্রথম টেস্ট, লীডস, ইংল্যান্ড
ইংল্যান্ড: ৪৬৫ (অলি পপ ১০৬, হ্যারি ব্রুক ৯৯, বেন ডাকেট ৬২, জেমি স্মিথ ৪০, ক্রিস ওকস ৩৮, জাসপ্রিত বুমরা ৫/৮৩, প্রসিড কৃষ্ণা (৩/১২৮) এবং ৩৭৩/৫ (বেন ডাকেট ১৪৯, জ্যাক ক্রলি ৬৫, জো রুট্ ৫৩*, জেমি স্মিথ ৪৪, বেন স্টোকস ৩৩, শার্দুল ঠাকুর ২/৫১, প্রসীদ কৃষ্ণা ২/৯২)
ভারত: ৪৭১ (শুভমান গিল ১৪৭, ঋষভ পান্ট ১৩৭, যশোভি জাসোয়াল ১০১, কে এল রাহুল ৪২, বেন স্টোকস
৪/৬৬, জস টঙ্গা ৪/৮৬) এবং ৩৬৪ (কে এল রাহুল ১৩৭, ঋষভ পান্ট ১১৮, জস টঙ্গা ৩/৭২, ব্রাইডন কার্স ৩/৮০, শোয়েব বশীর ২/৯০)
ইংল্যান্ড ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় : বেন ডাকেট (৬২ এবং ১৪৯)
বিশ্ব টেস্ট ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপের চতুর্থ আসরের গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ ক্রিকেটের দুই জীবন্ত কিংবদন্তি স্যার জেমস অ্যান্ডার্সন আর শচীন রমেশ তেন্ডুলকরের নামের মোড়কে শুরু হয়েছে। লীডসে অনুষ্ঠিত নানা মাইল ফলক স্থাপিত টেস্টে চার ইনিংসে রেকর্ড ১৬৭৩ রান হয়েছে। তুখোড় প্রতিদ্বন্দ্বিতা মুখর টেস্টের শেষ দিনে বাজবল ঢঙে খেলে ৩৭৩/৫ করে ইংল্যান্ড ভারতকে ৫ উইকেটে পরাজিত করে সিরিজে শুভ সূচনা করেছে। বৃষ্টি বিঘ্নিত শেষ দিনেই রান হয়েছে ৩৫৩। টেস্ট জয়ে ৫ ম্যাচ সিরিজে ১-০ এগিয়ে গেলো স্বাগতিক ইংল্যান্ড।
সাম্প্রতিক সময়ের বিশ্ব ক্রিকেটের দুই প্রতাপশালী দল ইংল্যান্ড এবং ভারতের সিরিজ নিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে ছিল নানা বিশ্লেষণ, বহুমুখী আলোচনা। এযাবৎ অনুষ্ঠিত তিন বারের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে ভারত প্রথম দুইবার ফাইনালে উঠেও পরাজিত হয়েছে নিউজিলণ্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার কাছে। নিজেদের মাটিতে ফাইনাল হলেও একবারও ফাইনালে উঠতে পারে নি ক্রিকেট জননীর দেশ ইংল্যান্ড। এইতো কিছু দিন আগে অস্ট্রেলিয়াকে পরাজিত করে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ মুকুট অর্জন করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এবারের আয়োজনে তাই ইংল্যান্ড ভারত দুইদল সাফল্যের জন্য ক্ষুদার্থ।
ভারতের দুই কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি এবং রোহিত শর্মা সম্প্রতি টেস্ট ক্রিকেটকে আনুষ্ঠানিক বিদায় জানানোয় অপেক্ষাকৃত তরুণ অথচ মেধাবী দল নিয়ে সফরে গেছে ভারত। অধিনায়ক বিশ্ব ক্রিকেটে ক্রমাগত বিকশিত হতে থাকা শুভমান গিল। আছে যশোভি জয়সোয়াল, ঋষভ পান্ট, কে এল রাহুল। আরো আছে বর্তমান বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা পেস বলার জাসপ্রিত বুমরা। অপরদিকে ইংল্যান্ড দলে জো রুট আর বেন স্টোকস ছাড়া বিশ্বমানের খেলোয়াড় বলতে বেন ডাকেট, ওলি পপ আর হ্যারি ব্ৰুক। ধারণা ছিল ইংল্যান্ডের পরিবেশের সঙ্গে দ্রুত খাপ খাইয়ে নিলে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলবে ভারত।
৫ দিনের খেলা শেষে ইংল্যান্ডের ৫ উইকেটের জয় বিশাল অর্জন সন্দেহ নেই। কিন্তু চার ইনিংসে ১৬৭৩ রান দেখা এই টেস্টে ভারত লড়াই করেছে কোমর কোষে। টস হেরে প্রথমে ব্যাটিং করে জাসোয়াল (১০১), গিল ১৪৭ আর ঋষভ পান্ট ১৩৪, কে এল রাহুল ৪২ করে ৪৭১ রান জড়ো করে। রোহিত, কোহলীর অবর্তমানে এই স্কোর সামান্য ছিলনা। জবাবে ইংল্যান্ড খেলতে নেমে জাসপ্রিত বুমরার আগ্রাসী বোলিংয়ের মোকাবিলায় লড়াই করে টিকে থাকে ইংল্যান্ড। ডাকেট (৬২), পপ (১০৬), ব্রুক (৯৯) যুদ্ধ করে ইংল্যান্ড ইনিংস ৪৬৫ নিয়ে যায়। ভারত ইনিংসে ৩ টি শতরান নিঃসন্দেহে ছিল বড় অর্জন। প্রথম ইনিংসে চার জন মুল স্কোরারের সঙ্গে বাকি ৭ ব্যাটসমান ন্যূনতম রান জড়ো করতে পারলে ভারত সংগ্রহ ৫০-৫২০ হতে পারতো। ভারত একপর্যায়ে ৪৩০-৪৭১ মাত্র ৪১ রানে শেষ ৭ উইকেট হারায়। ইংল্যান্ড দলের প্রথম ইনিংসে বুমরাহ দুধর্ষ বোলিং (৫/৮৩) ইংল্যান্ডকে কাঁপিয়ে দিলেও কিছু ক্যাচ ফস্কে যায়। ১০ রানে এগিয়ে থেকে ভারত দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে কে এল রাহুল ১১৭ এবং ঋষভ পান্টের উপর্যুপুরি দ্বিতীয় সেঞ্চুরি ১১৮ রানে ভর করে ইংল্যান্ডের সামনে ৩৭১ রানের টার্গেট ছুড়ে দেয়।
ম্যাচের শেষ দিনে ইংল্যান্ডের প্রয়োজন দাঁড়ায় ৩৫০। সনাতন টেস্ট সংস্কৃতিতে টেস্ট ক্রিকেটের শেষ দিনে ৩৫০ রান করে টেস্ট জয়ের কীর্তি বিরল। কিন্তু ইংল্যান্ড এখন বাজবল ক্রিকেট খেলে টেস্ট ক্রিকেটের ব্যাকরণ পাল্টে দিয়েছে। কাল সকালে ইংরেজ ওপেনার জ্যাক ক্রলি (৬৫) আর বেন ডাকেট (১৪৯) প্রথম উইকেট জুটিতে পরিমিত অথচ পর্যাপ্ত দৃঢ়তার সঙ্গে ব্যাটিং করে ১৮৮ রানের শক্ত ভীত গড়ে দেয়। একসময় ভারতীয় বোলাররা ডাকেট, পপ আর ব্রুকের উইকেট দ্রুত তুলে নিয়ে কিছুটা চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। কিন্তু জয়ের নেশায় কৃতকল্প ইংল্যান্ড বৃষ্টি বাধা পেরিয়ে জো ৰূট (৫৩*), জেমি স্মিথ (৪৪*) দৃঢ়তায় ৩৭৩/৫ করে ৫ উইকেটে জিতে নেয় টেস্ট। ভারত কিন্তু লড়াই করেছে। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত বোলিংয়ের মূল অস্ত্র জাসপ্রিত বুমরাহকে ঠিক মত সামাল দিয়েছে ইংল্যান্ড। সত্যি বলতে হলে বলতে হবে ভারতের বোলিং বুমরাহ ছাড়া আদৌ বিশ্বমানের বলা যাবেনা। আর তাই দুই ইনিংসে ৫ টি শত রান আর পান্টের দুই ইনিংসের শত রানের মাইল ফলক সত্ত্বেও পরাজিত হলো ভারত। সিরিজের আরো ৪ টেস্ট বাকি। প্রথম টেস্টের ভুল ত্রুটি শুধরে নিয়ে ঘুরে দাঁড়াবে ভারত আশা করা যেতেই পারে। তবে ইংল্যান্ডের অর্জনকেও খাটো করে দেখার উপায় নেই। এই ধরণের প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক টেস্ট টেস্ট ক্রিকেটের নব জাগরণের জন্য অপরিহার্য।