খল অভিনেতা মিজু আহমেদের জন্মদিন আজ

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের শক্তিমান অভিনেতা মিজু আহমেদ। খলনায়ক চরিত্রের সুবাদে তিনি বাংলা চলচ্চিত্রে সুপরিচিত। এ দেশের চলচ্চিত্রে খল অভিনেতা হিসেবে যে কজন দাপুটে অভিনয় দিয়ে সিনেপ্রেমীদের মুগ্ধ করেছেন মিজু আহমেদ তাদের মধ্যে অন্যতম। তার অভিনীত সর্বশেষ মুক্তি প্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘পাষাণ’।

আজ ১৭ নভেম্বর নন্দিত এই অভিনেতার জন্মদিন। মিজু আহমেদ ১৯৫৩ সালের কুষ্টিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পারিবারিক নাম মিজানুর রহমান হলেও তিনি মিজু আহমেদ নামে সর্বাধিক পরিচিত। শৈশব থেকে তিনি থিয়েটারের প্রতি খুব আগ্রহী ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি কুষ্টিয়ার স্থানীয় একটি নাট্যদলের সাথে যুক্ত হন।

শিক্ষাগত যোগ্যতার দিকে থেকে তিনি বিএসসি বিভাগ নিয়ে উত্তীর্ণ হন। অবসরে তিনি ক্রিকেট খেলা দেখতে পছন্দ করতেন। তৃষ্ণা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে ১৯৭৮ সালে চলচ্চিত্রে তার অভিষেক হয়। কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি ঢালিউড চলচ্চিত্র শিল্পে অন্যতম সেরা একজন খলনায়ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।

এ ছাড়াও তিনি তার নিজের চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থা ফ্রেন্ডস মুভিজ এর ব্যানারে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছেন। ১৯৯২ সালে ‘ত্রাস’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া ২০১০ সালে ‘ওরা আমাকে ভাল হতে দিল না’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ খলচরিত্রে অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।

বড় পর্দায় তার প্রায় ৮০০টির মতো ছবি মুক্তি পেয়েছে। তিনি চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতিও নির্বাচিত হয়েছিলেন। আশির দশকে তিনি মহানগর (১৯৮১), নয়নের আলো (১৯৮৪), সারেন্ডার (১৯৮৭), সত্য মিথ্যা (১৯৮৯) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। নব্বইয়ের দশকে তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হলো- অপরাধধর্মী দাঙ্গা (১৯৯১), ত্রাস (১৯৯২), ত্যাগ (১৯৯৩), দেশপ্রেমিক (১৯৯৪), খলনায়ক (১৯৯৬), মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক হাঙর নদী গ্রেনেড (১৯৯৭), অপরাধধর্মী আম্মাজান (১৯৯৯)।

মিজু আহমেদ অভিনীত চলচ্চিত্রের মধ্যে- তৃষ্ণা (১৯৭৮), মাটির ঘর (১৯৭৯), মহানগর (১৯৮১), নয়নের আলো (১৯৮৪), অশান্তি (১৯৮৬), সারেন্ডার (১৯৮৭), সত্য মিথ্যা (১৯৮৯), বোনের মত বোন (১৯৮৯), স্ত্রীর পাওনা (১৯৯১), দাঙ্গা (১৯৯১), পিতা মাতা সন্তান (১৯৯১), চাকর (১৯৯২), বন্ধু আমার (১৯৯২), সোলেমান ডাঙ্গা (১৯৯২), ত্রাস (১৯৯২), ত্যাগ (১৯৯৩), দেশপ্রেমিক (১৯৯৪), খলনায়ক (১৯৯৬), বশিরা (১৯৯৬), আজকের সন্ত্রাসী (১৯৯৬), হাঙর নদী গ্রেনেড (১৯৯৭), অন্ধ ভালোবাসা (১৯৯৭), কুলি (১৯৯৭), আম্মাজান (১৯৯৯), লাঠি (১৯৯৯), লাল বাদশা (১৯৯৯), গুণ্ডা নাম্বার ওয়ান (২০০০), ঝড় (২০০০), কষ্ট (২০০০), বিদ্রোহ চারিদিকে (২০০০), যোদ্ধা (২০০০), ওদের ধর (২০০২), ইতিহাস (২০০২), লাল দরিয়া (২০০২), ভাইয়া (২০০২), কারাগার (২০০৩), হিংসা প্রতিহিংসা (২০০৩), বিগ বস (২০০৩), আজকের সমাজ (২০০৪), মহিলা হোস্টেল (২০০৪), হীরা আমার নাম (২০০৫) অন্যতম।

পারিবারিক জীবনে মিজু আহমেদ পারভীন আহমেদকে বিয়ে করেন। এই দম্পতির রয়েছে তিন সন্তান। দুই মেয়ে কেয়া ও মৌ এবং ছেলে হারশাত। তিনি ২৭ মার্চ ২০১৭ তারিখ ঢাকা থেকে ট্রেনে করে ‘মানুষ কেন অমানুষ চলচ্চিত্রের’ শুটিং করতে দিনাজপুর যাওয়ার পথে মৃত্যুবরণ করেন।

রুপালি পর্দায় দর্শকরা তাকে নিন্দিত চরিত্রে দেখলেও প্রকৃতপক্ষে মিজু আহমেদ ছিলেন একজন নীতিবান ও সৎ জীবনের অধিকারী। শুধু তাই নয় নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতেন পর্দার এই ভিলেন। তিনি বিপদে-আপদে সবসময় মানুষের পাশে দাঁড়াতেন। নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন মিজু আহমেদ। নন্দিত এই অভিনেতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

20 − twelve =