ইদানীং ঘর সাজাতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে লাইটিং। ঘরের সাথে মানানসই লাইটিং হলো পুরো ঘরের ছবিটাই পালটে যায়। ময়ূরাক্ষী সেনের প্রতিবেদনে আজকের রঙবেরঙের আয়োজন, কীভাবে লাইটিং ব্যবহার করে আপনার ঘরকে করে তুলতে পারেন নান্দনিক।
প্রতিটি ঘরেই আয়না থাকে, ভিন্নতা নিয়ে আসতে আয়নার আশেপাশে এলইডি বাল্ব রাখুন। এটি রুমের শোভা যেমন বাড়িয়ে দিবে তেমনি সাজগোজের সময় আলো জ্বালিয়ে নিলে সাজতে সুবিধা হবে। রুমে কিছুটা উষ্ণ আলো চাইলে হলুদ এলইডি লাইট ব্যবহার করতে পারেন। শোবার ঘরে বিছানার নিচে এলইডি লাইট স্ট্রিপ সেট করে নিতে পারেন। এতে রাতেরবেলা রুমে হালকা আলোর আভা দিবে। চাইলে এটি ঘুমের সময়ও অন করে রাখা যেতে পারে। বাচ্চাদের পড়ার টেবিলে বিভিন্ন রঙের এলইডি লাইট ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন নীল, লাল, গোলাপি, হলুদ ইত্যাদি। এতে তার পড়ার টেবিলের প্রতি আগ্রহ বাড়বে। এছাড়া রান্নাঘরে এলইডি ডেকোরেশন লাইট ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনার সাধারণ রান্না ঘরটিও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। খাবার ঘরে ব্যবহার করতে পারেন হলুদ এলইডি লাইট। হলুদ লাইট উজ্জ্বল হওয়ায় নিমিষেই মন ভালো করে দিতে পারে।
খাবারের ঘরের জন্য ব্যবহার করতে পারেন পেনডেন্ট লাইট। এটি মেটালের রড দিয়ে সিলিং থেকে ঝোলানো হয়। ডাইনিং টেবিলের উপর পেনডেন্ট লাইটিং করা যেতে পারে। বাজারে পেনডেন্ট লাইটিংয়ের বাহারি ডিজাইন রয়েছে। তার মধ্যে থেকে খুঁজে নিতে হবে আপনার ঘরের সাথে মানানসই পেনডেন্ট। পেনডেন্ট লাইটে কয়েকটি বাল্ব ব্যবহার করা হয়। বসার ঘরেও পেনডেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। সোফার পাশে রেখে দিন স্টিল বা পিতলের দুটি আলোর সেট। তাতে ঘর অনেক বেশি আলোকিত হয়ে উঠবে। অনেকেই ঘরে গাছ রাখেন। চাইলে গাছ হাইলাইট করে পেনডেন্ট রাখতে পারেন। শোবার ঘরে লাইট রাখতে চাইলে সৌন্দর্যের পাশাপাশি আরামকেও প্রাধান্য দিতে হবে। তাই শোবার ঘরে এমন স্থানে লাইট সেট করুন যেখানে ঘুমের কোনো ব্যাঘাত হবে না। অনেকেই চায় না ঘুমের সময় পুরো ঘর অন্ধকার হয়ে যাক, তারা হালকা লাইট ব্যবহার করতে পারেন।
এছাড়া করা যেতে পারে টাস্ক লাইটিং। টাস্ক লাইটিংকে হাইলাইটার লাইটও বলা যেতে পারে। কারণ এটি যেকোনো নির্দিষ্ট জায়গাকে হাইলাইট করে রাখে। যেমন বুক সেলফ, গাছ, ছবির ফ্রেম বা কোনো শোপিস। এটি চাইলে রান্নাঘরের সেলফের নিচে কিংবা পড়ার টেবিলে সেট করা যায়। আবার বসার ঘরের কর্নারে সিলিংয়ের মতো ল্যাম্পশেড ঝুলিয়ে দেওয়া যেতে পারে। চাইলে পুরো ঘরের খালি কর্নারগুলোতেও ছোট ছোট ল্যাম্পশেড দিয়ে দিতে পারেন। এতে ঘর হয়ে উঠবে রঙিন।
ঘরের লাইটিং করার জন্য স্পটলাইটের ব্যাপক চাহিদা। ড্রয়িংরুমে প্রিয় কোনো ছবিকে ফ্রেম করে স্পটলাইট সেট করতে পারেন। ঘরের কোণে সেট করে নিন স্পটলাইট। এটি ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে। স্পটলাইটের মতো আরেকটি হাইলাইট করা লাইট হলো একসেন্ট লাইট। শিশুদের ঘরের জন্য উপযোগী লাইটিং হচ্ছে ডেকোরেটর লাইটিং। চাঁদ, তারা, রিকশা কিংবা শিশুর প্রিয় কার্টুন চরিত্রের ডেকোরেশন লাইট ঝুলিয়ে দেওয়া যেতে পারে। কিংবা শিশুর জানালায় দেওয়া যেতে পারে ফেইরি লাইট। রুমের বাতি নিভিয়ে দিলে ফেইরি লাইট রুম হালকা আলোকিত করে।
ঘরে দেশীয় শিল্পের ছোঁয়া রাখতে চাইলে ব্যবহার করতে পারেন বাঁশ কিংবা বেতের টেবিল ল্যাম্প। এইসব ল্যাম্প চাইলে দেয়ালে ঝুলিয়েও দেওয়া যায়। এছাড়া ইদানীং খুব চলছে প্ল্যান্টার লাইট। বাড়িতে গাছের ফাঁকে ফাঁকে এ লাইট সেট করা হয়ে থাকে। কিংবা ফলস পাতার সাথে এক করে এই লাইট দেয়ালে ঝুলানো হয়। এটি অনেকে বাড়ির বাগানেও সেট করে। পুরো বাগান এই লাইট আলোকিত করে দেয়। এছাড়া এখন বাড়ির আসবাবের মধ্যে লাইট সেট করে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়। এ ধরনের লাইটের সেটআপ ঘরকে ভিন্নমাত্রার সৌন্দর্য এনে দেয়।
একটা সময় অভিজাত বাড়ির বসার ঘরে ঝাড়বাতি থাকতো। এখন বাজারে নানা ধরনের বাতি পাওয়া যায়। ফলে ঝাড়বাতির ব্যবহার কিছুটা কমেছে। তবে চাইলে এখনো ঝাড়বাতি দিয়ে ঘর আলোকিত করা যায়। বেছে নেওয়া যেতে পারে ক্রিস্টাল ঝাড়বাতি। এটি বাড়িতে আভিজাত্যের ছোঁয়া দেয়। তবে এ ধরনের ঝাড়বাতি লাগাতে চাইলে ঘর অবশ্যই বড় হতে হবে। ঘর যদি ছোট হয় তাহলে সিলিংয়ে লাগানো ঝাড়বাতি বেছে নিতে হবে। সিলিংয়ে ঝোলানো ঝাড়বাতির নানা নকশা বাজারে পাওয়া যায়। দেখতে অনেকটা মোমবাতির মতো এমন ঝাড়বাতি একসময় অনেক ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এখন এটি সেকেলে লাগলেও আধুনিক নকশার মোমবাতি ঝাড়বাতিও পাওয়া যায়। ঝাড়বাতি হলুদ আলোতে বেশি ফুটে উঠে, কিন্তু চাইলে অন্য রঙের লাইটও বেছে নেওয়া যায়। দেয়ালের রং সাদা হলে সাদা লাইট বেছে নেওয়া যেতে পারে। ডাইনিং টেবিলে ঝাড়বাতি রাখতে চাইলে টেবিল থেকে ৩০ ইঞ্চি দূরত্ব থাকতে হবে। ঝাড়বাতি লাগালে তা নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে, তা না হলে ধুলো জমে যাবে। ঝাড়বাতি পরিষ্কার করার আগে এটি খুলে আলাদা করে নিতে হবে। পরিষ্কার করতে লাগবে পানি, নরম ব্রাশ ও ডিটারজেন্ট কিংবা কেরোসিন দিয়েও পরিষ্কার করা যেতে পারে।
ঘরকে আলোকিত করতে ল্যাম্পের চাহিদা রয়েছে সবসময়। ফ্লোর বা স্ট্যান্ড ল্যাম্প, হ্যাংগিং ল্যাম্প বাজারে পাওয়া যায়। বিভিন্ন ডিজাইনের ল্যাম্প ঘরের এক কোণে রাখা যায়। ল্যাম্প রাখবার জন্য খুব বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না। স্ট্যান্ড ল্যাম্প চাইলে বই পড়ার সময়ও ব্যবহার করা যেতে পারে। অনেকেই বাড়ির বারান্দায় বাগান করে থাকেন। সেখানে গার্ডেন লাইট ব্যবহার করতে পারেন। গার্ডেন লাইটগুলো সাধারণত পানিরোধক হয়ে থাকে। বৃষ্টিতেও এই লাইটের ক্ষতি হয় না। চাইলে ড্রেসিং টেবিল কিংবা পড়ার টেবিলে কাচের জগের মধ্যে ছোট বাতি দিয়ে রাখতে পারেন, এটি বেশ ভালো অনুভূতি দিবে।
বিছানার পাশে টেবিল থাকলে তাতে টেবিল লাইট রাখতে পারেন। তবে বেড রুমে যত কম আলোর বাতি রাখা যায়, ততই ভালো। বেড রুমে খুব বেশি উঁচু বাতি নেওয়া উচিত না, কারণ এতে বাতির পাওয়ার কম হলেও পুরো রুমে ছড়িয়ে যাবে। এছাড়া ছোট থেকে বড় ল্যাম্পশেড সাজিয়ে রাখা যেতে পারে ঘরের যেকোনো স্থানে। চাইলে কাগজের ল্যাম্পশেডও ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে ঘর হয়ে উঠবে নান্দনিক। খাবার ঘরকে আকর্ষণীয় করে তুলতে ডাইনিং টেবিলের পাশে রাখা যেতে পারে বিভিন্ন সবজি বা ফল আকারের ল্যাম্প শেড। আবার সিলিংয়ে ঝোলানো কিছু ল্যাম্প পাওয়া যায়। এই ল্যাম্পগুলোর সুবিধা হলো, প্রয়োজনে এটি টেনে অন্য স্থানে নেওয়া যায়। চাইলে কিন্তু ঘরের মেইন লাইটও বিভিন্ন রঙের হতে পারে। এতে করে আলাদা কোনো লাইট সেট করার প্রয়োজন পড়ে না। ঘর ছোট হলে হ্যাগিং লাইট বেছে নিতে হবে। এতে করে জায়গা অপচয় হবে না। অফ হোয়াইট দেয়াল হলে সেট করতে পারেন ওয়াল লাইট।
বই পড়ার স্থানে ওয়াল ব্রাকেট সেট করলে পড়ার সময় পর্যাপ্ত আলো পাওয়া যায়। মনে রাখতে হবে, যেকোনো লাইট বাছাই করার আগে অবশ্যই ঘরের আকৃতি ও ধরন মাথায় রাখতে হবে। অন্য কারো বাসায় কোনো লাইট দেখে ভালো লাগলেই তা সেট করা যাবে না। কারণ সব ধরনের লাইট আপনার ঘরের জন্য মানানসই হবে না। আর লাইট এমন স্থানে সেট করতে হবে যাতে লাইটের তার এবং সুইচ যাতে চোখে না পড়ে। এতে সৌন্দর্যে ব্যাঘাত ঘটবে। সুইচ শিশুদের নাগালের বাইরে রাখার চেষ্টা করতে হবে।
কোথায় পাবেন
যেকোনো শোপিসের দোকানে এখন লাইটিং পাওয়া যায়। এছাড়া বাহারি লাইট পাওয়া যেতে পারে গুলশানের লাইটিং ওয়ার্ল্ডে। এছাড়া বসুন্ধরা, পুরান ঢাকা, ধানমন্ডি, নিউ মার্কেটের বিভিন্ন দোকানে পাওয়া যাবে। কিছু ফ্যাশন হাউজ যেমন আড়ং ও অঞ্জনসে ল্যাম্প ও নানা রকমের লাইটিং পাওয়া যায়।
দরদাম
লাইটিংয়ের দাম নির্ভর করবে ডিজাইনের উপর। ক্রিস্টালের বিভিন্ন সাইজের ঝাড়বাতি বাজারে পাওয়া যায়, দাম ৩০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে। একটু বড় সাইজের ঝাড়বাতির দাম পড়বে ১ থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত। কাচের সঙ্গে কাঠ ও মেটালের সংযোজনে বিভিন্ন সাইজের ঝাড়বাতি পাবেন ১৫ হাজার থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামে।
লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: ইন্টেরিয়র