গ্রিন ফান্ড পাওয়ার পদ্ধতি সহজ করতে বাংলাদেশের চাপ দিতে হবে

আফরোজা আখতার পারভীন

প্রতিশ্রুতি পর ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও উন্নয়ন দেশগুলো গ্র্রিন ক্লাইমেট ফান্ডে ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়েছে। যদিও ২০২২ সালের মধ্যে এখানে ৩০০ বিলিয়ন ডলার জমা হওয়ার কথা। অর্থ প্রাপ্তিতে খুব বেশি অগ্রগতি হবে বলে আমার মনে হয় না। কিন্তু অর্থ পেলেও প্রকল্প জমা দিয়ে অর্থ পাওয়ার শর্ত খুব কঠিন। তা সহজ করা না হলেও বাংলাদেশগুলো সহ দেশগুলোর অর্থ পাওয়া সহজ হবে না। এটার জন্য চাপ তৈরী করতে হবে।

বিসিপিসিএল ইপি ক্লাইমেট টকসের ১১তম পর্বে আলোচনায় অংশ নিয়ে এমন মন্তব্য করেন প্রফেসর অ্যামিরাটস  ড. আইনুন নিশাত। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এনার্জি এন্ড পাওয়ারের এডিটর মোল্লাহ আমজাদ হোসেন।

তিনি আরও বলেন, পরিবেশ সম্মেলন কোন ফুটবল ম্যাচের মতো নয়, এটা কিন্তু ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। আলোচনায় যারা অংশ নেন তারা দু’টি ব্লকে ভাগ থাকেন। একটি থাকে গ্রিন জোন, এতে থাকে এনজিও এবং সিভিল সোসাইটির লোকজন। মিশরে যদি ৪০ হাজার লোক অংশ নেন এর মধ্যে ৩৫ হাজার এই জোনে। আর ব্লু জোনে থাকবে সরকারি কর্মকর্তারা যারা দরকষাকষি করবে। আর দুই-তিন হাজার সাংবাদিকের জন্য পৃথক এরিয়া।

৯০ সালের দিকে যখন সামান্য পরিমাণে উষ্নতা বেড়ে যায়। আইপিসিসি গঠন করা হয়। আইপিসিসি-৬ রিপোর্ট বের হয় নি, তারা একমত হতে পারছে না। পলিসি মেকারদের সামারি মার্চ এপ্রিলে বের হবে। অর্থাৎ এই মিটিংয়ে আগের ধারাবাহিকতায় আলোচনা হবে।

১৯৯০ সালে পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা বললেন, বিজ্ঞান নির্দিষ্টভাবে প্রমান করতে পারছে না, তারা বলছেন খুব সম্ভবত। তারা বলছে এখন থেকে প্রস্তুতি না নিলে ২০-২৫ বছর পর যখন গ্রিন হাউস গ্যাস আসবে, তখন আর ম্যানেজ করা কঠিন হবে। তখন ৭০ ভাগ গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ করে উন্নত দেশগুলো। তখন গ্রিন হাউস গ্যাস কমানোর কথা বলা হয়। উন্নত দেশগুলো তাদের দায়িত্ব নিয়ে নেয়। প্রধান অস্ত্র কার্বন নিঃসরণ কমানোর দায় বর্তালো ৩৭-৩৮টি উন্নত দেশের উপর।

২০০৭ সালে  বিজ্ঞানীরা বললেন, আজকে আমাদের সন্দেহ নেই, মানুষের কারণেই গ্যাস বাড়ছে, এ কারণে তাপমাত্রা বাড়ছে। এটা কোন কারণে ২-৩ ডিগ্রি বেড়ে গেলে মহাবিপদ। সাধারণ মানুষের কাছে ১-২ ডিগ্রি খুব একটা কিছু না হলেও গাছের কাছে, মাছের কাছে মারাত্বক প্রভাব ফেলে। ২০০৭ সালে বলা হলো সাধারণভাবে চলা হচ্ছে, এভাবে চললে হবে না, জোরালো কর্মসূচি নিতে হবে। তখন ৪টি বিষয় চুড়ান্ত করা হয়, এরমধ্যে ছিল প্রশমন, অভিযোজন, অর্থায়ন এবং ক্যাপাসিটি ব্লিডিং প্রযুক্তি হস্তান্তর। পরের সম্মেলনে এর সঙ্গে যুক্ত করা হয় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ও ট্রান্সপ্যারেন্সি মেকানিজম। ধারাবাহিকতায় যুক্ত করা হয়েছে লস এন্ড ড্যামেজের বিষয়টি।

আমার কাছে সরকার যদি একটি পরামর্শ চায় তাহলে ট্রান্সপ্যারেন্সি মেকানিজমের পরমার্শ দেবো। আমাদের দক্ষতা অর্জণ করতে হবে। বাংলাদেশ দাবী করছে লস এন্ড ড্যামেজের জন্য, অতিরিক্ত পয়সা দিতে হবে। আমার ভয় হচ্ছে এটা নাও হতে পারে। আলোচনা কিন্তু দেশগুলো করতে পারে না। দলগতভাবে হয়। ৪টি দল রয়েছে আমরা জি-৭৭ এর গ্রুপভুক্ত। লক্ষ্য রাখতে হবে অ্যাডাপটেশনের অর্থায়নের যাতে না কমে। না হলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো। লস এন্ড ড্যামেজের জন্য অতিরিক্ত অর্থ দিতে হবে। কাকে লস এন্ড ড্যামেজ বলবো, লস এন্ড ড্যামেজের সঙ্গা এখনও ঠিক হয় নি।

মিশর সম্মেলনে ৫টি প্রধান আলোচনা হবে। সবচেয়ে বড় আলোচনা হবে কপ ১৯৯২ চুক্তি বাস্তবায়ন, কিয়োটা প্রটোকল কতটা বাস্তবায়ন হলো। বাস্তবায়ন ও তদারক করে এসবিআই। বাংলাদেশের উচিত হবে এসবিআইতে জোরালো অবস্থান নেওয়া। মিটিগেশনের জোর দেওয়া উচিত। ২ ডিগ্রির উপর না যায়, দেড় ডিগ্রির জন্য আওয়াজ তুলতে হবে।

জলবায়ু তবহিলে ১০০বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ৭০ বিলিয়ন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অর্থ পাওয়ার জন্য শর্তগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। এখানে বিদেশি কনসালটেন্ট ছাড়া অর্থ পাওয়া যায় না। টাকা পাওয়ার ক্ষেত্রে যতো ধরণের জটিলতা বানানো যায় তারা চেষ্টা করছে ১৮টি শর্ত রয়েছে। বাংলাদেশের উচিত হবে নিয়মকানুন সহজ করার বিষয়ে চাপ দেওয়া। আমাদের দেশে আন্তমন্ত্রণালয়ের কোন যোগাযোগ নেই। অর্থ পাওয়ার জন্য যে প্রক্রিয়া সেখানে দক্ষতা অর্জণ করতে হবে।

তিনি বলেন, আমি একটি বিষয়ে খুবই আগ্রহী, আমি পানিকে আলোচনায় যুক্ত করতে চাই। কারণ মানুষ বাড়ছে, চাষাবাদ বাড়ছে কিন্তু পানি বাড়ছে না। এই প্রথমবার বিষয়টি আলোচনায় আলাদা করে রাখা হয়েছে। এখানে ভোটিং নেই ১৯৬ দেশকে একমত হতে হয়। আলোচনাটা জটিল এবং সকাল ১০টায় আলোচনা শুরু হয়েছে ভোর ৫টায়, কোপেনহেগেনে আমার অভিজ্ঞতা রয়েছে, তখন ৫-৭জন মন্ত্রী-সচিব ছিলেন। সকাল ৭টায় যখন মন্ত্রীর খোজ পড়লো  তিনি এসে বললেন, আপনি ঘুমাননি রুমে গিয়ে রেস্ট নেন।এনজিও পরিবেশবাদীরা কপে হৈচৈ করে। তাদের উচিত হবে নিজেদের দেশের উপর চাপ সৃষ্টি করা। অক্সফাম তাদের দেশের সরকারের উপর চাপ দিতে পারে।

তিনি বর্তমান সরকারকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, অতীতে বিদেশি এনে ডকুমেন্ট তৈরি করা হলে এবারই প্রথম এনডিসি এবং ন্যাপ ডকুমেন্ট নিজেদের লোক দিয়ে করেছে। প্রতি ৫ বছর পর ১০ বছরের প্রজেকশন দিয়ে রিভাইস করতে হবে। এই কাজটি যথাযথ ভাবে করতে হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

four × two =