গ্ল্যাডস্টোন সফরের তৃতীয় দিনটি ছিল বেদনা ও আনন্দে পরিপূর্ণ

বিশ্ব ঐতিহ্য মনোরম গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ অঞ্চলে অস্ট্রেলিয়ার অনুপম প্রাকৃতিক শোভামন্ডিত গ্ল্যাডস্টোন সফরের তৃতীয় দিনটি চেয়েছিলাম মেরিনা ওয়াটার পার্ক, রকহাম্পটন পরিদর্শন করতে। সকালে উপাদেয় ব্রেকফাস্ট করে সাঁতারের সরঞ্জাম নিয়ে পাহাড় চূড়ায় শহরের সবচেয়ে উঁচু  স্থান অকল্যান্ড হিল লুক আউটে গেলাম। অত্যন্ত চৌকষভাবে সাজানো স্থান থেকে প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে ফুটে থাকা ছোট ছোট অসংখ্য সবুজ দ্বীপ, দুটি কোল এক্সপোর্ট টার্মিনাল, তিন তিনটি এলএনজি প্লান্ট, অ্যালুমিনিয়াম ফ্যাক্টরি দেখা যায়।

শুভ্র জোহের, ফাতিমাকে নিয়ে ফিরে আসার পর বিকেলে কাছে কোথাও পার্ক অথবা লেকে সময় কাটানোর সিদ্ধান্ত নিলাম। বিকেলে পার্ক রিজ যাবার পথে সড়কের পাশে পেলাম টকটকে লাল রংয়ের পাকা আম শোভিত গাছের সারি। গাছগুলোতে থোকায় থোকায় ধরে থাকা আম তুলতে বারণ নেই। রোজী, সিম্পি, শুভ্র, ফাতিমা ও আমি মিলে এক ঘন্টায় গাছগুলো থেকে ৩০-৩৫ কেজি সুস্বাদু আম তুললাম। বাংলাদেশে ঝড়ের দিনে আম কুড়ানো অথবা কৈশোরে গাছ থেকে আম চুরি করার মধুর স্মৃতি সবার আছে। কি যে আনন্দ আম তোলায় তা সবাই জানে। বিকেলে ফিরে এসে তৃপ্তি সহকারে আম খেয়েছি।

আশে পাশে আছে খাদ্য গুদাম (ফুড গ্রেন সাইলো), পেট্রোলিয়াম প্রোডাক্ট স্টোরেজ। মৃদুমন্দ সুশীতল বাতাসে বসে সবাই চা, কফি, শীতল পানীয় উপভোগ করছিলো। জোহের, ফাতিমা ওয়াটার পার্কে যাওয়ার জন্য তাগাদা দিচ্ছিলো। আমার আর রোজীর কেন যেন অস্থির লাগছিলো। আমরা  গেস্ট হাউজে বিশ্রামের জন্য ফিরে এসেই খবর পেলাম ঢাকায় এভারকেয়ার হসপিটালে চিকিৎসারত বাংলাদেশের জনপ্রিয় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্তিকাল করেছেন।

বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় ১৯৯০-৯৫ এবং ২০০২-০৫ দুই দফা বাংলাদেশ জ্বালানি সেক্টরে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। অনেক অনেক স্মৃতি। রাজনীতি সচেতন মানুষ হিসাবে ভদ্র মহিলার সংগ্রামী জীবনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ আমাকে ব্যাথাতুর করলো। দিনের কাজ সংক্ষিপ্ত করলাম। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ঢাকার সংবাদে মরহুম খালেদা জিয়ার দেহবসান বিষয়ে বিস্তারিত জানলাম। নামাজ শেষে দোআ করলাম। বাংলাদেশের ক্রান্তিলগ্নে বেগম জিয়ার মৃত্যু দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে শূন্যতার সৃষ্টি করলো।

ইলেকট্রনিক মিডিয়ার খবরে শুনলাম বেগম জিয়ার সম্মানে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করবে বাংলাদেশ। বুধবার ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এই দিন জোহরের নামাজের পর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় মরহুমার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরের সন্নিহিত স্থানে তাঁকে দাফন করা হবে। মহান আল্লাহতালার কাছে নিবিড় প্রার্থনা আল্লাহ্তালা তাঁকে বেহেশত নসীব করুন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

thirteen + nineteen =