ঘরের মাঠে সিরিজ ধবল ধোলাই শঙ্কায় ভারত

ভারত দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে তৃতীয় দিন শেষে অতিথি দল দ্বিতীয় ইনিংসে সব উইকেট হাতে নিয়ে ৩১৪ রানে এগিয়ে আছে. দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসে সংগ্রহীত ৪৮৯ রানের জবাবে ২০১ করেই ভারতের ইনিংস সাঙ্গ হয়. রানের পাহাড় ভারত দলের উপর চাপিয়ে দিয়ে চতুর্থ এবং পঞ্চম দিনে ভারত বধ করার কৌশলে প্রোটিয়া অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়ে দিন শেষে বিনা উইকেটে করেছে ২৬. আজ হয়ত দ্রুত ব্যাটিং করে ৪৫০-৫০০ টার্গেট ছুড়ে দিবে ভারতকে।

পরিকল্পনা এবং কৌশলে ভারতকে বিপর্যস্ত করে টেস্ট চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকা চালকের ভূমিকায়। সবাই জানে অতিথি দল দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য স্পিন ফাঁদ পেতে নিজেরাই ধরা পরে কলকাতা ইডেন গার্ডেনসে টেস্ট হেরেছিল ভারত। আশা ছিল গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় টেস্টে ঘুরে দাঁড়িয়ে অন্তত সিরিজে সমতা আন্তে পারবে। সে গুড়ে বালি। শুরু থেকে শেষ অবদি চমৎকার দৃঢ়তার সঙ্গে ব্যাটিং করে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংসে ১৫১.১ ওভার খেলে ৪৮৯ রান সংগ্রহ করে।  দুইদিন মাঠে থেকে পরিশ্রান্ত ভারত ভারত দল বিশাল স্কোর করে টেস্টে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সৃষ্টি করবে সেই বাস্তবতা আর নেই. তদুপুরি প্রোটিয়া বোলার মার্কো জেনসেন (৬/৪৮)  আর সাইমন হারমার (৩/৬৪) বিচক্ষণতার সঙ্গে বোলিং করে ভারত ইনিংসে ধস নামায়।  ভারতের ইনিংস ২০১ শেষ হলে দক্ষিণ আফ্রিকা ফলো ওন আরোপ না করে নিজেরা ব্যাটিং করে দ্বিতীয় ইনিংসে বিনা উইকেটে ২৬ রান করায় চতুর্থ দিনের শুরুতে ৩১৪ রানে এগিয়ে আছে. চালকের ভূমিকায় থাকা প্রোটিয়া বাহিনী হয়তো ৪৫০-৫০০ রানের টার্গেট দিবে ভারতকে। চতুর্থ এবং পঞ্চম দিনে দক্ষিণ আফ্রিকার শক্তিশালী বোলিং মোকাবেলায় টিকে থেকে পরাজয় এড়ানোর মত সামর্থ বর্তমান ভারত দলে বাড়ন্ত।  আমি দেশের মাটিতে ভারতের আরো একটি ধবল ধোলাই কলংক তিলকের সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি। ইতিহাসে যাই থাকুক রোহিত ভিরাট অবসর নেয়ার পর এবং বিশেষত গৌতম গম্ভীরের বিতর্কিত ব্যাবস্থাপনায় ভারত এবারেও বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল খেলতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না.

ভারতকে ভাবা হত দেশের মাটিতে টেস্ট ক্রিকেটে অপরাজেয়।  ধীর ঘূর্ণি উইকেট বানিয়ে অতিথি দলকে বিপদে ফেলে টেস্ট জয় করা ভারতের রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল. কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তির যুগে ভারত সফরকারী দলগুলো  কৌশল এবং কুশলী খেলোয়াড় নিয়ে ভারতে খেলছে। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পূর্ববর্তী ভার্শনে নিউ জিলণ্ড ভারতকে ৩-০ ধবল ধোলাই করার পরেও শিক্ষা নেয় নি ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে এই সিরিজেও ভারতের ধবল ধোলাই হলে ভারতের পক্ষে এবারের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল খেলা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বলাই বাহুল্য।

এই টেস্টের কথাই বলি. দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসে ব্যাটসম্যানদের স্কোর দেখলেই প্রতীয়মান হবে টেম্বা বাভুমার নেতৃত্বে দলটি নিজেদের উজাড় করে খেলছে। ( মারকরাম ৩৮, রিকেলটন ৩৫,ত্রিস্তান স্তাব ৪৯, টেম্বা বাভুমা ৪১, টনি ডি জর্জি ২৮,শিমুরান মুথুসামি ১০৯, কাইল ভেরেনি ৪৫ , মার্কো জেনসেন ৯৩) . নিজেদের পরিচিত উইকেটে ভারতের পেস বা স্পিন বোলাররা প্রোটিয়ান ব্যাটসম্যানদের কুশলী বাটিংয়ের কাছে পর্যুদস্ত হয়েছে বলতেই হবে.

একই উইকেটে দ্বিতীয় দিন প্রোটিয়া বোলারেরা দুর্দান্ত বোলিং করেছে। ভারত ইনিংসে জয়সোয়াল (৫৮) এবং ওয়াশিংটন সুন্দর (৪৮) ছাড়া অন্য কেউ পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাটিং করতে পারে নি. ওয়াশিকে প্রথম টেস্টে টপ অর্ডারে খেলানো হলেও কাল নামানো হয় ৮ নম্বরে।  প্রশ্ন থাকবে কোন বিবেচনায় একজন অতিরিক্ত ব্যাটসম্যান না খেলিয়ে নীতিশ কুমার রেড্ডিকে দলে নেয়া হয়েছে।

যাক সেই সব আলোচনা। টেস্ট যেখানে স্থিত সেখান থেকে দৈব দুর্ঘটনা ছাড়া ভারতের টেস্ট পরাজয় এবং সিরিজে ধবল ধোলাই একমাত্র পরিণতি। এমনি পরিস্থিতিতে ভারতের ঘুরে দাঁড়ানোর নজির আছে. কিন্তু বর্তমান দলের সেই দক্ষতা বা যোগ্যতা আছে বলে মনে হয় না. তবুও যখন টেস্ট ক্রিকেট শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে. ভারতের উইকেটে ভারতের ব্যাটসম্যান এবং বোলারদের অতিথি দল থেকে শিক্ষা নিতে হচ্ছে এটাই বাস্তবতা।

ভারত -দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট সিরিজ

তৃতীয় দিনশেষে সংক্ষিপ্ত স্কোরকার্ড

দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংস ৪৮৯ অল আউট ( সিনুরান মুথুসামি ১০৯, মার্কো হ্যানসেন ৯৩, ত্রিস্তান স্টাব ৪৯, কাইল ভেরেনি ৪৫,টেম্বা বাভুমা ৪১, মারকরাম ৩৮, রিকেলটন ৩৫, কুলদীপ যাদব ৪/১১৫, জাসপ্রিত বুমরা ২/৭৫, জাদেজা ২/৯৪, সিরাজ ২/১০৬)

দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় ইনিংস ২৬/০

ভারত প্রথম ইনিংস ২০১ অল আউট ( যশোভি জায়েসওয়াল ৫৮, ওয়াশিংটন সুন্দর ৪৮, মার্কো জানসেন ৬/৪৮, সাইমন হারমার ৩/৬৪)

১০ উইকেট হাতে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ৩১৪ রানে এগিয়ে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

four − 2 =