ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট

সালেক সুফী: অনেক অপেক্ষা, আর ব্যার্থতার বৃত্তবন্ধী বাংলাদেশ ক্রিকেট ঘুরে দাঁড়াচ্ছে ধীরে ধীরে। সম্প্রতি ২০২২ নিউ জিল্যান্ড সফরে বাংলাদেশ টেস্ট দলের ঐতিহাসিক টেস্ট জয় এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় পুরো শক্তির প্রোটিয়া দলের বিরুদ্ধে ওডিআই সিরিজ দাপুটে জয় ক্রিকেটের ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত বহন করে।  কাল থেকে শুরু হবে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। উজ্জীবিত বাংলাদেশ খেলবে আইপিএল ২০২২ খেলতে যাওয়া শীর্ষস্থানীয় কিছু ক্রিকেটার ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা দলের বিরুদ্ধে। কিন্তু ক্রিকেটের দুর্গম দুর্গে আরো একটি টেস্ট জয় বা সিরিজ জয় বাংলাদেশ ক্রিকেটকে অনেক আগুয়ান করবে। বাংলাদেশ দলের ঘুরে দাঁড়ানোর রসায়ন নিয়ে আলোচনা করবো।

করোনা অতিমারীর অভিঘাতে বিপর্যস্ত সময় পেরিয়ে ২০২১ সালে পুরো সময়টা বাংলাদেশ ক্রিকেট সব ফরম্যাটে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খাবি খেয়েছে। এটা বলবো না, করোনার আগেও বাংলাদেশ ক্রিকেট সাফল্যের ধারায় ধারাবাহিক ছিল।  ওডিআই ফরম্যাটে বেশ কিছু সাফল্য আসলেও টেস্ট ক্রিকেটে এবং টি২০ ফরম্যাটে বাংলাদেশ দলের পারফরমেন্স ছিল নিতান্তই সাদামাটা।  যৌক্তিক কারণেই দেশীয় অবকাঠামো ( উইকেট, মাঠ, টুর্নামেন্টের মান, অনুশীলন সুবিধা), নির্বাচন কৌশল, খেলোয়াড়দের সঙ্গে খেলোয়াড়দের রসায়ন, আম্পয়ারিং, পাতানো খেলা;  বিবিধ উপসর্গ ২০ বছরের অধিক সময়ে ধারাবাহিকতা অর্জন না হওয়ার কারণ হিসাবে বিবেচিত হয়েছে।

সারা দেশে ক্রিকেটের ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ছাপিয়ে অন্যান্য স্থানে ক্রিকেট প্রসারিত না করার কারণেও জাতীয় পর্যায়ে পর্যাপ্তসংখ্যক মানসস্পন্ন বিকল্প খেলোয়াড় উঠে আসছিলো না। তাই ভালো খেলে ধারবাহিক ভাবে বাংলাদেশকে সেবা দিয়ে চলছিলেন মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ।  বলবো না ওদের সম্মিলিত ভাবে পঞ্চপাণ্ডব বলা যথার্থ ছিল কিনা। যাহোক মাশরাফির আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সময় হয়তো শেষ। রিয়াদ টেস্ট খেলা থেকে স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়িয়েছেন। বাকি তিন জন হয়তো থাকবেন বড়োজোর ৩-৪ বছর। শুভ লক্ষণ মোমিনুল, লিটন, শান্ত, মিরাজ, তাসকিন, মুস্তাফিজ, শরীফুল, এবাদত, আফিফ আস্থার প্রতিদান দিতে শুরু করেছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশে এবং দেশের বাইরে বাংলাদেশের জয়ের ধারা সৃষ্টি হবে। তখন শুধু অনিয়মিত ভাবে শুধু ওডিআই ফরম্যাটে নয় টেস্ট এবং টি২০ ফরম্যাটেও জয়ের ধারা ধারাবাহিক হবে।

সেই নির্বাচক মণ্ডলী, কিছুটা পরিবর্তিত টিম ম্যানেজমেন্ট থাকার পরেও নিউ জিল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় জয়ের মূল কারণ প্রতিষ্ঠিতদের পাশাপাশি তরুণ উদীয়মান খেলোয়াড়দের আস্থার প্রতীক হয়ে ওঠা। অপেক্ষাকৃত উন্নত উইকেটে দেশীয় ক্রিকেট, তাসকিন, এবাদত, মুস্তাফিজ, শরিফুল মাধ্যমে গড়ে উঠা পেস বোলিং আক্রমণ ম্যাচ জয়ী হতে থাকা।  লিটনকে নিয়ে দলের প্রত্যাশার প্রতিদান দিতে শুরু করায়, আফিফ, মিরাজ, ইয়াসির ভয়হীন ব্যাটিং করে কিছুটা বিবর্ণ থাকা মুশফিকের কারণেও দল রান পাচ্ছে। তরুণরা উঠে আশায় তামিম, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদুল্লার উপর চাপ পড়তে শুরু করছে। আমি মনে করি দলের স্বার্থে এটি শুভ লক্ষণ। এই ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ আর শুধু দেশের মাটিতে স্পিন নির্ভর দল থাকবে না, সফরেও নিয়মিত জয় পেতে শুরু করবে। ম্যাচ জয়ী পেস বোলারদের ক্রম উন্নয়নের পাশাপাশি যদি ২-৩ জন ভালো মানের লেগ স্পিন বলার খুঁজে পাওয়া যেত তাহলে হতো সর্বোত্তম।

আমি রাসেল ডোমিঙ্গকে নিয়ে কিছু বলবো না। পেস বোলারদের সূর্যোদয়ের সময়ে অ্যালেন ডোনাল্ডকে পাওয়া বিশেষ অর্জন বলবো। স্পিন কোচ হিসাবে রঙ্গনা হেরাথ, ব্যাটিং কোচ হিসাবে জেমি সিডন্স সম্মিলিত ভাবে দলের উন্নয়নে যথার্থ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি। সুজনকে নিয়ে অনেক বিতর্ক থাকলেও খেলোয়াড় বান্ধব সুজনকে টিমের পরিচালক বানানোর সুফল মিলছে। সব চেয়ে শুভ লক্ষণ নতুন খেলোয়াড়দের ম্যাচ জয়ী ভূমিকা। অনেক পরিশ্রম করে তাসকিন নিজেকে বিশ্বমানে উত্তরণের শুভ লক্ষণ দেখাচ্ছে। লিটনের ব্যাটিং বিশারদের মন জয় করেছে। অনন্ত দুটি বিশ্বমানের পার্টনারশিপ দিয়ে আফিফ, মিরাজ নিজেদের জাত চিনিয়েছে। আমি মনে করি ছন্দ পতন না হলে ২০২২ বাংলাদেশের ক্রিকেটে অনেক অর্জনের বছর হবে। আশা করি দলের সাফল্যের মতো ব্যর্থতার দায় ভার মেনে নেয়ার মানসিকতা সৃষ্টি হবে বিসিবি কর্মকর্তাদের।

খেলাটা খেলবে কিন্তু খেলোয়াড়রা।  সেখানে সবার সঙ্গে সমান আচরণ করাও জরুরি।ফর্ম, ফিটনেস এবং ফরম্যাটের বিবেচনায় কাল থেকে শুরু হতে যাওয়া  ডারবান টেস্টের  জন্য আমি নিম্নবর্ণিত দল সুপারিশ করবো: তামিম ইকবাল, মাহমুদুল হাসান জয়, নাজমুল হোসেন শান্ত, মোমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, ইয়াসির আলী রাব্বি,  মেহেদী মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, এবাদত হোসেন।

ডারবান উইকেটে থাকবে। প্রথম দুই দিন বাউন্স,  পেস থাকবে। শেষ দিকে স্পিন সহায়ক হওয়ার কথা। কিন্তু স্থানীয় দলের শক্তি বিবেচনা করে ব্যাটিং সহায়ক ফ্লাট উইকেট হবার স্বভাবনাও রয়েছে। যা হোক উদয়ের পথে আমি বাংলাদেশকে সিরিজ জয়ের জন্য এগিয়ে রাখছি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

two × one =