ঢাকাই সিনেমার আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনি। তবে অভিনয়ের কারণে নয়, তিনি আলোচিত কিছু বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে। অভিষেকে একসঙ্গে দুই ডজনের মতো সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। ওটুকুই সই। অভিনয় দিয়ে সেভাবে সাড়া ফেলতে পারেননি এই নায়িকা। বরং বারবার হয়েছেন বিতর্কিত।
কিন্তু কীভাবে পরীমনি নায়িকা হয়ে উঠলেন? ছোটবেলা থেকে শুরু করে মিডিয়ায় প্রবেশ পর্যন্ত পর পর সেই গল্পগুলো সাজালে তা দিয়ে অনায়াসে একটা সিনেমা বানিয়ে ফেলা যাবে।
১৯৯২ সালের ২৪ অক্টোবর পরীমনির জন্ম হয়েছিল সাতক্ষীরায়। আজ (বৃহস্পতিবার) তার জন্মদিন। চলচ্চিত্র জগতে তিনি পরীমনি নামে পরিচিত হলেও তার জন্মনাম শামসুন্নাহার স্মৃতি। ছোট্ট পরীমনিকে নিয়ে বাবা মনিরুল ইসলাম ও মা সালমা সুলতানার ছিল সুখের সংসার। কিন্তু সেই সুখ বেশি দিন সয়নি পরীমনির কপালে।
নায়িকার বয়স যখন মাত্র তিন বছর, তখন তার মায়ের মৃত্যু হয়। আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলেন সালমা সুলতানা। সে সময় মা-হারা পরীমনিকে বাবা মনিরুল ইসলাম রেখে আসেন তার নানাবাড়ি পিরোজপুরে। সেখানে নানা শামসুল হক গাজীর তত্ত্বাবধানে ছোটবেলা কাটে অভিনেত্রীর।
নানাবাড়িতে থেকেই পরীমনি মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ২০১১ সালে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে বাংলা বিভাগে বিএ (সম্মান) পড়াকালীন তিনি চলে আসেন ঢাকায়। নাচ শিখতে শুরু করেন বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে (বাফা)।
সে সময় পরীমনি তার বাবাকে নিয়ে সাভারের ব্যাংক টাউনে বাসা ভাড়া করে থাকতেন। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর একমাত্র সন্তান পরীমনির কথা ভেবেই আর বিয়ে করেননি তার বাবা মনিরুল ইসলাম।
কিন্তু ২০১২ সালে বাবার ভালোবাসাও হারাতে হয় পরীমনিকে। ওই বছরের ২১ জানুয়ারি সিলেটে তার বাবা মনিরুল ইসলামের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়। তিনি রিকন্ডিশন গাড়ির ব্যবসা চালাতেন। গুঞ্জন আছে, সেই ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের কারণেই প্রতিপক্ষের হাতে খুন হন পরীমনির বাবা মনিরুল ইসলাম। যদিও সেই হত্যা-রহস্য আজও উদঘাটিত হয়নি।
বাবার মৃত্যুর পর সম্পূর্ণ একা হয়ে পড়েন পরীমনি। এরপর নায়িকা সাভারে তার এক খালার বাসায় থাকতে শুরু করেন এবং মিডিয়ায় কাজের চেষ্টা চালান। সেই চেষ্টার প্রথম সাফল্য হিসেবে ২০১৪ সালে তিনি একটি নাটকে অভিনয়ের সুযোগ পান, যেটি সে সময় এসএ টিভিতে প্রচার হয়।
এর পরের বছর থেকে শুরু হয় পরীমনির চলচ্চিত্রে যাত্রা। ২০১৫ সালে ‘ভালোবাসা সীমাহীন’ সিনেমাটির মাধ্যমে তার চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়। সে সময় একসঙ্গে দুই ডজনের মতো সিনেমায় চুক্তি করে তিনি সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। কিন্তু তার চুক্তিবদ্ধ হওয়া অধিকাংশ সিনেমাই নির্মিত হয়নি। কয়েকটি আবার নির্মাণের পর মুক্তির আলো দেখেনি।
এ পর্যন্ত পরীমনি অভিনীত দুই ডজন সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। সেগুলোর মধ্যে ‘স্বপ্নজাল’ আর ‘বিশ্বসুন্দরী’ ছাড়া একটিও দর্শকপ্রিয়তা পায়নি। সবশেষ ‘ডোডোর গল্প’ নামে একটি সিনেমার শুটিং করেছেন পরীমনি। সেখানে তাকে একজন সংগ্রামী মায়ের ভূমিকায় দেখা যাবে।
এদিকে, মা-বাবা হারিয়ে, সাতক্ষীরা থেকে পিরোজপুর-সাভার হয়ে পরীমনির বর্তমান ঠিকানা এখন ঢাকার অন্যতম অভিজাত এলাকা বসুন্ধরা। সেখানে বিলাসবহুল এক ফ্ল্যাটে দুই সন্তানকে নিয়ে থাকেন নায়িকা।
বছর খানেক আগে অবশ্য আরও একজন ছিলেন পরীমনির এই বাসায়। তিনি হলেন নায়িকার চতুর্থ স্বামী অভিনেতা শরীফুল ইসলাম রাজ। কিন্তু দাম্পত্য কলহের জেরে গত বছরের মার্চে পরীমনির বাসা ছেড়ে বেরিয়ে যান রাজ। এই যাওয়াই শেষ। কারণ, এর কিছুদিন পরই ডিভোর্স হয়ে যায় রাজ ও পরীমনির।