জনপ্রিয়তা বাড়ছে স্নিকার্সের

নাহিন আশরাফ

একসময় জুতা ছিল মানুষের শুধুই প্রয়োজনীয় পণ্য। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরেই তা ফ্যাশনের প্রধান অনুষঙ্গ। হঠাৎ করে তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে স্নিকার্স। স্নিকার্সের ব্যবহার প্রথম দেখা যায় খেলার মাঠে। যারা খেলাধুলার সাথে জড়িত ছিল, শুধুমাত্র তাদের স্নিকার্স ব্যবহার করতে দেখা যেত। কিন্তু স্নিকার্স এখন শুধু খেলাধুলার মধ্যে আবদ্ধ নেই, সব ধরনের আউটফিটের সাথে নারী-পুরুষ সবাই এটি পরে থাকে।

স্নিকার্সের উপরের অংশ সাধারণত কাপড় দিয়ে তৈরি হয় আর নিচের অংশ রাবারের হয়ে থাকে। ঢাকার রাস্তায় চলাচলের জন্য স্নিকার্স বেশ আরামদায়ক। দেখা যায়, আমাদের কখনো দৌড়ে বাস ধরতে হচ্ছে কিংবা কখনো কাদাযুক্ত রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে হচ্ছে। আগে স্নিকার্স ব্যবহার তেমন জনপ্রিয় ছিল না, এটিকে বিলাসিতাই মনে করতে অনেকে। কিন্তু স্নিকার্স এখন তরুণদের কাছে প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। নানা কাজে তাদের ছুটে বেড়াতে হয়। তাই কমবেশি সবাই স্নিকার্স বেছে নিচ্ছে। এটি ফরমাল বা ক্যাজুয়াল লুকের সাথে দারুণ মানিয়ে যাচ্ছে। আরামের পাশাপাশি স্নিকার্স ফ্যাশনেবলও।

প্লিমসল স্নিকার্স

এটি বেশ জনপ্রিয় একটি স্নিকার্স। প্লিমসল স্নিকার্সের উৎপত্তি ১৮৭০ দশকে ইউরোপে। এটি দেখতে অনেকটা জাহাজের লাইনের মতো। প্রথম দিকে ইউরোপে প্লিমসল স্নিকার্স শুধু বিদ্যালয়ে বাচ্চারা শারিরীক শিক্ষা ক্লাস কিংবা ব্যায়াম করার জন্য ব্যবহার করতো। অনেকে তখন এটিকে জিমের জুতা হিসেবেও চিনতো। প্লিমসল পরতে ও খুলতে বেশ সুবিধা। কারণ এতে ফিতার ব্যবহার খুব কম করা হয়। কিছু ডিজাইনে যদিও ফিতা থাকে। পানি শুষে নেওয়ার ক্ষমতা থাকায় বর্ষাকালেও স্নিকার্স ব্যবহার উপযোগী। ভালো ব্র্যান্ডের স্নিকার্স সাধারণত তুলা ও পশুর চামড়া দিয়ে তৈরি করা হয়। যেকোনো আউটফিটের সাথে বেছে নিতে পারেন প্লিমসল স্নিকার্স।

স্লিপ অন স্নিকার্স

স্লিপ অন স্নিকার্সে কোনো লেইস থাকে না। অন্যান্য স্নিকার্সের চেয়ে এটি খোলা ও পরা তুলনামূলকভাবে সহজ। স্লিপ অন স্নিকার্সকে অনেকে লোফারও বলে থাকে। লোফারের মতো দেখতে হয় বলে এটি ফরমাল বা ক্যাজুয়াল যেকোনো লুকের সাথেই পরা যায়। এই স্টাইলের স্নিকার্স পুরুষরা বেশি পরে থাকে। নিত্যদিনের ব্যবহারের জন্য এটি উপযোগী। অফিস কিংবা নিমন্ত্রণ যেকোনো আয়োজনে বেছে নেওয়া যেতে পারে। ভ্রমণের জন্যও অনেকে স্লিপ অন স্নিকার্স পরছে। এটি জনপ্রিয় হওয়ার কারণ হচ্ছে এটি বেশ হালকা ওজনের। পরার পর মনে হবে পায়ে তেমন কিছুই নেই। ভারী ওজনের স্নিকার্স অস্বস্তির কারণ হতে পারে। পায়ে চুলকানিও অনুভূত হতে পারে।

অ্যাথলেটিক স্নিকার্স

নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে এটি খেলাধুলার সাথে সম্পর্কিত। এছাড়া এটি ব্যায়াম, নাচ ইত্যাদি শারীরিক পরিশ্রম প্রয়োজন এমন কাজের সময় পরা হয়। অনেকে পাহাড়ে উঠে থাকেন, তাদেরও প্রথম পছন্দ অ্যাথলেটিক স্নিকার্স। অ্যাথলেটিক স্নিকার্সকে অনেকে অ্যাথলেটিক জুতা হিসেবেও চিনেন। ওজন কমানো, ডায়বেটিসসহ নানা ধরনের শারীরিক জটিলতার জন্য অনেকের রোজ হাঁটা কিংবা ব্যায়াম করার প্রয়োজন হয়। তারা বেছে নিতে পারেন অ্যাথলেটিক স্নিকার্স। তবে কেনার সময় অবশ্যই দেখে নিতে হবে ওজনে হালকা কি না। কারণ ভারী ওজনের হলে ব্যায়াম করতে অসুবিধার মধ্যে পড়তে হবে। অ্যাথলেটিক স্নিকার্সের সাথে অবশ্যই মোজা পরতে হবে, তা না হলে শারীরিক পরিশ্রমের ফলে পা ঘেমে দুর্গন্ধ হতে পারে।

কনভার্স স্নিকার্স

কনভার্স স্নিকার্স সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়েছিল বাস্কেট বল খেলার জন্য। কিন্তু এখন এটি ক্যাজুয়াল আউটফিটের সাথেও পরা হয়। তবে বলে রাখা ভালো কনভার্স ফরমাল লুকের সাথে একদম মানানসই না। তাই ফরমাল পোশাকের ক্ষেত্রে কনভার্স স্নিকার্স এড়িয়ে যাওয়া উচিত। তবে টি-শার্ট, জিন্সের প্যান্ট, ক্যাজুয়াল শার্ট এসবের ক্ষেত্রে কনভার্স স্নিকার্স বেশ মানিয়ে যায়। স্কুল কলেজের ইউনিফর্মের সাথে কনভার্স স্নিকার্স পরতে দেখা যায়। এখানে বেশ কয়েকটি ফিতার ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। গোড়ালির নিচ পর্যন্ত রেগুলার স্নিকার্সের বদলে বেছে নিন গোড়ালি বরাবর ঢাকা জুতা। তাই ক্যাজুয়াল কোনো আউটফিটের সাথে নির্দ্বিধায় বেছে নেওয়া যেতে পারে ভিন্নধর্মী কনভার্স স্নিকার্স।

সুপারস্টার স্নিকার্স

এটিও মূলত খেলাধুলার জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক নামি দামি ব্র্যান্ড সুপারস্টার স্নিকার্স তৈরি করে থাকে।

হ্যান্ডপেইন্ট স্নিকার্স

দেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে হ্যান্ডপেইন্ট স্নিকার্স। এক্ষেত্রে যেকোনো একরঙা স্নিকার্সের উপর রং-তুলির মাধ্যমে বিভিন্ন নকশা করা হয়। কখনো ফুল, কখনো কারো নাম কিংবা বিখ্যাত রিকশা প্রিন্ট। এই স্নিকার্সগুলোর মাধ্যমে শিল্প ও বাঙালিয়ানা ফুটিয়ে তোলা হয়। তবে পাকা হাতে পেইন্ট না করা হলে এর সৌন্দর্য নষ্ট হতে পারে। রং-তুলি মাধ্যমে করা হয় বলে ঠিক মতো রং না বসলে উঠে যাওয়ার আশঙ্কা থাকতে পারে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী প্রীতম হাসান কোক স্টুডিওর মঞ্চে পারফর্ম করার সময় হ্যান্ডপেইন্ট স্নিকার্স পরার পর এটি আরো বেশি জনপ্রিয় হয়ে যায়।

নারীদের স্নিকার্স

একটা সময় স্নিকার্স শুধু পুরুষরা পরিধান করতো। কিন্তু সময় পাল্টেছে। তাই পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের জন্যও আলাদা নকশা ও রঙের স্নিকার্স বাজারে এসেছে। পুরুষদের থেকে কোনো অংশেই আর পিছিয়ে নেই নারীরা। নারীরা এখন খেলাধুলা করছে, সবধরনের শারীরিক কাজেও অংশগ্রহণ করছে; তাই তাদেরও স্নিকার্স পরতে দেখা যাচ্ছে। এখন নারীরা শাড়ির সাথেও স্নিকার্স পরছে। এটি এখন একপ্রকার ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। এতে যেমন আসে ভিন্নধর্মী লুক তেমনি পরতে আরামদায়ক। এমনিতেই অনেক নারী শাড়ি সামলাতে হিমশিম খায়, তার মধ্যে যদি তাকে জুতা নিয়েও বাড়তি চিন্তা করতে হয় তাহলে তো মুশকিল; তাই নারীরা শাড়ির সাথে স্নিকার্স বেছে নিচ্ছে।

স্নিকার্সের যত্ন

খুব শখ করে দাম দিয়ে ভালো একটি স্নিকার্স কিনলেন। তো এখন স্নিকার্সের বাড়তি যত্ন করতে হবে। নাহলে খুব সহজেই এটি নষ্ট হয়ে যাবে। রাস্তার ধুলাবালি থেকে স্নিকার্স রক্ষা করতে হলে ক্লিনজিং জেল ব্যবহার করতে পারেন। ক্লিনজিং জেল খুব সহজেই স্নিকার্স পরিষ্কার করে। তবে ক্লিনজিং জেল অতিরিক্ত ব্যবহার করলেও কিন্তু স্নিকার্স নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই বুঝেশুনে ব্যবহার করুন। তবে পছন্দের স্নিকার্সটি নতুনের মতো রাখতে চাইলে রোজ না পরাই ভালো। শুধু বাইরে না ঘরের মধ্যেও দিনের পর দিন জুতা রাখা থাকলেও তাতে ধুলা জমে রং নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই ঘরে জুতা রাখলে কাপড় বা শু কভার দিয়ে স্নিকার্সটি ঢেকে রাখুন। মাঝে মাঝে স্নিকার্সটি বারান্দায় নিয়ে রোদে রাখতে পারেন, এতে ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হবে। সঠিকভাবে যত্ন না নিলে স্নিকার্স নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি আপনার পায়েরও অনেক ক্ষতি করতে পারে। তাই স্নিকার্সের যত্ন নিতে আপস করা যাবে না।

কোথায় পাবেন

আপনার ঘরের কাছে যেকোনো জুতার দোকানেই নানা ডিজাইনের স্নিকার্স পাওয়া যাবে খুব সহজেই। একটা সময় শুধু সাদা ও কালো স্নিকার্স পাওয়া গেলেও এখন পাওয়া যাচ্ছে প্রায় সব ধরনের রঙে। এপেক্স, বাটাসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দোকানে স্নিকার্স পাওয়া যায়। বসুন্ধরা সিটির বিভিন্ন জুতার দোকানেও রয়েছে বাহারি স্নিকার্সের কালেকশন। ব্র্যান্ড ও ডিজাইনের উপর নির্ভর করে দাম পড়বে ১৫০০ থেকে ৫০০০ টাকার মধ্যে। তাছাড়া বিভিন্ন অনলাইন পেইজেও স্নিকার্স পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে রং কাস্টমাইজড করে নেওয়া যায়। স্নিকার্স কেনার ক্ষেত্রে ডিজাইনের আগে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া উচিত জুতাটি পরে আরাম লাগছে কি না। কারণ সারাদিন পরে থাকা জুতা যদি আরামদায়ক না হয় তবে পুরো টাকাই যেন পানিতে পড়লো।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: বিচিত্র

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

5 × 1 =