জামতলার রসগোল্লা

মাসুম আওয়াল

জামতলাতে জাম পাওয়া যায় সবার আছে জানা,

খোকা খুকি জাম খেয়ে হয় খুশিতে আটখানা।

কিন্তু এ কোন জামতলা ভাই রসগোল্লা মেলে,

কে তুমি ভাই মিষ্টি খেতে জামতলাতে এলে?

এই এখানে জামের গাছে মিষ্টি ধরে নাকি!

ঠোকর মেরে মিষ্টি কী খায় রঙিন কোনো পাখি?

জাদুতে গড়া মিষ্টি নাকি খুব শুনি নাম ডাক,

জামতলার এই মিষ্টি নিয়েই কথা বলা যাক।

করম আলী হাজির হলো জামতলাতে ওই,

জামতলাতে জাম গাছই নেই খুব আছে হই চই।

বাংলাদেশের যশোর জেলার জামতলা এক বাজার,

এই এখানেই মিষ্টি সেরা, বলবো কী ভাই আজ আর।

শুনছো আমার কথা তুমি কী যেন কী বললা,

এই মিষ্টির আরেকটা নাম সাদেক রসগোল্লা।

আসল কথা শোনার আগে বুক ভরে নাও শ্বাস

হচ্ছে শুরু জামতলার এই মিষ্টির ইতিহাস।

এই তো সেদিন ঊনিশ শতো পঞ্চান্ন সালে,

লাগলো হাওয়া সাদেক আলীর জীবন নায়ের পালে।

সাদেক আলী নামে ছিলো এক যে দোকানদার,

যশোর জেলার জামতলাতে দোকান ছিলো তার।

চায়ের দোকন, দোকানটা তার জমে ছিলো ভালো,

চা বিক্রি করেই ছিলো জীবন ভরা আলো।

তার স্টলে চা পান করতে আসতো অনেক জন,

সাদের আলীর হাতের চায়ে ফুরফুরে হয় মন।

তার দোকানের দুধ চা ছিলো ভীষণ জনপ্রিয়,

সবাই খেতো মজা করে স্বাদ যেন অমিয়।

গোয়ালরা দোকানে দুধ দিয়ে যেত রোজ,

জ্বাল করা দুধ মিশিয়ে চায়ে চলতো ভুরি ভোজ।

ভাগ্যে লেখা থাকলে সবই এই কপালে জোটে,

অন্যরকম ঘটনাটা একদিন যায় ঘটে।

অনেক অনেক দুধ নিয়ে এক গোয়ালা সেই দিন,

বললো এসে খুব ভালো দুধ সবটা কিনে নিন।

চা বানাতে এতো দুধের হয় না প্রয়োজন,

বললো সাদেক নেবো না ভাই থামাও জ্বালাতন।

এমন সময় কুমিল্লার এক ব্যক্তি আসে পাশে,

সাদেক আলীর দিকে চেয়ে মিটমিটিয়ে হাসে।

লোকটা বলে নাও কিনে সব দুধগুলো বেশ আছে,

লাভ হবে বেশ, তেমন উপায় আছে আমার কাছে।

এ দুধ থেকে রসগোল্লা বানিয়ে দেবো রাতে,

বিক্রি হবে আগামী কাল মিলবে টাকা হাতে।

সেই লোকেরই কথা শুনে সাদেক হলো রাজি,

অনেক অনেক দুধ কিনে সে ধরলো টাকা বাজি।

যেই কথা সেই কাজ সে দুধে তৈরি হলো ছানা,

ছানা থেকে মিষ্টি হলো এইখানে শেষ না না।

পরের দিন এ রসগোল্লা খেলো যারা যারা,

চা দোকানের মিষ্টি খেয়ে চমকে গেলো তারা।

কুমিল্লার সে লোকের কাছে মিষ্টি গড়া শিখে,

সাদেক আলীর রসগোল্লার সুনাম দিকে দিকে।

জামতলাতে সাদেক গোল্লা এক নামে সব চেনে,

মিষ্টির স্বাদ ও গুণের জন্য সবাই এটা কেনে।

হ্যাঁ, জামতলার মিষ্টি নামেই পরিচিত দেশে,

খাবে নাকি রসগোল্লা জামতলাতে এসে।

ঊনিশশো পঞ্চান্ন থেকে আজও আছে টিকে,

দিন যতো যায় ততই সুনাম ছড়ায় দিকে দিকে।

দেশ-বিদেশে আজও সেরা জনপ্রিয়তায়,

সাদেক আলীর রসগোল্লা যে চেনে সে খায়।

যশোর জেলার শার্শা উপজেলায় চলে যাবে,

নাভারন-সাতক্ষীরা সড়ক, তারই পাশে পাবে।

ঊনিশ শত নিরানব্বই সাদেক গেলেন চলে,

সে তো স্মৃতি তার কথা আজ যাচ্ছি ছড়ায় বলে।

সাদেক আলীর ছয়টা ছেলে এখন কর্ম করে,

আছেন তারা বাবার প্রিয় ব্যবসা আঁকড়ে ধরে।

এখনো রোজ দেড়-দু’হাজার গোল্লা তৈরি হয়,

খবর নিও যা বলেছি গল্প মোটেও নয়।

নূরুজ্জামান, আনোয়ার, শাহজাহান, জাহাঙ্গীর,

বাকি দুভাই শাহিনুর ও হোসেন আলমগীর।

তিন তিনটি দোকান তাদের সবই জমজমাট

জানা হলো নিতে গিয়ে এই মিষ্টির পাঠ।

জামতলাতে বাসস্ট্যান্ডের বটতলাটার কাছে

আদি ‘সাদেক মিষ্টান্ন ভাণ্ডার’ আজও আছে।

রসগোল্লা ছাড়াও মেলে সব ধরনের মিষ্টি,

ইষ্টিকুটুম ইষ্টি রে ভাই ইষ্টিকুটুম ইষ্টি।

বিশেষ অনুষ্ঠানে যেমন বিয়ে, জন্মদিনে,

আপ্যায়নে খাওয়ানো হয় এই মিষ্টি কিনে।

ছন্দে ছন্দে হয়ে গেলো অনেক কথা মিঠা,

শুনবে নাকি সাদেক গোল্লার মজার রেসিপিটা।

মিষ্টি গড়তে দেশি গরুর দুধের ছানা লাগে,

চিনির দ্রবণ খুব প্রয়োজন জানতে তুমি আগে?

জ্বালানিতে তেঁতুল, বাবলা, বেল কাঠ হয় দেওয়া,

মজার এসব তথ্যগুলো ভালো জেনে নেওয়া।

এই যে দেখো দেড় কেজি দুধ হাঁড়িটাতে নিয়ে,

দিয়েছি খুব যত্ন করে চুলাতে চড়িয়ে।

দুধের ভেতর ঘি অথবা বাটার দিতো পারো,

ছানাটা বেশ ভালো হবে নরম হবে আরও।

ঘি ও বাটার না দাও যদি তাতেও ক্ষতি নেই,

দুধে বলক উঠছে কি না তা হবে দেখতেই।

বলক ওঠা মাত্র চুলা বন্ধ করে দাও,

এবার দ্রুত হাতের কাছে হাফ কাপ পানি নাও।

টেবিল চামচের দু’চামচ দাও ভিনেগার তাতে,

ছানা কাটার পানি তৈরি হবে হাতে নাতে।

ভিনেগার মেশানো পানি দুধে দিয়ে নাড়ো,

ছানা হয়ে গেলে এবার দুধ নাড়ানো ছাড়ো।

ছানাগুলো কাপড়ে নাও একটু খানি ধুয়ে,

পানি ঝরাও ঘণ্টা খানেক দাও রেখে ঝুলিয়ে।

পানিগুলো ঝরে গেলে ছানা পাত্রে নাও,

ভালো করে ময়ান করো একটু সুজি দাও।

ছানা ময়ান হয়ে গেলে তৈরি করো মিষ্টি,

ছানা থেকে মিষ্টি হবে পনেরো বা বিশটি।

এবার চুলায় চিনির সিরা তৈরি করে নাও,

দেড় কেজি পানিতে চিনি সাতশতো গ্রাম দাও।

চিনির সিরা ফুটবে যখন মিষ্টি তাতে ছাড়ো,

ভাসবে তোমার মিষ্টিগুলো লাগবে ভালো আরও।

সময় নিয়ে অল্প আঁচে করতে থাকো জ্বাল,

মিষ্টিগুলো সাদা চাইছো? নাকি চাইছো লাল।

পাঁচ মিনিট জ্বাল করার পরে মিষ্টি নেড়ে দাও,

ঢাকনা দিয়ে ঢেকে কুড়ি মিনিট সময় নাও।

চুলা বন্ধ করে সেটা তিন ঘণ্টা রাখো,

মিষ্টি ঠান্ডা হলো মজা করো খেতে থাকো।

আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা জ্বাল করলে তবে,

চোখ জুড়াবে মিষ্টিগুলোর রঙ লালচে হবে।

সিরা কমে গেলেই এক কাপ গরম পানি দেবে,

জ্বাল চলবে যতক্ষণ তা লাল রঙ না নেবে।

মিষ্টির রঙ লালচে হলেই নামিয়ে রেখে দিও,

ঠান্ডা হলে সাদেক গোল্লার স্বাদটা নিয়ে নিও।

সাদেক গোল্লার আসল মজা পেতে যদি চাও,

সময় করে যশোর জেলার জামতলাতে যাও।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: নিবন্ধ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

2 × one =