জ্বালানি বিদ্যুৎ খাতে বাজেট বরাদ্দে অগ্রাধিকার অপরিহার্য

সালেক সুফী

আগামীকাল ৬ জুন ২০২৪ শেখ হাসিনা নেতৃত্বের আওয়ামী লীগ সরকার ধারাবাহিক চতুর্থ মেয়াদের সরকারি দায়িত্বে থেকে প্রথম জাতীয় বাজেট ঘোষণা করবে।  সংসদে বিস্তারিত আলোচনা শেষে ৩০ জুন ২০২৪ জুলাই ২০২৪ থেকে শুরু হওয়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরের আর্থিক বাজেট পাস হবে। সংসদে সরকারি দলের নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় খসড়া বাজেটে খুব একটা পরিবর্তন ছাড়াই পাস হবে।

কাল খসড়া বাজেট উপস্থাপিত হলে খাতভিত্তিক বরাদ্দ বিষয়ে জানা যাবে। আশা করতে পারি অনুৎপাদনশীল খাতগুলোতে ব্যয় বরাদ্দ কমিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত খাতগুলোর বরাদ্দ যৌক্তিকভাবে বৃদ্ধি করা হবে। আন্তর্জাতিক জ্বালানি পরামর্শক হিসেবে আমি চাইবো জ্বালানি খাতের বরাদ্ধ বৃদ্ধি এবং জ্বালানি বিদ্যুৎ অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য যন্ত্রপাতি সরঞ্জাম আমদানির উপর শুল্ক ভ্যাট যৌক্তিকভাবে কমানো।

সবাই জানে নানা বৈষয়িক কারণ ছাড়াও, জবাবদিহি মূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং সুশাসনের অভাবে বাংলাদেশে এখন অর্থনৈতিক সঙ্কট ঘনীভূত হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি আতঙ্কজনক পর্যায়ে উপনীত, সিন্ডিকেদের  দাপটে   দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। সীমিত আয়ের মানুষদের দিনগুলো কাটছে নুন আন্তে পান্তা ফুরনোর অবস্থায়। বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় সীমিত হয়ে আসছে। আমদানি নির্ভর গ্যাস বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সরবরাহ সংকট পথে। বিরূপ প্রভাব পড়েছে শিল্প বাণিজ্য সহ জনজীবনে।

প্রায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দায়ে ন্যুজ হয়ে পড়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন উন্নয়ন বোর্ড, পেট্রোবাংলা। বার বার দাম বাড়িয়েও এই দুই খাতের সাবসিডি কমানো যাচ্ছে না। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন এক্ট সংশোধন করে সরকার জ্বালানি বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারণ ক্ষমতা বার্কের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের  উপর অর্পণ করেছে। জ্বালানি এবং খনিজ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাসরুল হামিদ বলেছেন নির্দিষ্ট বিরতিতে গ্যাস বিদ্যুৎ মূল্য বৃদ্ধি করে আগামী তিন বছরের মধ্যে দুটি খাত থেকে সাবসিডি সম্পূর্ণভাবে তুলে নেওয়া হবে।

বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে এটি আদৌ সম্ভব কিনা সন্দেহ রয়েছে। এমনকি আসন্ন বাজেটে সাবসিডি বৃদ্ধি করা না হলে কোনোভাবেই বিপিডিবি এবং পেট্রোবাংলা দেনার দায় থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না। সঙ্কট ঘনীভূত হবে। শিল্পখাত বিশেষত রপ্তানিমুখী শিল্পখাতের সংকট দীর্ঘস্থায়ী হলে রপ্তানি আয় কমে যাবে। এমনিতেই বৈদেশিক মুদ্রার সংকট আশংকাজনক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে।

বিগত কয়েক বছর যাবত বড় মাপের বাজেট ঘোষিত হলেও অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে কাঙ্ক্ষিত রেভিনিউ আহরণ হয়নি। দেশের বিপুল সংখ্যক স্বচ্ছল মানুষকে কর নেটওয়ার্কের আওতায় আনা যাচ্ছে না। কর কাঠামো নানাভাবে পরিবর্তন করেও সুফল ফলেনি। সরকার ব্যাঙ্ক থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ গ্রহণ করছে, সরকারি প্রতিষ্ঠাগুলোর সঞ্চয়গুলো তুলে নিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠানকেও পঙ্গু করে ফেলেছে।

সরকার সন্দেহ নেই বিগত ১৫ বছর একাধারে ক্ষমতায় থেকে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠাগুলোর কার্যক্রমে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা না থাকায় দুর্নীতির রাহুগ্রাস অর্থনীতিকে বিপর্যয়ে ফেলেছে। অনেক ক্ষেত্রেই বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের পরিকল্পনা স্তরে ঝুঁকি মূল্যয়ান, ঝুঁকি নিরসন পরিকল্পনা না করে অনেক মেগা প্রকল্প অচিরেই গলার কাঁটা হয়ে পড়তে পারে। বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক ঋণ সুধ সহ পরিশোধ কঠিন হয়ে পড়তে পারে।

অর্থনীতির এই বিপর্যস্ত হয়ে পড়া মুহূর্তে সরকার ডলারের সঙ্গে টাকার বিনিময় হার পরিবর্তন করেছে ব্যাঙ্ক ঋণের সুদের হার বাড়িয়েছে। লুটেরারা ইতিমধ্যে অবাধ লুটপাটের মাধ্যমে ব্যাঙ্ক এবং অর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে তারল্য সংকট সৃষ্টি করেছে। এমতাবস্থায় ব্যাঙ্ক ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি শুধু নতুন বিনিয়োগ নয়, চালু থাকা শিল্পপ্রতিষ্ঠাগুলোর পরিচালন ব্যয় মেটানোর পুঁজি সংগ্রহ দুরূহ করে তুলবে।

সুপারিশ থাকবে জ্বালানি বিদ্যুৎ খাতকে সংকট মুক্ত করতে বিশেষত দায় দেনা থেকে বেরিয়ে আসতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করার। একই সঙ্গে নিজস্ব প্রাথমিক জ্বালানি আহরণ এবং উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধি ছাড়া বিকল্প নেই। জ্বালানি ট্রানজিশন এবং জ্বালানি খাতকে কার্বন দূষণ মুক্ত করার জন্য নবায়ন যোগ্য বিদ্যুৎ অবদান বৃদ্ধির জন্য সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আমদানি করা উপকরণ সোলার প্যানেল, ইনভার্টার, ব্যাটারির উপর কর কমাতে বা সম্পূর্ণভাবে ২-৩ বছরের জন্য তুলে নিতে হবে।

আমি শিক্ষা, স্বাস্থ্য,পরিবেশ, অবকাঠামো খাতেও বরাদ্দ যৌক্তিকভাবে প্রদানের সুপারিশ করবো।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

seventeen + 12 =