অবশেষে অপেক্ষার অবসান ঘটল। লর্ডসের সবুজ গালিচায় অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে সেই গ্লানি মুছে দিয়েছে প্রোটিয়ারা। ইতিহাসের পাতায় লেখা হয়ে গেল নতুন পরিচয়—বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকা।
যুগের পর যুগ এক অভিশাপ পেছনে লেগেছিল। বড় মঞ্চে বারবার ব্যর্থতা, সম্ভাবনার চূড়ায় উঠে ধ্বসে পড়ার বেদনা। সব মিলিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার নামের পাশে একটিই তকমা বসে গিয়েছিল, ‘চোকার্স’। কিন্তু সেই নাম এবার ইতিহাসে ঠাঁই নেবে না আর। দক্ষিণ আফ্রিকার কপালে শিরোপা যেন ছিল মরীচিকা।
২৭ বছর আগে হ্যান্সি ক্রনিয়ের নেতৃত্বে ঢাকার জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শিরোপার মুকুট একবার উঁচিয়ে ধরেছিল প্রোটিয়ারা। সেটা ছিল আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। তৎকালিন সময়ে প্রতিযোগিতাটির নাম ছিল নকআউট টুর্নামেন্ট। উইন্ডিজকে হারিয়ে তারা প্রথমবার পেয়েছিল কোনো আন্তর্জাতিক শিরোপা। তারপর থেকেই শিরোপা খরা। যা তাদের এনে দেয় চোকার্স তকমা। অবশেষে হলো শাপমুক্তি।
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা ৬ উইকেটে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে। ২৮২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মাত্র ৪ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় তারা। জয়ের নায়ক এইডেন মারকরাম, যিনি তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ইনিংস—২০৭ বলে অপরাজিত ১৩৬ রান। ইনিংসটি সাজানো ছিল ১৪টি চারের অলঙ্কারে।
‘হ্যামস্ট্রিং চোট’ নিয়ে খেলা বাভুমা শেষ করতে পারলেন না’হ্যামস্ট্রিং চোট’ নিয়ে খেলা বাভুমা শেষ করতে পারলেন না
দক্ষিণ আফ্রিকার সবশেষ ট্রফিটিও এসেছিল এই মারকরামের হাত ধরেই। ২০১৪ সালে যুব বিশ্বকাপের ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল প্রোটিয়ারা। সেই দলের অধিনায়ক ছিলেন মারকরাম। সেই মারকরাম আবারও হলেন নায়ক।
তার সঙ্গে শক্ত হাতে হাল ধরেন অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা। চারদিকে যখন সন্দেহ আর সমালোচনার ছায়া, তখন একা কাঁধে তুলে নেন দলে আস্থার ভার। ১৩৪ বলে ৬৬ রানের ইনিংসে ছিল ৫টি চারের ঝিলিক। দুজনের জুটিতে গড়ে ওঠে ১৭৮ রানের দৃঢ় এক ভিত, যার ওপর দাঁড়িয়ে গড়া হয় বিজয়ের প্রাসাদ।
দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে মিচেল স্টার্ক তিনটি ও জোশ হ্যাজলউড একটি উইকেট নেন। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিংয়ের সামনে ম্লান হয়ে যায় অজিদের বোলিং অস্ত্রশালা।
এর আগে প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া ২১২ রানে অলআউট হয়েছিল। দক্ষিণ আফ্রিকা নেমে গুটিয়ে যায় মাত্র ১৩৮ রানে। কাগিসো রাবাদার বোলিং তোপে দ্বিতীয় ইনিংসেও ২০৭ রানের বেশি করতে পারেনি অজিরা। তাতেই প্রোটিয়াদের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৮২ রানের।
তবে সে লক্ষ্য যে ছিল কেবল সংখ্যার খেলা নয়। এ ছিল একটা জাতির বহু বছরের অপ্রাপ্তি পূরণের লড়াই। সেই লড়াইয়ে ব্যর্থতা নয়, এবার বিজয়ের গল্প লিখল দক্ষিণ আফ্রিকা। চোকার্স তকমা ঘুচিয়ে, এখন তারা গর্বিত এক নাম—বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন।