ডাচ বাংলা টেস্ট: দ্বিতীয় দিনশেষে অস্তিত্বের লড়াইয়ে বাংলাদেশ

সালেক সুফী

শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামকে অতিথি বধের বধ্যভূমি বানিয়ে  প্রথম ইনিংসে নিজেদের পাতা ফাঁদে ধরা পড়েছিল বাংলাদেশ। আনাড়ির মতো ব্যাটিং করে ১০৬ রানে গুটিয়ে যাবার পর উইকেটের সুবিধা কাজে লাগিয়ে অতিথি দলকে ১৪০/৬ সীমিত রেখে যুদ্ধে ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় দিনে অতিথি দলের কাইল ভেরিনি (১১৪) এবং উইলান মুলদার (৫৪) জুটির লড়াকু ১১৯ রানের জুটি অতিথি দলকে ৩০৮ রান সংগ্রহের পথে নিয়ে যায়।

২০২ রানে এগিয়ে থাকার পর দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নেমে ৪ রানেই সাদমান ইসলাম এবং মোমিনুল সাজঘরে ফিরলে শঙ্কা জাগে দুই দিনেই টেস্ট হারের বিড়ম্বনার।  তবে বলতেই হবে মাহমুদুল হাসান জয়ের (৩৮*) মাটি কামড়ানো প্রতিরোধ এবং বাংলাদেশের মিস্টার ডিপেনডেবেল মুশফিকের (৩১* ) দৃঢ়তার সুবাদে ১০১/৩ করে ম্যাচে টিকে থাকার সংগ্রামে আছে বাংলাদেশ।

এখনো ইনিংস পরাজয় এড়াতে করতে হবে ১০২।  আর যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ম্যাচে টিকে থাকতে হয় নিদেন পক্ষে ১৫০ রান লিড নিতে হবে। আগাম ভেবে লাভ নেই। আপাতত দুই দিনে হারের লজ্জা থেকে রক্ষা মিলেছে সেটাই বড় কথা।

যে উইকেটে প্রথম দিন প্রথম সেশন থেকেই সিম মুভমেন্ট ছিল বাড়ন্ত, পিচ পড়ে বাক নিচ্ছিল, অসম বাউন্স ছিল সে উইকেটে কিন্তু দ্বিতীয় দিন দৃঢ়তার সঙ্গেই বাংলাদেশ বোলিং মোকাবিলা করেছে দক্ষিণ আফ্রিকার লেট্ মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানরা।  ওদের দৃঢ়তার মোকাবিলায় কিছুটা খেই হারিয়ে বসে বাংলাদেশ।  ৭ম উইকেট জুটির অনবদ্য ১১৭ রান দক্ষিণ আফ্রিকাকে বড় লিডের ভিত্তি গড়ে দেয়।

সেখানে মুখ্য ভূমিকা পালন করে কাইল ভেরিন। ১১৪ রানের পরিশীলিত ইনিংসে ৮ চার ২ ছয়ে সাজানো ম্যাচজয়ী ইনিংস হবে কি না কাল বোঝা যাবে।সঙ্গী বিলান মুলদার ৫৪ রান করে যোগ্য সারথি ছিল।

একপর্যায়ে হাসান মাহমুদ চকিতে ২ উইকেট তুলে নিয়ে চমক সৃষ্টি করলেও ৯ম উইকেট জুটিতে আবারো ডিওন পিডটকে (৩২) নিয়ে ভেরিন যোগ করে মূল্যবান ৬৬ রান। শেষ দুটি উইকেট মেহেদী হাসান মিরাজ তুলে নেওয়ার আগেই দক্ষিণ আফ্রিকা ৩০৮ রান করে ২০২ রানে এগিয়ে যায়।

প্রথম দিনে সফল তাইজুল আজ ৫ উইকেটের সঙ্গে আর কোনো উইকেট যোগ করতে পারেনি। হাসান মাহমুদ (৩/৬৬) মেহেদী মিরাজ (২/৬৩) ছিল সফল বলার। উইকেট দ্বিতীয় দিনে খুব অস্বাভাবিক আচরণ করেছে বলা যাবে না।

বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে প্রথমবারের মতো ভুল করবে না ভাবা অসঙ্গত ছিল না। কিন্তু শুরুতেই রাবাদার বলে সাদমান এবং মোমিনুল বিদায় নিলে অনেকের মনেই দুই দিনে ম্যাচ হারের শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। সৌভাগ্য প্রথম ইনিংসের মতোই মাটি কামড়ানো ব্যাটিং করেছে মাহমুদুল হাসান জয় (৩৮*)।শুরুতে অধিনায়ক শান্ত সঙ্গ দিয়েছে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৫৩ রান করায়।

কেশব মহারাজের আর্ম বলে শান্ত (২৩) পিরে যাবার পর মুশফিক ব্যাটিং করেছে স্বভাবসুলভ ধ্রুপদী ছন্দে। আলোকসল্পতার কারণে খেলা শেষ হবার সময় বাংলাদেশের স্কোর ছিল ১০১/৩।  দ্বিতীয় ইনিংসে ৭ উইকেট হাতে নিয়ে পিছিয়ে আছে ১০১ রানে।

এখনো দুর্গম গিরি কান্তার মেরু পেরুতে হবে বাংলাদেশকে। প্রথম লক্ষ্য ইনিংস পরাজয়ের বিড়ম্বনা এড়ানো। এর পর যদি সামর্থ্যে কুলোয় নিদেন পক্ষে ১৫০ রানের টার্গেট দেওয়া। সেই মঞ্জিল এখনো বহু দূরের।আপাতত মুখে যেন চুনকালি মাখতে না হয় সেই সম্ভাবনার কথায় ভাবছি।

বাংলাদেশের কবে যে শিক্ষা হবে স্পোর্টিং উইকেট বানিয়ে নিজেদের  ক্রিকেটকে উজ্জ্বল করার। আমাদের এখন ম্যাচে টিকে থাকার মতো পেস আক্রমণ আছে। তবু কেন স্পিন ফাঁদ পেতে অতিথি দলকে ঘায়েল করার চেষ্টা। এই টেস্টে নাহিদ রানার অভাব কি বাংলাদেশ অনুভব করেনি? ম্যাচে টিকে থাকতে জয়-মুশফিকের পাশাপাশি লিটন, মিরাজ, জাকির, অনিককে দীর্ঘ সময় ব্যাটিং করতে হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

14 − 2 =