নচিকেতা হওয়া যায় না। নচিকেতার জন্ম হয়। কোনো এক অদৃশ্য শক্তি সমস্ত প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আমাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। একটা অস্থির সময়ের প্রোডাক্ট আমি। ওই সময়টা যদি না তৈরি হয়, তাহলে নচিকেতা হওয়া অসম্ভব। কথা দিচ্ছি, আগামী ৫০ বছরেও আরেকটা নচিকেতা আসবে না। —নচিকেতা
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে হঠাৎ করে ধূমকেতুর মতো এসে চিরায়িত বাংলা গানের সংজ্ঞাটাই যেন বদলে দিলেন। তাঁর লেখা গানে উঠে এল সাধারণ মানুষের মনের কথা, সহজ কথায় লুকিয়ে থাকা গভীর তাৎপর্য। প্রতিটি গানই যেন আলাদা গল্প বলে। বলছি নচিকেতা চক্রবর্তীর কথা। কবীর সুমনের পরে যিনি পরিচিতি পেয়েছেন জীবনমুখী গানের শিল্পী হিসেবে। ১৯৯৩ সালের ১৪ আগস্ট প্রকাশ পায় নচিকেতার প্রথম অ্যালবাম ‘এই বেশ ভালো আছি’। প্রথম অ্যালবামেই নিজের জাত চিনিয়েছিলেন তিনি। শুধু প্রশংসাই নয়, বাণিজ্যিকভাবেও সাফল্য পায় অ্যালবামটি। মাত্র দেড় মাসে এই অ্যালবাম ১ লাখ ২৫ হাজার কপি বিক্রি হয়েছিল এবং সর্বমোট ৫ লাখ বিক্রি হয়, যা বাংলা গানের ইতিহাসে রেকর্ড। শুধু বিক্রির নিরিখেই নয়, বৈচিত্র্যের দিক থেকেও ‘এই বেশ ভালো আছি’ ছিল আলাদা। একই অ্যালবামে কাওয়ালি, র্যাপ, গজলসহ ভিন্ন ঘরানার ১২টি গান স্থান পেয়েছিল। সে সময় বাংলায় র্যাপ গান অনেকের চিন্তার বাইরেই ছিল।
গানের জগতে দেখতে দেখতে ৩০ বছর পার করে দিয়েছেন নচিকেতা। তিন দশক পূর্তিতে সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছিল। এবার তিন দশক পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশের শ্রোতাদের গান শোনাতে আসছেন তিনি।
আজব রেকর্ডস ও আজব কারখানার আয়োজনে আগামী ১০ নভেম্বর ঢাকার কেআইবি (কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে ‘নচিকেতা লাইভ ইন ঢাকা উইথ জয় শাহরিয়ার’। নচিকেতার এই কনসার্ট নিয়ে আয়োজক প্রতিষ্ঠানটির সিইও সংগীতশিল্পী জয় শাহরিয়ার বলেন, ‘গানে নচিকেতার ৩০ বছর উদ্যাপনে কলকাতায় একটি কনসার্ট হয়েছে। ঢাকায়ও তাঁর অনেক ভক্ত আছে। এ ছাড়া আমাদের প্রজন্মের যাঁরা নিজে লিখে গান করেন, তাঁদের সংগীতজীবনে নচিকেতার একটা বড় প্রভাব রয়েছে। সেখান থেকে মনে হয়েছে আমাদের একটা কিছু করা উচিত। সর্বশেষ যখন কলকাতায় যাই, তখন নচিকেতা দাদার সঙ্গে কনসার্ট নিয়ে আলাপ করি। সেই আলোচনার ভিত্তিতে ঠিক হয়, ১০ নভেম্বর ঢাকায় গাইবেন নচিকেতা।’
আগামী সপ্তাহেই নচিকেতার এই একক কনসার্ট নিয়ে বিস্তারিত প্রকাশ করা হবে। জানানো হবে টিকিটের দাম ও কবে থেকে কোথায় পাওয়া যাবে। এমনটাই আজকের পত্রিকাকে জানালেন জয় শাহরিয়ার। এদিকে নচিকেতার একক কনসার্টের ঘোষণার পর দর্শকের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ করা যাচ্ছে। আজব কারখানার ফেসবুক পেজে কমেন্ট করে টিকিটের ব্যাপারে জানতে চাইছেন সবাই। নচিকেতার গানের সন্ধ্যাটা সামনাসামনি বসে উপভোগ করতে চান তাঁরা।
নচিকেতা মনে করেন, চাইলেই চট করে একজন নচিকেতা হওয়া যায় না। তার জন্য চাই ব্যাপক চর্চা, চাই সাধনা। তাই সংগীতে নিজের তিন দশক পূর্তিতে কলকাতার রবীন্দ্র সদনে আয়োজিত কনসার্টে তিনি বলেন, ‘নচিকেতা হওয়া যায় না। নচিকেতার জন্ম হয়। কোনো এক অদৃশ্য শক্তি সমস্ত প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আমাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। একটা অস্থির সময়ের প্রোডাক্ট আমি। ওই সময়টা যদি না তৈরি হয় তাহলে নচিকেতা হওয়া অসম্ভব। কথা দিচ্ছি, আগামী ৫০ বছরেও আরেকটা নচিকেতা আসবে না।’