তাপদাহে নদীর পানি দিয়ে নিজ কার্যালয় শীতল রাখছে জাতিসংঘ

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবী দিন দিন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। একটু স্বস্থিতে থাকতে মানুষ এসি ব্যবহারসহ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নানা পদ্ধতি ব্যবহার করছে। ঠিক তখনই নিজেদের কার্যালয় ঠান্ডা রাখতে অভিনব পদ্ধতি বেছে নিয়েছে জাতিসংঘ। নদীর পানি পাম্পে টেনে এনে শীতল রাখা হচ্ছে সদরদপ্তর। খবর বাসস

সবার দৃষ্টির অগোচরে সদরদপ্তর ভবনের নিচতলায় স্থাপিত একটি শক্তিশালী পাম্প প্রতি মিনিটে প্রায় ২৬ হাজার লিটার বা ৭ হাজার গ্যালন পানি টেনে আনছে পাশের ইস্ট রিভার থেকে। ফাইবার গ্লাস পাইপের মাধ্যমে এসব পানি কমপ্লেক্সের কুলিং প্ল্যান্টে প্রবাহিত হয়, যা রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস ব্যবহার করে ঠান্ডা করা হয় ।

এ বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলী মাইকেল মার্টিনি জানান, ‘এই প্রযুক্তি পুরনো হলেও অনেক বেশি জ্বালানি-সাশ্রয়ী’।

গ্রীষ্মকালে নিউইয়র্কের লবণাক্ত ইস্ট রিভারের পানি আশপাশের অন্য নদীর চেয়ে তুলনামূলক বেশি ঠান্ডা থাকে। এ জন্যই সেখান থেকেই পানি টেনে এনে জাতিসংঘ ভবনের তাপমাত্রা ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখা হচ্ছে।

২০০৮ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ভবনটির সংস্কারের সময় পুরো কুলিং ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করা হয়। এই ব্যবস্থায় দুটি আলাদা পানির সঞ্চালন প্রক্রিয়া রয়েছে, ব্যবহৃত পানি পুনরায় নদীতে ফেললেও যাতে দূষিত না হয়।

কুলিং সিস্টেমের প্রধান ডেভিড লিন্ডসে বলেন, আপনি যদি বাইরে থেকে জাতিসংঘের কাঁচের উঁচু টাওয়ার আর সাধারণ পরিষদের গম্বুজের দিকে তাকান, কখনোই বুঝতেই পারবেন না, সুবিশাল ভবনটি নদীর পানিতে শীতল থাকে।

শুধু জাতিসংঘের সদর দপ্তরই নয়, জেনেভা সদর দপ্তরকেও শীতল রাখা হয় লেক জেনেভার পানি দিয়ে। আবার কোপেনহেগেনের ইউএন সিটি কমপ্লেক্স শীতল রাখা হয় সমুদ্রের ঠান্ডা পানি ব্যবহার করে। ভবনটিতে পাশপাশি কাজ করছে জাতিসংেেঘর ১০টি সংস্থা।

বিশ্বজুড়ে প্রায় ২০০ কোটিরও বেশি এয়ার কন্ডিশনার চলছে। এতে ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশ। সেখানে পানিভিত্তিক এ কুলিং সিস্টেম হয়ে উঠছে বড় বিকল্প পদ্ধতি।

ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইএই)’র তথ্য বলছে, ১৯৯০ সালের পর থেকে শুধু পরিবেশ শীতল রাখার জন্য বিশ্বব্যাপী বিদ্যুত বা জ্বালানির ব্যবহার তিন গুণ বেড়েছে। ফলে পরিবেশবান্ধব বিকল্প খুঁজে পাওয়া এখন সময়ের দাবি।

পানি ব্যবহার করে কুলিং সিস্টেম সময়পোযোগী হলেও এটি  তেমন বিস্তার লাভ করেনি বলে আক্ষেপ করেন জাতিসংঘের কুল কোয়ালিশনের সমন্বয়কারী লিলি রিয়াহি।

তার মতে, এমন ব্যবস্থা বাস্তবায়নে প্রয়োজন একাধিক পক্ষের সমন্বয়, প্রযুক্তিগত সহায়তা ও শক্তিশালী নেতৃত্ব।

আন্তর্জাতিক ডিস্ট্রিক্ট এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট রব থরন্টন বলেন, এ ধরনের কুলিং ব্যবস্থা অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে। কিন্তু এই বাজারকে এগিয়ে নেওয়া ও প্রচার চালানোর মতো উদ্যোগ দরকার। সেটি হতে পারে ব্যক্তি, হতে পারে কর্তৃপক্ষ, বিদ্যুৎ কোম্পানি বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান।

ফ্রান্সের প্যারিস শহরে ইতোমধ্যে সেইন নদীর পানি ব্যবহার করে ইউরোপের সবচেয়ে বড় পানিভিত্তিক কুলিং ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। ক্ষতিকর গ্যাসের ব্যবহার কম, লিক হওয়ার ঝুঁকি কম এবং গরম বাতাস ছড়ায় না বলে এটি পরিবেশবান্ধব। তবে সমস্যা একটাই। এই ব্যবস্থায় ব্যবহৃত গরম পানি যখন নদীতে ফিরে যায়, তখন তা জলজ প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

তবে লিলি রিয়াহি বলেন, এই ঝুঁকি পারমাণবিক প্ল্যান্ট থেকে যে গরম পানি নদীতে ফেলা হয়, তার তুলনায় অনেক কম। তাপমাত্রা সীমিত রেখে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।

তিনি বলেন, পানি দিয়ে ভবন ঠান্ডা রাখার এই পদ্ধতি শুধু এক টুকরো প্রযুক্তি নয়। এটি ভবিষ্যতের আধুনিক বিশ্বে শান্ত, সবুজ ও টেকসই ব্যবস্থপনায় সহায়কও হতে পারে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

7 + fourteen =