অভিনয়, নাচ, গান, বিজ্ঞাপন কিংবা কনসার্ট ছাড়াও তারকাদের আয়ের আছে আরও নানা উৎস। কেউ পেশাগত কাজের পাশাপাশি যুক্ত আছেন ব্যবসায়ের সঙ্গে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শোরুম উদ্বোধন করেও মোটা অঙ্কের অর্থ আয় করেন অনেকে। এ ছাড়া তারকাদের অর্থ আয়ের আরেকটি বড় উৎস—সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন পণ্যের প্রচার।
সাইড বিজনেস
মিডিয়া অনেকটাই অনিশ্চিত পেশা। গান বলুন বা অভিনয়, যত দিন জনপ্রিয়তা আছে, তত দিন কাজের অভাব নেই। তবে সব সময় তো ক্যারিয়ারের অবস্থা ভালো যায় না। ভবিষ্যতের কথা ভেবে অনেক তারকাই তাই বিকল্প ব্যবসায় যুক্ত হন। কেউ সরাসরি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালু করেন, কেউবা অন্যের ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন। চিত্রনায়িকা নিপুণের টিউলিপ ফ্যাশন ও টিউলিপ নেইলস অ্যান্ড স্পা নামে দুটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে। অভিনেত্রী ঊর্মিলার আছে গ্লোম্যাক্স নামের বিউটি পারলার। অভিনেতা অপূর্বর আছে ড্রিমবক্স এন্টারটেইনমেন্ট নামের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। এসকে ফিল্মস নামে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আছে শাকিব খানের। সল্ট ক্রিয়েটিভস নামে একটি এজেন্সির মালিক গায়িকা শারমিন সুলতানা সুমি। অভিনেতা ওমর সানি দিয়েছেন চাপওয়ালা নামে রেস্টুরেন্ট। মোশাররফ করিম ও মাহিয়া মাহিও যুক্ত রেস্তোরাঁ ব্যবসায়। হোলাগো নামের ফ্যাশন হাউসের মালিক চিত্রনায়ক সিয়াম। ‘টাচ বাই স্পর্শিয়া’ নামে ফ্যাশন হাউস আছে অভিনেত্রী স্পর্শিয়ার। এ ছাড়া আরও অনেক তারকা যুক্ত আছেন বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গে।
আয়ের উৎস সোশ্যাল মিডিয়া
তারকাদের আরেকটি আয়ের মাধ্যম বিজ্ঞাপন। ভিডিও হোক বা ফটোশুট—বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপনে মুখ দেখিয়ে আয় করেন তারকারা। টিভি ও বিলবোর্ড বিজ্ঞাপনের এ রমরমা অবস্থা এখনো আছে। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে ক্ষেত্রটি আরও সম্প্রসারিত হয়েছে। এখন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো হয়ে উঠেছে বিজ্ঞাপনের অন্যতম ক্ষেত্র। এসব মাধ্যমে যে তারকাদের ফলোয়ার বেশি, তাঁরা মোটা অঙ্কের বিনিময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ব্র্যান্ড এনডোর্সমেন্টের অফার পান। পণ্যের গুণাগুণ গেয়ে ভিডিও পোস্ট করলেই মেলে অর্থ। অনেক সময় বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসের পোশাক বা জুয়েলারি পরে তারকারা ফটোশুট করে ছবি পোস্ট করেন। বিনিময়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে টাকা পান তাঁরা। তারকার জনপ্রিয়তার ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয় অর্থের পরিমাণ। অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য আলাদা টিম রাখেন। ফলোয়ার বাড়াতে নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করেন। জয়া আহসান, বিদ্যা সিনহা মিমসহ অনেক তারকা প্রায় নিয়মিত সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য ফটোশুট করেন। এতে তাঁদের ফলোয়ার যেমন তরতরিয়ে বাড়ে, তেমনি সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে তাঁদের অবস্থান আরও দৃঢ় হয়।
ফিতা কেটে আয়
তারকাদের আয়ের আরেকটি বড় মাধ্যম—ফিতা কাটা। সাধারণত কোনো রেস্টুরেন্ট, বিউটি পারলার, জুয়েলারি শপ বা ফ্যাশন হাউসের নতুন আউটলেট বা শোরুম উদ্বোধনে ডাক পড়ে তারকাদের। তাঁরা ফিতা কেটে শোরুম উদ্বোধন করেন। বড় তারকা থাকলে উদ্বোধনী দিনেই ক্রেতার ভিড় হয়। ফলে শুরুর দিন থেকেই ব্যবসা হিট। তারকাদের মধ্যে নিয়মিত শোরুম উদ্বোধন করতে দেখা যায় অপু বিশ্বাস, নিরব হোসেন, শবনম বুবলী, নুসরাত ফারিয়া, ফেরদৌস, মৌসুমী, বিদ্যা সিনহা মিম, তাহসান, আফরান নিশো, মেহজাবীন প্রমুখকে। শাকিব খানও গত বছর গ্লোম্যাক্স নামে একটি বিউটি পারলার উদ্বোধন করেছিলেন।
ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর
নুসরাত ফারিয়া জানিয়েছেন, তিনি বর্তমানে ১৮টি প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর বা শুভেচ্ছাদূত হিসেবে কাজ করছেন। বছরব্যাপী এসব প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পণ্যের প্রচার করেন তিনি। এ ধরনের কাজ থেকেও অর্থ পান তারকারা। জয়া আহসান, চঞ্চল চৌধুরী, মেহজাবীন, আফরান নিশো, বিদ্যা সিনহা মিম, মিথিলা, পরীমণিও যুক্ত আছেন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে।
কনটেন্ট ক্রিয়েটর
পেশাগত কাজের পাশাপাশি ইদানীং অনেকেই কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে কাজ করছেন। কেউ পোস্ট করেন শুটিংয়ের বিহাইন্ড দ্য সিন, কেউ দেন রূপচর্চার টিপস, কেউ দেন সাক্ষাৎকার। অভিনেতা আদনান ফারুক হিল্লোল কয়েক বছর ধরে ইউটিউব ও ফেসবুকে ফুড ভ্লগিং নিয়ে কাজ করছেন। দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে ভ্লগিং করতে দেখা যায় অপু বিশ্বাস ও সাইমন সাদিককে। একসময়ের জনপ্রিয় নির্মাতা মালেক আফসারীও এখন ইউটিউবে নিয়মিত ভিডিও পোস্ট করেন। ইস্যু পেলেই ভিডিও নিয়ে হাজির হন শাহরিয়ার নাজিম জয়। ইউটিউবে নিয়মিত তারকাদের সাক্ষাৎকারভিত্তিক পডকাস্ট করেন গায়ক জন কবির। ‘এইচ কে শো’ নামে সাক্ষাৎকারভিত্তিক আরেকটি শো করেন গায়ক হৃদয় খান। এসব কাজের মাধ্যমে দর্শক-শ্রোতাদের কাছাকাছি থাকার সুযোগ পান তারকারা, তেমনি বাড়তি অর্থও আসে।