তালের পিঠা

মাসুম আওয়াল

তাল গাছ নিয়ে লিখেছেন কবি কতো কবিতা ও ছড়া,
শৈশবকালে পড়তাম দুলে প্রিয় ছিলো সেই পড়া।
পড়াতেন স্যার ছন্দ ছড়াতো আমাদের ক্লাস রুমে,
শুনাতেন মা-ও, শুনতে শুনতে ঢলে পড়তাম ঘুমে।
সাইকেলে চড়ে বাবার সঙ্গে বেড়াতে গিয়েছি গাঁয়ে,
দেখি তাল গাছ আকাশ ছুঁয়েছে দাঁড়িয়েই এক পায়ে।
মুখস্ত করা ছড়ার সঙ্গে মিলিয়ে নিয়েছি ছবি,
এ তাল গাছের কথা কী দারুণ ছড়ায় এঁকেছে কবি।
তালের পিঠার কথা হবে পরে শোনো কিছু স্মৃতি বসো,
হাড় কাঁপা শীতে কাকডাকা ভোরে খেয়েছি তালের রসও।
তাল গাছ থেকে নামাতেন গাছি মিষ্টি রসের হাঁড়ি,
খই মুড়ি আর সেই রস নিয়ে করতাম কাড়াকাড়ি।
গ্রীষ্মের শেষে আমরা খেয়েছি কতো কাঁচা তাল শাঁস,
তাল গাছে হাসে পাকা পাকা তাল এলেই ভাদ্র মাস।
তাল পাকা মাসে বাতাস উঠলে তাল পড়ে ধুপ ধাপ,
তাল কুড়ানিরা কুড়াচ্ছে তাল নেই কেউ চুপচাপ।
ছোটবেলা ছিলো খুব সুন্দর, ছিলো কতো পাগলামি,
মনে পড়ে আজো গাছতলা গিয়ে তাল কুড়িয়েছি আমি।
মায়ের হাতের ছোঁয়া পেয়ে সেই তাল থেকে হতো পিঠা,
আহা খেতে কী যে মিঠা।
নরম মজার তালের পিঠাকে কেউ বলে তাল বড়া,
নাম যা-ই হোক নেই ক্ষতি আজ হবে তাকে নিয়ে ছড়া।
মায়ের হাতের তালের পিঠার তুলনা হয় না কোনো,
তুমিও বানাবে তাল পিঠা, তবে কীভাবে বানাবে শোনো।
পাকা তাল, চিনি, গমের আটা ও নারকেল আছে ঘরে
চালের আটা ও সুজি, কালোজিরা লাগবে একটু পরে।
মজাদার পিঠা ভাজার জন্য সয়াবিন তেল নিও,
সব কাছে রাখো নিজে নিজে পিঠা বানাতে পারবে প্রিয়।নারকেল কুরে পাশে রেখে দাও,
পাকা তাল ভালো করে ধুয়ে নাও।
তালের গায়ের খোসাটা ছড়াও পাবে রসে ভরা আঁটি,
আঁটি থেকে আঁশ চিপে নিয়ে নিয়ে ভরাও এবার বাটি।
কাজটা ভীষণ পরিশ্রমের খুব ভালো করে জানি,
আঁশ ছড়ানোর সময় আটিতে ব্যবহার করো পানি।
শুকনো আঁটিটা মাটিতেই রাখো মন চায় যেইভাবে,
ছাই দিয়ে ঢাকো কিছুদিন বাদে মজার ফোফরা পাবে।
তাল আঁশ ভরা বাটিটা ভীষণ যত্নে আদরে রাখো
এগুচ্ছো ঠিক ধাপে ধাপে তুমি সামনে এগুতে থাকো।
পাকা তাল থেকে যেই আঁশ পেলে কড়াইয়ে করবে জ্বাল,
অল্প আগুনে কাঠি দিয়ে নাড়ো হারিয়ে ফেলো না তাল।
পাঁচ থেকে সাত মিনিট পরেই ঘন হবে সেটা আরও
হলদে তালটা রঙ পাল্টালে আগুন নেভাতে পারো।
জ্বাল দেওয়া তাল পাশে রেখে দাও যেনো তা ঠান্ডা হয়,
এবার ময়দা, সুজি, কালোজিরা মেশাও পেওনা ভয়।
নারিকেল গুঁড়া চিনিও মেশাও সাথে পরিমাণ মতো,
এই মিশ্রণ যতো মজা হবে পিঠা মজা হবে ততো।
এবার কড়াই চুলাতে ওঠাও তেল ঢেলে দাও তাতে,
খাঁটি সয়াবিনে তাল পিঠা ভাজো ফল পাবে হাতে নাতে।
চুলোর আগুন বাড়ানো যাবে না মধ্যম আঁচে রেখো,
তেলটা গরম হলেই তখন পিঠা ছেড়ে দিয়ে দেখো।
যত্নে বানানো মিশ্রণ থেকে পিঠা গড়ো নিজ হাতে,
সেই সব পিঠা দাও ছেড়ে দাও গরম তেলের সাথে।
ভাজতে ভাজতে বাদামি রঙের হয়ে যাবে সবগুলো,
তেলের ছাকুনি দিয়ে পিঠা তুলে ভরাও পাত্রগুলো।
নিজের হাতেই তাল পিঠা গড়ে ভালো হয়ে গেছে মন
এসো খেয়ে নাও আর যাকে চাও করো তা পরিবেশন।
তাল থেকে হয় তালের পায়েস টিন টিনা টিন টিন,
আজ করি শেষ সেইসব নিয়ে বলবো আরেক দিন।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে হবে ক্লিক করুন: ছন্দে ছন্দে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

nine − 6 =