তৃতীয় দিনের শেষ সেশনে উজ্জ্বল বাংলাদেশ

সালেক সুফী

বাংলাদেশ -শ্রীলঙ্কা চলতি টেস্ট সিরিজে পর পর দুটি টেস্ট বিশাল ব্যাবধানে হেরে বাংলাদেশ ধবল ধোলাইয়ের বিড়ম্বনায় পড়ছে এটি এখন নিশ্চিত ফলাফল কি হবে তা নিশ্চিত  করে বলা না গেলেও তৃতীয় দিনের শেষ সেশনে আহত বাঘের বিক্রমে  ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ।

শ্রীলংকা দলের ৫৩১ রানের বিশাল রান পাহাড়ে পিষ্ট হয়ে ১৭৮ রানে সাঙ্গ হয়েছিল বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। হয়ত কৌশল গত কারণে ৩৫৩ রানে এগিয়ে থেকেও ফলোঅন করায়নি শ্রীলংকা।  দ্বিতীয় ইনিংসে টেস্ট অভিষিক্ত হাসান মাহমুদ এবং খালেদ ৬ উইকেট দ্রুত তুলে নিয়ে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে বাংলাদেশকে।

দিনশেষে ৬ উইকেট হারিয়ে ১০২ রান করে ৪৫৫ রানে এগিয়ে সফরকারী দল।  সহজেই অনুমেয় বিশাল ব্যাবধানে টেস্ট জয় আর সিরিজ ধবল ধোলাই অর্জন করতে চলেছে শ্রীলংকা। ঘটনাবহুল এই টেস্টে প্রথম দিন ৪টি, দ্বিতীয় দিন ৭ উইকেট পড়েছিল। আজ তৃতীয় দিনে শেষ সেশনে ৬ উইকেট সহ মোট ১৫ উইকেটের পতন ঘটেছে। এর মাঝেও প্রথম সেশনের প্রথম ঘণ্টা ছিল উইকেট শূন্য।

এতো কিছুর পরেও বলা যায় উইকেট কিন্তু বোলিং বান্ধব বলা যাবে না। বাংলাদেশের  ওপেনার জাকির হাসান এবং নৈশ প্রহরী তাইজুল ভালোই সূচনা করেছিল আজ সকালে। প্রথম ঘণ্টায় সব ধরনের চেষ্টা করেও ওদের জুটিতে ভাঙ্গন ধরাতে পারেনি লংকান বোলাররা।

কিন্তু দ্বিতীয় ঘণ্টায় ঘুমন্ত সিংহের মত জেগে ওঠে লংকান বোলার বৃন্দ। বিশ্ব ফার্নাদোর দুটি দ্রুত গতির দুর্দান্ত ইনসুইং বলে জাকির ইনিংসে সর্বোচ্চ ৫৪ রান করে আউট করে আউট হয়।  নৈশ প্রহরী তাইজুলের উইকেটিও একই ভাবে তুলে নেয় বিশ্ব ফার্নাদো।  অধিনায়ক শান্ত আবারো জয়সুরিয়ার বলে আত্মাহুতি দিলে মড়ক  লাগে বাংলাদেশ বাটিংয়ে।

আগ্রাসী শ্রীলংকার বোলিংয়ের সামনে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে লিটন দাস আর শাহাদাত দিপু সাজঘরে ফিরে। সংগ্রাম করছিলো সাকিব এবং মোমিনুল। কিছুটা ভাগ্যের সহায়তা পেলে ওদের যোগাযোগে পার্টনারশিপ বড় হতে পারতো।সাকিব (১৫) এবং মোমিনুল (৩৩) রান করে আসিথা ফের্নান্দোর বলে আম্পায়ার্স কলে দুর্ভাগ্য জনক ভাবে এলবিডাব্লু হয়।  ১৭৮ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ।

দুই টেস্টের তিন ইনিংসের কোনোটিতেই ২০০ রান করতে পারলো না বাংলাদেশ। উন্নত বোলিং মোকাবিলায় বাংলাদেশের ব্যাটিং কঙ্কাল বেরিয়ে পড়ে। যে উইকেটে শ্রীলংকার ৬ জন ব্যাটসম্যান ৫০ উর্ধ্ব স্কোর সহ ৫৩১ রান করেছে সেখানেই ১৭৮ রানে গুটিয়ে যাওয়াকে বাংলাদেশের আনাড়িপনা ছাড়া আর কিছু বলা যাবে।

শ্রীলংকা বাংলাদেশকে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ফলোঅন বিড়ম্বনায় ফেলেনি। ৩৫৩ রান এগিয়ে থেকে ফলোঅন আরোপ করলে কাল দিন শেষে কি অবস্থা হত বাংলাদেশের আঁচ করতেও আতঙ্ক লাগে। যাহোক দারুন ভাবে বল হাতে ঘুরে দাড়ায় বাংলাদেশ।

বিশেষত এই ম্যাচে অভিষিক্ত হাসান মাহমুদকে (৪/৫১) মোকাবিলা করতে হিমশিম খায় লংকান ব্যাটসম্যানরা। সঙ্গে খালেদ (২/২৯) সংহারী মূর্তি নিলে ২৫ ওভারেই ১০২ রানে  ৬ উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ।

কিন্তু প্রথম ইনিংসে ৩৫৩ রানে এগিয়ে থাকা শ্রীলংকা সর্বসাকুল্যে ৪৫৫ রানে এগিয়ে আছে। টেস্টের ভাগ্য অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গাছে। কাল সকালেও যদি শ্রীলংকা ইনিংস ঘোষণা করে তাহলেও এই ম্যাচ জয় করা বাংলাদেশের সামর্থ অতিক্রম করে গেছে।

বাংলাদেশ ইনিংসে কাল মাহমুদুল হাসান জয়, আজ জাকির হাসান এবং তাইজুল যে তিনটি বলে আউট হয়েছে সেগুলোর জন্য আমি শ্রীলংকান বোলারদের বাহবা দিবো। বাংলাদেশের দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান সাকিব এবং মমিনুলের কিছুটা দুর্ভাগ্য আম্পয়ারস কলে উইকেট হারিয়েছে। কিন্তু শান্ত, লিটন আবারো নিজেদের উইকেট বিসর্জন দিয়েছে।

শাহাদাত দিপু আর মেহেদী মিরাজ দাঁড়াতেই পারেনি। ২০২৪ বাংলাদেশকে অনেক টেস্ট খেলতে হবে দেশে এবং বিদেশে।  ব্যাটিং অনেক উন্নত না হলে দুর্ভোগ পোহাতে হবে প্রতিটি টেস্ট ম্যাচে। শ্রীলংকার হয়ে আসিতা ফার্নান্দো (৪/৩৪), লাহিরু কুমারা (২/১৯), বিশ্ব ফার্নান্দো (২/৩৮) এবং প্রভাত জয়াসুরিয়া (২/৬৫) যৌথ ভাবে বাংলাদেশ ইনিংসে তাণ্ডব চালায়।

দিনশেষে হাসান মাহমুদ (৪/৫১) এবং খালেদ (২/২৯) জ্বলে উঠে অন্তত কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে বাংলাদেশকে। দেখতে হবে ওদের উজ্জীবিত বোলিং দলকে দ্বিতীয় ইনিংসে লড়াই করতে কতটুকু প্রভাব ফেলে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

2 + 1 =