দাপুটে জয়ে জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশকে লজ্জা দিলো

সালেক সুফী

জিম্বাবুয়ে-বাংলাদেশ ৫ ম্যাচ ডাচ বাংলা ব্যাংক টি২০ সিরিজের শেষ ম্যাচে আজ ঢাকার মিরপুরে অতিথি দল বাংলাদেশকে বিদ্ধস্ত করেছে ৮ উইকেটের অনায়েসে জয়ে।  টস হেরে আগে ব্যাটিং করে জিম্বাবুয়ে দলের নিয়ন্ত্রিত বোলিং এবং তুখোড় ফিল্ডিং বাংলাদেশকে ১৫৭/৬ সীমিত রেখেছিলো। জবাবে অতিথি দলের তরুণ ব্যাটসম্যান ব্রায়ান বেনেট (৭০) এবং বিশ্বমানের অল রাউন্ডার অধিনায়ক সিকান্দার রাজা (৭২*)  বাংলাদেশ বোলিংকে বেদম প্রহার করে ৯ বল হাতে রেখে ম্যাচ জিতে নেয়। প্রথম চার ম্যাচে জয় নিয়ে বাংলাদেশ ৪-১ সিরিজ জয় করে।

দুই দলের শক্তি সামর্থ এবং স্বাগতিক দলের চেনা উইকেট এবং পরিবেশ বিবেচনায় সিরিজের ফলাফল ভিন্নতর হলেই হতো অঘটন। চট্টগামে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম দুটি ম্যাচ দাপটের সঙ্গে একচেটিয়া ভাবেই জিতে নিয়েছিল। তৃতীয়, চতুর্থ  ম্যাচে অতিথি দলের ক্রোম উন্নতির পাশাপাশি বাংলাদেশ ধারাবাহিক ভাবে ব্যাটিং ব্যার্থতা প্রদর্শন করে। জয়ের ব্যাবধান কমে আসতে থাকে। অবশেষে শেষ ম্যাচে ভালো খেলেই জয় ছিনিয়ে নেয় জিম্বাবুয়ে।

টি২০ বিশ্বকাপে খেলতে যাওয়ার পূর্ব মুহূর্তে এই পরাজয় দলের মানসিক দৃঢ়তা নিয়ে স্বাভাবিক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। অতিথি দলের পেস এবং স্পিন বোলিংয়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাটিং মেরুদণ্ডহীন ভাবে ব্যাটিং করেছে। টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ধারাবাহিক ব্যর্থতা টিম ব্যাবস্থাপনার জন্য নিঃসন্দেহে মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ওপেনার লিটন দাসের ধারাবাহিক ব্যর্থতা, সৌম্য নির্ভরযোগ্য কি না প্রশ্ন সাপেক্ষ,  তরুণ তানজিদ তামিমের স্বল্প অভিজ্ঞতা নিয়ে বাংলাদেশের ওপেনিং পার্টনারশিপ বিশ্বকাপে অনিশ্চিত থেকে যাবে। পঞ্চম ম্যাচে অধিনায়ক নাজমুল শান্ত রান পেলেও আস্থার সঙ্গে খেলেছে বলা যাবে না। এমতাবস্থায় অনিশ্চিত, অধারাবাহিক টপ অর্ডার ব্যাটিং নিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বকাপে যেতে হবে।

চতুর্থ ম্যাচে ভালো সূচনা দেওয়া তানজিদ তামিম এবং সৌম্য সরকার আজ কিন্তু আনাড়ির মতো বলের মান বিবেচনা না করেই অকারণ আক্রমণাত্মক স্ট্রোকস খেলে উইকেট বিলিয়ে দেয়। ২.৩ ওভারের মাঝে উভয় ওপেনার বিদায় নিলে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। তরুণ তাওহীদ হৃদয় চাপের মুখে ফিরে যায়।

১৫ রানে ৩ উইকেট হারানোর বিপদ মুহূর্তে উইকেটে আসে নীরব ঘাতক খ্যাত মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। অপর প্রান্তে তখনো নড়বড়ে অধিনায়ক নাজমুল শান্ত। জাত ব্যাটসম্যান রিয়াদ। এই দলের নিঃসন্দেহে সেরা। শুরুতেই তিন তিনটি দর্শনীয় বাউন্ডারী হাঁকিয়ে দলকে কোনঠাসা অবস্থান থেকে টেনে তুলে। রিয়াদের ভূমিকার কারণে আস্থা ফিরে পায় শান্ত।

চতুর্থ উইকেট জুটির ৬৯ রান বাংলাদেশকে ধ্বংসস্তূপ থেকে টেনে তুলে। ৩৬ রান করে শান্ত বিদায় নেওয়ার পর রিয়াদের সঙ্গে জুটি বাধে সাকিব। সাকিব উইকেটে মানিয়ে নিতে কিছুটা লড়াই করলেও নিজের স্বকীয় বৈশিষ্টে সমুজ্জল ছিল রিয়াদ। ব্যাটসম্যান হিসাবে রিয়াদ কেন এখনো বাংলাদেশ দলে অপরিহার্য কাল আবারো প্রমাণ হয়েছে।

১৭ বলে ২১ রান করে সাকিব ফিরে যাবার কিছু পরেই ৪৪ বলে ৫৪ রান করা রিয়াদ বিদায় নেয়। অবশিষ্ট সময়ে জাকির অনিকের ১১ বলে অপরাজিত ২৪ রান দলকে লড়াই করার মতো পুঁজি ১৫৭/৬ এনে দেয়।

কিন্তু বাংলাদেশ দলের অনিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের কারণে লড়াই করা দূরে থাক ব্রায়ান বেনেটের আগ্রাসী বাটিংয়ের মোকাবিলায় এলোমেলো হয়ে যায় বাংলাদেশ। একমাত্র সাকিব ছাড়া কোনো বোলার কিছুই করতে পারেনি।  ব্রায়ান বেনেটের সঙ্গে জুটি বেঁধে অধিনায়ক সিকান্দার রাজা বাংলাদেশ বোলিং তুলোধুনো করে।

দ্বিতীয় উইকেট জুটির অনবদ্য ৭৫ রান অতিথি দলকে জয়ের দুয়ারে নিয়ে যায়। ৪৯ বলে ৫ চার এবং ৫ ছয়ে ৭০ রানের দর্শনীয় ইনিংস খেলে বেনেট বিদায় নিলেও অধিনায়ক সিকান্দার রাজা ৪২ বলে অপরাজিত ৭২ রান করে দলকে অনায়াস জয় এনে দেয়।

সিরিজ ৪-১ ম্যাচে বাংলাদেশ জয় পেলেও এই সিরিজ থেকে বাংলাদেশের চেয়ে জিম্বাবুয়ের অর্জন কোনভাবে কম না। ঢাকার দুটি ম্যাচে দুই দলের ব্যাবধান ছিল চুলচেরা। কাল মাঠে বিসিবি সভাপতি, কয়েকজন পরিচালক, প্রধান নির্বাচক স্বচক্ষে দেখেছেন বাংলাদেশ দলের এলোমেলো স্বরূপ।

চাপের মুখে ভেঙে পড়া বাংলাদেশ দল টি২০ বিশ্বকাপে কি করবে ভাবলে বিস্মিত না হয়ে কি উপায়? ওপেনার সংকট মিটেনি, টপ অর্ডার নড়বড়ে, দলে বিকল্প খেলোয়াড় সীমিত। এই দল দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলংকা, নেপাল, নেদারল্যান্ডস গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠবে ভরসা পাচ্ছি না।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

14 − 7 =