দিন দ্যা ডে’র বাজেট ছিলো চার কোটি টাকা

বাংলাদেশ-ইরান যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ‘দিন দ্য ডে’ ছবিটির সহ-প্রযোজক ও নির্মাতা মোর্তজা অতাশজমজম সম্প্রতি চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ এনে অনন্ত জলিলের বিরুদ্ধে ইরান ও বাংলাদেশের আদালতে মামলা করবেন বলে জানিয়েছিলেন। এবার তিনি নিজের ইন্সটাগ্রাম আইডিতে ‘দিন দ্য ডে’ ছবিতে তার সঙ্গে অনন্তের করা চুক্তিপত্র প্রকাশ করেছেন। সেখানে দেখা যাচ্ছে ছবিটির বাজেট মাত্র ৫ লাখ ডলার।

নির্মাতা মোর্তজা অতাশজমজম জানিয়েছেন, ২০১৮ সালে চুক্তিটি সম্পন্ন হয়েছিলো। সে সময়ে ডলারের মূল্যমান ছিল ৮২ টাকা। সে হিসেবে ‘দিন দ্য ডে’ ছবির মূল বাজেট চার কোটি টাকার একটু বেশি। অবশ্য অনন্ত জলিল সকল প্রকার প্রচারণায় বলেছেন তার ছবির বাজেট ১২০ কোটি টাকা।

মোর্তজা বলেন, চুক্তি অনুযায়ী কথা ছিলো অনন্ত জলিল পুরো টাকাটাই বিনিয়োগ করবেন। বিনিয়োগকারী হিসেবে তিনি ছবির লভ্যাংশের ৮৫ শতাংশ নিবেন এবং প্রযোজক হিসেবে তিনি ১৫ শতাংশ পাবেন।

তিনি বলেন, যেখানে অনন্ত আমাদের ইরানি টিমের পুরো পাঁচ লাখ ডলার পরিশোধ করেননি সেখানে ছবির বাজেট কীভাবে দশ মিলিয়ন ডলার বলেন?

‘দুর্ভাগ্যবশত, শুটিং শুরুর দিনগুলোতে আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে এটি আমার জীবনের সবচাইতে বড় ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো। কিন্তু চুক্তির কারণে আমার ফিরে আসার কোনো পথ ছিলো না। আমি চাইনি আমার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হয়ে যাক।’

তিনি জানান, ক্রমাগত স্ক্রিপ্ট পরিবর্তন থেকে তাদের মতপার্থক্যের শুরু হয়। এর মধ্যে উল্লেখ করেন, গল্পে আইএস জঙ্গীবাদ ইস্যু থেকে মাদক ও মাফিয়া ইস্যুতে পরিবর্তন, শুটিংয়ের স্থান সিরিয়া ও লেবানন থেকে পরিবর্তন করে আফগানিস্তান ও তুরস্কে নিয়ে যাওয়ায় তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়।

মোর্তজা বলেন, ‘যেহেতু চলচ্চিত্রটির ৮৫ শতাংশ বাংলাদেশের এবং তিনি বলতেন বাংলাদেশের সিনেমা ও মানুষদের আমার চাইতে ভালো জানেন এই অজুহাতে প্রতিদিন সিনেমার স্ক্রিপ্ট ও অভিনয়ে হস্তক্ষেপ করতেন।’

অনন্ত কারখানায় কাজের চাপ ও ব্যবসায়িক ব্যস্থতার অজুহাতে শুটিংয়ে প্রায়ই দেরি করতেন বলে দাবি করেছেন মোর্তজা। এছাড়া মোর্তজাকে ছাড়া অনন্ত তুরস্কে শুটিং করেছেন। সেখানে একটি দৃশ্যে নারীদের অশালীন নৃত্য শুটিং করা হয়েছে, যা চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে জানালেন। তিনি বলেন, চুক্তি অনুযায়ী দুই দেশের আইনকে শ্রদ্ধা করার কথা তা করেননি অনন্ত।

এছাড়া অনন্তের খামখেয়ালির কারণে ছবিটির শুটিং ব্যয় বেড়ে যাচ্ছি। তাছাড়া তিনি কারো অর্থই ঠিকঠাক মতো পরিশোধ করেননি। এর প্রতিবাদে মোর্তজা কিছুদিন শুটিং বন্ধ রাখেন। পরবর্তীতে কয়েকজন শুভাকাঙ্ক্ষীর সমঝোতায় আবার কাজটি শুরু করেন এবং অনন্ত সমস্ত বকেয়া পরিশোধ করে দিবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।

অনন্ত বাংলাদেশ ও ভারতের হায়দ্রাবাদে দুই দফা মোর্তজাকে ডেকে নিয়ে বকেয়া দুই লাখ ডলারের পরিবর্তে ২৪ হাজার ডলার পরিশোধ করেন। বারবার তাগাদা দিলে করোনা ও ব্যবসায় লোকসান হওয়ার অজুহাত দেন বলে মোর্তজা জানালেন।

তিনি জানান, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় ট্রেলার প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি বিব্রত হয়েছিলেন দুর্বল ট্রেলার দেখে। তখন অনন্ত তাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা পরিবর্তনের। তার একমাস পর ছবির কিছু দৃশ্য তাকে ইমেইল করা হলে, উত্তরে মোর্তজা বলেছিলেন, শিশুসুলভ হয়েছে।

এতদিন কেন চুপ ছিলেন এমন সমালোচনার জবাবে মোর্তজা বলেন, অনন্ত-বর্ষার বাসায় তিনি খাবার খেয়েছিলেন সে কৃতজ্ঞতা থেকে। তিনি বলেন, ছবিটি মুক্তির আগের দিন তাদের দুজনের কাছে ভাইবোন হিসেবে অনুরোধ করেছিলাম আমার বকেয়া যেন পরিশোধ করে দেন তারা। এমনকি আমার নামটি ছবির সব জায়গা থেকে বাদ দিয়ে দেন। কিন্তু তিনি তা শুনেননি।

চুক্তিনামাটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায় এটি সম্পন্ন হয় ১৮ অক্টোবর ২০১৮ তে। তাতে প্রথম পক্ষ ধরা হয় মোর্তজা অতাশজমজমকে এবং দ্বিতীয় পক্ষ অনন্ত জলিল। চুক্তি অনুযায়ী অনন্ত জলিল হবেন বিনিয়োগকারী এবং মোর্তজা হবেন প্রযোজক। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী প্রযোজক মূলত ছবিটি নির্মাণে সহায়তা করেন, তিনি আর্থিক কোনো বিনিয়োগ করেন না।

চুক্তিনামায় বলা হয়েছিলো, অনন্ত বাজেটের ৫ লাখ ডলার ছয় কিস্তিতে পরিশোধ করবেন। চুক্তি স্বাক্ষরের ৮ মাসের মধ্যে ছবি মুক্তির কথা ছিলো। ছবির দৈর্ঘ্য হওয়ার কথা ছিলো ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। তিন মাসে মোট ৭০ দিনে শুটিং শেষ হওয়ার কথা ছিল।

সারাবাংলা

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

11 + nineteen =