নতুন ইতিহাস গড়ে বক্সিং ডে টেস্ট জিতলো ইংল্যান্ড

সালেক সুফী

খেলার ধারা, পরিস্থিতি পরিবেশের সম্পূর্ণ বিপরীত ধারায় খেলে এমসিজিতে অনেক হিসাব নিকাশ পাল্টে দিয়ে  দ্বিতীয় দিনে টেস্ট জয় করলো ইংল্যাড। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসের ১৫২ রানের জবাবে ১১০ রানেই গুটিয়ে গিয়েছিলো ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩২ রান করায় ইংল্যান্ডের জয়ের টার্গেট দাঁড়ায় ১৭৫। সাহসী ব্যাটিং করে ইংল্যান্ড আগ্রাসী অস্ট্রেলিয়াকে ৬ উইকেটে হারিয়ে দিলো টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষ হবার আগেই।

এশেজ আগেই ৩-০ জিতে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। শঙ্কা ছিল অস্ট্রেলিয়া ইংল্যান্ডকে ধবল ধোলাই করবে। এমসিজিতে প্রথম দিনে দুই দলের ১০+১০=২০ উইকেট পতন শেষে ৪৬ রানে অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে যাওয়ায় অস্ট্রেলিয়ার জয়ের পাল্লা ভারী ছিল।  দ্বিতীয় দিন সকালে উইকেটের সহায়তায় ইংল্যান্ড ভালো বোলিং করলেও ১৩২ করে ১৭৫ রানের জটিল টার্গেট দিয়েছিলো। নিজেদের পরিচিত বাজবল কৌশলে ব্যাটিং করে সকল পূর্বাভাস ভুল প্রমান করে ৪ উইকেটে টেস্ট জিতলো ইংল্যান্ড। দীর্ঘ। ১৫ বছর পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট জয় ইংল্যান্ডের। ইংল্যান্ডের চতুর্থ টেস্ট জয়ে সিরিজের অবস্থা এখন ৩-১।  শেষ টেস্ট অনুষ্ঠিত হবে নববর্ষ ২০২৬ সিডনিতে।

বক্সিং ডে টেস্ট, এমসিজি

অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস ১৫২ অল আউট: ৪৫.২ ওভার (মাইকেল নেসার ৩৫, উসমান খোয়াজা ২৯, আলেক্স কারী ২০, জস টঙ ৫/৪৫, গাস আটকিন্সন ২/২৮)

অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংস ১৩২ অল আউট (ট্রাভিস হেড ৪৬, স্টিভ স্মিথ ২৪* , ক্যামেরুন গ্রীন ১৯ , ব্রেইডন কার্স ৪/৩৪, বেন স্টোকস ৩/২৪,জস টঙ ২/৪৪)

ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস ১১০ অল আউট: ২৯.৫ ওভার (হ্যারি ব্রুক ৪১, গাস আটকিন্সন ২৮, মাইকেল নেসার ৪/৪৫, স্কট বোলান্ড ৩/৩০, মিচেল স্টার্ক ২/২৩)

ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস ১৭৮ /৬ (জ্যাকব বেথেল ৪০, জাক ক্রলি ৩৭, বেন ডাকেট ৩৪, জো রুট ১৫, জাই রিচার্ডসন ২/ ২২, স্কট বোলান্ড ২/ ২৯, মিচেল স্টার্ক ২/৫৫)

৪/০ অবস্থায়  ৪৬ রানে এগিয়ে থেকে অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু করেছিল। উইকেটে দারুন সীম মুভমেন্ট ছিল।  সবুজ ঘাসে ঢাকা উইকেট, ঠান্ডা আবহাওয়ায় অনেকটা ইংলিস ফ্লেভার ছিল. ব্রাইডন কেস  ৪/৩৪, বেন স্টোকস ৩/২৪ এবং জস টঙের ২/৪৪ তৃমুখী আক্রমণে দিশেহারা অস্ট্রেলিয়া ১৩২ রানেই গুটিয়ে গেলো। একমাত্র ট্রাভিস হেড ৪৬ এবং স্টিভ স্মিথ ২৪ ছাড়া কেউ দাঁড়াতেই পারেনি। তবুও অনেকের ধারণা ছিল ১৭৫ রান তাড়া করে জয় সহজ হবে।

দেয়ালে পিঠ রাখা ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য বেপরোয়া হওয়া ছাড়া বিকল্প ছিল না। ক্রলি, ডাকেট নিজেদের কৌশলে খেলে প্রথম উইকেট জুটিতে ৭ ওভারেই ৫১ রান তোলায় উইকেট জুজুর ভয় কেটে যায়। অস্ট্রেলিয়া চেষ্টার ত্রুটি করেনি। তবে জ্যাকব বেথেলের ৪০ রান ইংল্যান্ডকে জয়ের পথে এগিয়ে দেয়। বোলান্ড, স্টোকস, রিচার্ডসন ২টি করে  উইকেট তুলে নিলেও ইংল্যান্ডের জয় রুদ্ধ হয়নি। জেমি স্মিথকে সাথী করে হ্যারি ব্রুক ১৭৮/৬ করে চার উইকেটে টেস্ট জয় করে। দীর্ঘ ১৫ বছর পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট জয় করে। ইংল্যান্ড এশেজে ধবল ধোলাই এড়িয়ে ৩-১ অবস্থানে থেকে সিডনিতে ৫ম টেস্ট খেলবে।

নিকট অতীতে দুই দিনে শেষ হওয়া সংক্ষিপ্ত তিনটি টেস্ট ম্যাচ।

অস্ট্রেলিয়া: দক্ষিণ আফ্রিকা, ১৭ ডিসেম্বর ২০২২

দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংস ১৫২ অল আউট (ভেরিন ৬৪), দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় ইনিংস ৯৯ অল আউট (পাট কামিন্স ৫/৪২)

অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস ২১৮ অল আউট (ট্রাভিস হেড ৯২), অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংস ৩৫/৪ (রাবাদা ৪/১৩)

অস্ট্রেলিয়া ৬ উইকেটে জয়ী।

দক্ষিণ আফ্রিকা: ভারত,জানুয়ারী ৩, ২০২৪

দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংস ৫৫ অল আউট (সিরাজ ৬/১৫), দ্বিতীয় ইনিংস ১৭৬ অল আউট (এইডেন মারকরাম ১০৬)

ভারত প্রথম ইনিংস ১৫৩ অল আউট (বিরাট কোহলি ৪৬), ভারত দ্বিতীয় ইনিংস ৮০/৩ (জয়সোয়াল ২৮)

ভারত ৭ উইকেটে জয়ী।

অস্ট্রেলিয়া: ইংল্যান্ড, ২১ নভেম্বর ২০২৫

ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস ১৭২ অল আউট (স্টার্ক ৭/৫৮), ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস ১৬৪ অল আউট (বোলান্ড ৪/৩৩)

অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস ১৩২ অল আউট (স্টোকস ৫/২৩), অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংস ২০৫/২ (ট্রাভিস হেড ১২৩)

অস্ট্রেলিয়া ৮ উইকেটে জয়ী।

এমসিজি টেস্ট দুই দিনে শেষ হওয়ায় এই তালিকা আরো দীর্ঘ হলো।  ইংল্যান্ডের কৃতিত্বপূর্ণ জয় আবারো প্রমান করলো টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে নিশ্চিত হয়ে আগাম কিছু বলা বুদ্ধিমানের কাজ না।  দেখতে ভালো লাগে কিন্তু এভাবে ৫ দিনের টেস্ট দুই দিনে শেষ হলে স্বাগতিক ক্রিকেট বোর্ডকে বিপুল আর্থিক ক্ষতি পোষাতে হয়।  এমসিজি উইকেট নিয়ে নানা কথা হয়েছে। ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যানরা প্রমান করলো এই উইকেটে ব্যাটিং করা কঠিন হলেও অসম্ভব ছিল না। বার্মি আর্মি উৎসব করেই নববর্ষ পালন করার উপলক্ষ পেয়ে গেলো।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

nineteen − 1 =