পরমাণু প্রযুক্তি থেকে দেশের ২০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব

আফরোজা আখতার পারভীন

নিউক্লিয়ার এনার্জির প্রসার অবশ্যই ধরে রাখতে হবে। যে ১০ শতাংশ নিউক্লিয়ার বিদ্যুতের কথা বলা হচ্ছে, আমি তাকে যথেষ্ট মনে করি না। আমার মতে, তা আরও বৃদ্ধি করা উচিত। নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছি, সেক্ষেত্রে ২০ শতাংশ এনার্জি নিউক্লিয়ারে করা সম্ভব। কারণ এখন আমরা চ্যালেঞ্জগুলোর সঙ্গে পরিচিত। বিসিপিসিএল ইপি ক্লাইমেট টকসের আলোচনায় অংশ নিয়ে এমন মন্তব্য করেন নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. শৌকত আকবর। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এনার্জি এন্ড পাওয়ারের এডিটর মোল্লাহ আমজাদ হোসেন।

ড. শৌকত আকবর বলেন, নিউক্লিয়ার এনার্জি ক্লিন এনার্জি হিসেবে প্রমাণিত টেকনোলজি। আমরা যে অঞ্চলে বাস করি অনেক আগেই একে ক্লিন এনার্জি হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। স্থায়ী উন্নয়নের জন্য নিউক্লিয়ার এনার্জিকে বিবেচনা করা হচ্ছে। ক্লিন এনার্জি বিতর্ক প্রসঙ্গে বলেন, আমি কোন দেশের নাম বলবো না, তবে যারা বিশ্ব জ্বালানি পরিস্থিতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে, এমন কোন একটি দেশ তাদের বিশেষ কারণে তাদের মতো করে ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করে। আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, বেশিমাত্রায় রিজার্ভ নেই। অনেকের স্লোগান বিবেচনায় না নিয়ে অঞ্চলভিত্তিক বাস্তবতা বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সারাবিশ্বে যে কার্বন নিঃসরণ হয় তার দুই-তৃতীয়াংশ এনার্জি খাত থেকেই ।

বাংলাদেশের জিরো কার্বন নীতি বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে বলেন, ২০২১ সালে কার্বন নিঃসরণ হয়েছে ১০৬-১১০ মিলিয়ন টন। আমাদের একটি টার্গেট রয়েছে জিরোর দিকে যাবো। ২০৩০ সালের মধ্যে ২৬ মিলিয়ন টনের মতো কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন না করে রূপপুরে ২৪শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করায় বছরে ২০ মিলিয়ন টন কার্বন নিঃসরণ কমে আসবে। অর্থাৎ ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ কমে আসবে শুধু রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে। আরও দুইটি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র করার কথা, যদি করা যায়, তাহলে বাংলাদেশ শর্তহীনভাবেই কার্বন ইমিশন নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে।

ফসিল ফুয়েল বেজড যেসব অবকাঠামো করা হয়েছে, সেগুলো চালু রাখতে হবে। নিউক্লিয়ার এনার্জির প্রসার অবশ্যই ধরে রাখতে হবে। যে ১০ শতাংশ নিউক্লিয়ার বিদ্যুতের কথা বলা হচ্ছে, আমি তাকে যথেষ্ট মনে করি না। আমার মতে, তা আরও বৃদ্ধি করা উচিত। নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছি, সেক্ষেত্রে ২০ শতাংশ এনার্জি নিউক্লিয়ারে করা সম্ভব। কারণ এখন আমরা চ্যালেঞ্জগুলোর সঙ্গে পরিচিত।

এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ফসিল ফুয়েল এনার্জির বেশ কিছু অবকাঠামো করা হয়ে গেছে আর গ্যাস এগুলোর প্রধান জ্বালানি। আমরা যতো রূপপুরের মতো বিদ্যুৎকেন্দ্র করবো, ততোই গ্যাসের উপর চাপ কমে আসবে, অন্যান্য খাতে সরবরাহ বাড়াতে পারবো। যা আমাদের জন্য খুবই জরুরি।

নিউক্লিয়ার এনার্জিতে স্মল মডিউলার আসতে যাচ্ছে, আইইএ বলছে প্রমাণিত প্রযুক্তি পেতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আমাদের প্রস্তুতি থাকতে হবে, ২০৩০ সালে তা বাজারে চলে আসার পরপরই যাতে কাজ শুরু করা যায়। একটি দেশ এ প্রযুক্তিতে কনস্ট্রাকশন করছে, যদি সফল হয়, তাহলে সঞ্চালন লাইন ইস্যু, অর্থায়ন ইস্যু, ফুয়েল ইস্যু এবং আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া হবে। বড় মডিউলারগুলোর জন্য ১৯টি অবকাঠামো রয়েছে, এগুলো স্মলের জন্য কতটা যথাযথ হবে যাচাই করা এবং সাইট সিলেকশন করে রাখা উচিত।

সামগ্রিক পরিস্থিতির কারণে জলবায়ু তহবিল সংগ্রহে সাময়িক কিছু সমস্যা হতে পারে। জলবায়ু তহবিল দিয়ে  প্রকল্প বাস্তবায়নে আরও বেশি সক্রিয় হওয়া উচিত। পরমাণু বিদ্যুতে জলবায়ু তহবিলের অর্থায়ন প্রসঙ্গে বলেন, এ বিষয়ে ঐকমত্য হতে হবে। বিষয়টি আইইএ এক সভায় আলোচনা হয়েছিল। ক্লিন ডেভেলপমেন্ট ম্যাকানিজমে বিষয়টি যুক্ত হবে বলে আমি আশাবাদী।

এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, এক সময় সেন্ট্রাল থেকে ডিসেন্ট্রাল করা হলো। ইন্ট্রিগেটেশন করার জন্য হঠাৎ করে জাম্প করলে সংকট হতে পারে। আমাদের সঞ্চালন ও বিতরণ নিয়েও বিশ্লেষণ করতে হবে। শতভাগ ফসিল ফুয়েলের উপর নির্ভর করলে ভাগ্য নির্ধারণ হয় ভূ-রাজনীতির বেড়াজালে বলে মন্তব্য করেন শৌকত আকবর।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

12 − 4 =