নতুন বছরে নতুন প্রযুক্তি

আশফাক আহমেদ: প্রতিনিয়ত আসছে নিত্য নতুন প্রযুক্তি ও পণ্য। প্রযুক্তির এই অগ্রগতির সময়ে দুর্দান্ত বহু গ্যাজেট পেয়েছে বিশ্ব। যা মানুষের জীবনযাপন অনেক সহজ করে তুলেছে। প্রযুক্তিপ্রেমীদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে ২০২৩ সালে যেসব প্রযুক্তি, গ্যাজেট এবং ডিভাইস আসবে এবং নতুন বছরে সবার নজর থাকবে সেগুলো নিয়ে। ২০২৩ সালে প্রযুক্তি বিশ্বে নতুন ট্রেন্ড চালুর সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। সেই সঙ্গে সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। প্রযুক্তি দিয়েই সেটি মোকাবেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিগত বছরগুলোতে অনেক প্রযুক্তি উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৩ সালেই এসব প্রযুক্তির বেশ কয়েকটির চূড়ান্ত রূপ দেখা যাবে। আবার অনেক প্রযুক্তি দেখা যেতে পারে নতুন রূপে, নতুন ভাবে।

২০২১ সালে নিরাপত্তা নিয়ে অনেক কোম্পানি উদ্বিগ্ন ছিল। বিশেষ করে মহামারি চলাকালীন যখন কর্মীরা বাড়ি থেকে কাজ করতে বাধ্য হন তখন সাইবার নিরাপত্তা বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কোম্পানিগুলো এখন ডিজিটাল ইমিউন সিস্টেমের ওপর জোর দিচ্ছে। নতুন বছরে জোর দেওয়া হবে একাধিক সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং কৌশলগুলোকে একত্রিত করে ডিজিটাল ঝুঁকি থেকে রক্ষা করার ওপর। ২০২৩ সালে কোম্পানিগুলো সাইবার নিরাপত্তায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপরই পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

শিল্প বিপ্লবের সময়ে মেশিন যেভাবে মানুষের বিকল্প হয়েছিল; ধারণা করা হচ্ছে, আগামী বিশ্বে মানুষের আরেকটি বিকল্প হতে যাচ্ছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্ট বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। সহজ করে বললে, মানুষ যেসব কাজ করে সেগুলো বুদ্ধিমান রোবট দিয়ে করানো হলে বেঁচে যাবে খরচ ও সময়। এ বছর রোবট প্রযুক্তির ক্ষমতা ও উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। রিয়েল ওয়ার্ল্ডের বিভিন্ন কাজে রোবটের ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে। ওয়্যারহাউস ও ফ্যাক্টরির বিভিন্ন জটিল কাজ থেকে শুরু করে উৎপাদন ও রসদ সরবরাহের কাজে মানুষের পাশাপাশি রোবট কাজ করবে।

ম্যাকেঞ্জি গ্লোবালের এক গবেষণায় দেখা যায়, ২০৩০ সালের মধ্যে ৩৭৫ মিলিয়ন মানুষের অর্থাৎ ১৪ শতাংশ মানুষের বিকল্প হিসেবে কাজ করবে এআই। ডেলিভারি ও লজিস্টিকসের ক্ষেত্রে অটোনমাস সিস্টেমের ব্যবহার বাড়বে এ বছর। অনেক ফ্যাক্টরি ও ওয়্যারহাউস ইতিমধ্যে কিছুটা আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে অটোনমাসে পরিণত হয়েছে। এ বছর সেলফ-ড্রাইভিং ট্রাক ও শিপের পাশাপাশি ডেলিভারি রোবটেরও দেখা মিলবে।

কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ডেভেলপমেন্টের এক অসাধারণ প্রতিযোগিতা চলছে বর্তমানে। মূলত সাবঅ্যাটমিক পার্টিকলস ব্যবহার করে তথ্য সংরক্ষণ ও প্রসেস করার এক নতুন প্রযুক্তি এই কোয়ান্টাম কম্পিউটিং। এই প্রযুক্তির সুবিধা হলো, এটি সাধারণ প্রসেসরের চেয়ে লাখ গুণ দ্রুত যেকোনো কাজ করতে পারে। ২০২৩ সালে কোয়ান্টাম কম্পিউটার প্রযুক্তির ফলে বিশ্বে অভাবনীয় উন্নতি দেখা যেতে পারে।

মেটাভার্স নিয়ে অধিকাংশ মানুষের মাথাব্যথা না থাকলেও ইন্টারনেট প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে এ বছর এই প্রযুক্তির প্রসার চোখে পড়বে আরও বেশি। মেটাভার্সকে বলা হচ্ছে ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ। প্রযুক্তিবিদদের মতে, মেটাভার্সের কারণে ইন্টারনেটের ভার্চুয়াল জগৎকে মনে হবে বাস্তব জগৎ। যেখানে মানুষের যোগাযোগ হবে ত্রিমাত্রিক। মেটাভার্স প্রযুক্তির মাধ্যমে আপনি কোনো কিছু শুধু দেখতেই পাবেন তা নয়, এআর এবং ভিআর প্রযুক্তির মাধ্যমে নিজেকে জড়িয়ে ফেলতেও সক্ষম হবেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতিতে ৫ লাখ কোটি ডলার যোগ করবে মেটাভার্স। ২০২৩ সাল হতে পারে এই প্রযুক্তির জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি বছর। এ বছর অগমেন্টেড রিয়্যালিটি (এআর) ও ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি (ভিআর) প্রযুক্তি আরও উন্নত হবে। এর ফলে স্বাভাবিকভাবে এগিয়ে যাবে মেটাভার্স। অ্যাডভান্সড অ্যাভাটার টেকনোলজিও চোখে পড়বে এ বছর। শোনা যাচ্ছে, এ বছরের শেষের দিকে মেটা কোয়েস্ট ৩ আসবে বাজারে, যাতে সম্ভবত প্যানকেক লেন্স এবং কালার পাস-থ্রু ক্যামেরা ব্যবহার করা হবে।

ঠিক যখন আমরা ভাবছি টিভি ডিসপ্লে প্রযুক্তিতে শীর্ষ পালক আমরা ছুঁয়ে ফেলেছি, ঠিক তখনই স্যামসাং ও সনি সিদ্ধান্ত নিল কিউডি-ওএলইডি টিভি বাজারে আনার। তারা সেই প্রযুক্তিতে সফলও হয়েছে। আর তাই সম্ভবত এ বছরের শুরুতে এই দুই প্রযুক্তি নির্মাতা সংস্থা বাজারে আনবে সেকেন্ড জেনারেশন টিভি।

২০২৩ সালের মে মাসে বাজারে আসতে পারে গুগল পিক্সেল ফোল্ড মোবাইল। এ ফোনে বড় স্ক্রিন থাকবে, যা ভাঁজ করা যাবে। এই স্ক্রিনের ওপরে তুলনামূলক চওড়া বেজেল থাকতে পারে। এ ছাড়া ফোনের বাইরে থাকবে একটি পৃথক ডিসপ্লে। ফোনের পেছনে ৩টি ক্যামেরা থাকতে পারে। ফোনের ওপরে ও নিচে থাকতে পারে স্টিরিও স্পিকার সেটআপ।

স্যামসাংয়ের ফ্ল্যাগশিপ ফোন গ্যালাক্সি এস২৩ সিরিজ। শোনা যাচ্ছে, এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এই স্মার্টফোন সিরিজ লঞ্চ হতে পারে। স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২৩ ফ্ল্যাগশিপ সিরিজে থাকতে চলেছে গ্যালাক্সিএস২৩ আলট্রা মডেল। সে ফোনে ২০০ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা সেন্সর থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া কম আলোয় দুর্দান্ত ছবি তোলার ফিচার থাকবে এই ফোনে এমনটাই শোনা যাচ্ছে। স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২৩ আলট্রা ফোনে ৫ হাজার এমএইচ ব্যাটারি থাকতে পারে।

বাংলাদেশের মতো দেশগুলো এখনো পুরোপুরি ফাইভ-জি সুবিধা না পেলেও বিশ্বজুড়ে এর মধ্যেই সিক্স-জি প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। ২০৩০ সালের আগে সিক্স-জি চালুর কোনো সম্ভাবনা না থাকলেও, ধারণা করা হচ্ছে চলতি বছর থেকেই এই প্রযুক্তি নিয়ে কাজ শুরু হবে। ফাইভ-জি-এর মতোই সিক্স-জি নেটওয়ার্ক ব্রডব্যান্ড সেলুলার নেটওয়ার্ক হতে পারে, যেখানে পরিষেবা পাওয়া এলাকাগুলো পৃথক অঞ্চলে বিভক্ত হয়ে ‘সেল’ নামে পরিচিত হবে। সিক্স-জি আসার আগেই ২০২৩ সালে গাড়ির সংযোগ এবং অটোমেশনের ওপর প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।

কার্বন নির্গমন বাড়ার ফলে জলবায়ুতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এ বছর গ্রিন হাইড্রোজেনের মতো নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ার মাধ্যমে প্রায় জিরো গ্রিন হাউস গ্যাস এমিশন হবে। ডিসেন্ট্রালাইজড পাওয়ার গ্রিডের ক্ষেত্রেও বেশ উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা যাবে এ বছর। পৃথিবীতে কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমাতে গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ এটি। বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখা শিল্পগুলোর জন্য এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশ পরিবর্তনে সহায়তা করার জন্য কোম্পানিগুলোর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, অটোমেশন, উন্নত বিশ্লেষণ, শেয়ার্ড ক্লাউড পরিষেবা এবং অন্যান্য উন্নত প্রযুক্তি প্রয়োজন। আশা করা হচ্ছে, ২০২৩ সালে নতুন আরও টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হবে।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে ক্লিক করুন:টেক ট্রেন্ড

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

5 × three =