ব্যাটিং ব্যর্থতায় মিরপুর টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৭২ রানে অলআউট হয়েও প্রথম দিন শেষে সফরকারী নিউ জিল্যান্ডকে চাপে রেখেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। নিজেদের প্রথম ইনিংসে প্রথম দিন শেষে ৫৫ রান করতেই ৫ উইকেট হারিয়েছে নিউ জিল্যান্ড। ৫ উইকেট হাতে নিয়ে ১১৭ রানে পিছিয়ে কিউইরা।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্বান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ব্যাট হাতে নেমে বাংলাদেশকে ভালো সূচনা এনে দেওয়ার ইঙ্গিত দেন দুই ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় ও জাকির হাসান। ১০ ওভার পর্যন্ত নিউ জিল্যান্ড বোলারদের দারুণভাবে মোকাবেলা করেন তারা।
১১তম ওভারে নিউ জিল্যান্ডকে উইকেট উপহার দেন জাকির। দলীয় ২৯ রানে নিউ জিল্যান্ডের স্পিনার মিচেল স্যান্টনারের বলে ক্রিজ ছেড়ে মারতে গিয়ে আকাশে বল তুলে দেন জাকির। মিড অনে ৮ রান করা জাকিরের ক্যাচ নেন উইলিয়ামসন।
পরের ওভারে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন আরেক ওপেনার জয়ও। নিউ জিল্যান্ডের আরেক স্পিনার আজাজ প্যাটেলের বলে শর্ট লেগে টম লাথামকে ক্যাচ দেন ২টি চারে ১৪ রান করা জয়।
দলীয় ২৯ রানে দুই ওপেনারকে হারিয়ে চাপে পড়া বাংলাদেশকে খেলায় ফেরানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন অধিনায়ক শান্ত ও মোমিনুল হক। ১৪তম ওভারে প্যাটেলের বলে কাট করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন মোমিনুল(৫)।
১৫তম ওভারে স্যান্টনারের বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে লেগ বিফোর আউট হন শান্ত। ১টি চারে ৯ রান করেন আগের টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করা শান্ত। ২৯ রানে প্রথম উইকেট পতনের ৪৭ রানে চতুর্থ উইকেট হারিয়ে মহাবিপদে পড়ে বাংলাদেশ।
দলকে বিপদ থেকে রক্ষা করতে পঞ্চম উইকেটে নিউ জিল্যান্ড বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তুলে রানের চাকা ঘুরিয়েছেন মুশফিকুর রহিম ও শাহাদাত হোসেন। এ জুটির প্রতিরোধে ৪ উইকেটে ৮০ রান নিয়ে প্রথম সেশন শেষ করে বাংলাদেশ।
বিরতির পর ১৩৮ বলে জুটিতে পঞ্চাশ পূর্ণ হয় মুশফিক ও শাহাদাতের। ৪১তম ওভারে অদ্ভুত এক আউটের জন্ম দেন মুশফিক। নিউ জিল্যান্ডের পেসার কাইল জেমিসনের ডেলিভারি রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলেন মুশফিক। বল তার ব্যাটে লাগার পর পপিং ক্রিজেই ড্রপ করেছিল। তখন ডান হাত দিয়ে বলকে সরিয়ে দেন মুশফিক। সাথে সাথে আউটের আবেদন করে নিউ জিল্যান্ড। থার্ড আম্পায়ারের সহায়তা নেন অনফিল্ড আম্পায়াররা। টিভি রিপ্লে দেখে মুশফিককে আউটের সিদ্ধান্ত দেন থার্ড আম্পায়ার।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে ‘অবস্ট্রাক্টিং দ ফিল্ড’ আউট হন মুশফিক। এর আগে টেস্টে এমন আউট হয়েছেন সাতজন ব্যাটার। সর্বপ্রথম ১৯৫৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার রাসেল এনডিন এবং সর্বশেষ ২০০১ সালে এই আউট হয়েছিলেন ইংল্যান্ডের মাইকেল ভন।
অদ্ভুত আউটের ইনিংসে ৮৩ বল খেলে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৫ রান করেন মুশফিক। পঞ্চম উইকেটে মুশফিক-জয় ১৫৪ বল খেলে ৫৭ রান যোগ করেন। দলীয় ১০৪ রানে মুশফিক ফেরার পর সাজঘরের পথ ধরেন ক্রিজে সেট ব্যাটার শাহাদাত। অকেশনাল বোলার গ্লেন ফিলিপসের বলে উইকেটরক্ষক টম ব্লান্ডেলকে ক্যাচ দেন তিনি। ২টি চারে ১০২ বলে ৩১ রান করেন শাহাদাত। ১২৩ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারিয়ে আবারও চাপে পড়ে বাংলাদেশ।
স্বীকৃত ব্যাটারদের বিদায়ের পর পরের দিকে জুটি গড়ার চেষ্টা করেও পারেননি মেহেদি হাসান মিরাজ ও উইকেটরক্ষক নুরুল হক। ৭ রান করে ফিলিপসের বলে নুরুল ও ২০ রানে স্যান্টনারের শিকার হন মিরাজ। এতে ১৪৫ রানে অষ্টম উইকেট হারিয়ে দেড়শর নিচে গুটিয়ে যাবার শঙ্কায় পড়ে টাইগাররা। কিন্তু শেষ তিন ব্যাটার সেটি হতে দেননি।
তাইজুল ইসলাম, নাইম হাসান ও শরিফুল ইসলাম মিলে শেষ দুই উইকেটে ২৭ রান যোগ করেন। নবম উইকেটে তাইজুল-নাইম ৯ ও শেষ উইকেটে নাইম-শরিফুল ১৮ রান যোগ করেন। ১৭২ রানের সংগ্রহ নিয়ে অলআউট হয় বাংলাাদেশ। তাইজুল ৬ ও শরিফুল ১০ রানে আউট হন। ১৩ রানে অপরাজিত থাকেন নাইম।
নিউ জিল্যান্ডের স্যান্টনার ও ফিলিপস ৩টি করে এবং প্যাটেল ২টি ও সাউদি ১টি উইকেট নেন।
দিনের শেষ সেশনে জবাব দিতে নেমে পঞ্চম ওভার পর্যন্ত কোন উইকেট হারায়নি নিউ জিল্যান্ড। ষষ্ঠ ওভার থেকে নিউ জিল্যান্ডকে চেপে ধরেন দুই স্পিনার মিরাজ ও তাইজুল। দলীয় ২০ রানে প্রথম উইকেট হিসেবে ডেভন কনওয়েকে (১১) বোল্ড করেন মিরাজ। তাইজুলের করা পরের ওভারে উইকেটের পেছনে নুরুলকে ক্যাচ দেন ৪ রান করা লাথাম।
নবম ওভারে হেনরি নিকোলসকে ১ রানে বিদায় দেন তাইজুল। এরপর দিনের শেষ দিকে কেন উইলিয়ামসন ১৩ ও ব্লান্ডেল শুন্য রানে ফিরিয়ে নিউজিল্যান্ডকে খাদের কিনারায় ফেলে দেন মিরাজ। এতে ৪৬ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড।
শেষ পর্যন্ত আলো স্বল্পতার কারণে ১২ দশমিক ৪ ওভারেই শেষ হয় প্রথম দিনের খেলা। এসময় ৫ উইকেটে ৫৫ রান করে নিউ জিল্যান্ড। ড্যারিল মিচেল ১২ ও গ্লেন ফিলিপস ৫ রানে অপরাজিত ছিলেন। বাংলাদেশের মিরাজ ১৭ রানে ৩ ও তাইজুল ২৯ রানে ২ উইকেট নেন।
বাসস