নীরবেই চলে গেলেন মনি কিশোর

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ‘চার্মিং বউ’ অ্যালবামের ‘কি ছিলে আমার’ শিরোনামের গানটি বদলে দিয়েছিল মনি কিশোরের জীবন। পরে ওমর সানী ও শাবনূর অভিনীত ‘কে অপরাধী’ সিনেমাতেও ব্যবহৃত হয়েছিল গানটি। তবে সিনেমার চেয়ে অডিও অ্যালবামেই বেশি মনোযোগী ছিলেন তিনি। প্রকাশ পেয়েছে তাঁর ৩০টির বেশি অ্যালবাম। সেই মনি কিশোর অভিমানে দূরে সরে গিয়েছিলেন গান থেকে। সংগীতের কারও সঙ্গে যোগাযোগও করতেন না। ২০১৭ সালে গানে ফিরে এলেও নিয়মিত ছিলেন না। নিজেকে আড়ালেই রাখতেন। রামপুরার ভাড়া বাসায় থাকতেন একা।

গত শনিবার সকালে বাড়ির মালিক ভাড়ার জন্য মনি কিশোরের খোঁজ করেন। সকাল থেকে তিনি মনি কিশোরের ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। তখনো ফোন চালু ছিল। রাতে আবার চেষ্টা করে ফোন বন্ধ পাওয়ায় সরাসরি ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখতে পান, দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। রুম থেকে উৎকট গন্ধ আসায় বাড়ির মালিক ফোন করেন ৯৯৯-এ। পুলিশ গিয়ে দরজা ভেঙে রুম থেকে মনি কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করে।

পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, চার-পাঁচ দিন আগেই মৃত্যু হয়েছে মনি কিশোরের। তাঁর শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। পুলিশ জানিয়েছে, অসুস্থতার কারণে মনি কিশোর মারা যেতে পারেন। তিনি চিকিৎসা করাচ্ছিলেন বলেও পুলিশের ধারণা। বাসায় সিটি স্ক্যান, এমআরআই রিপোর্টসহ কিছু মেডিকেল রিপোর্ট পাওয়া গেছে। শিল্পীর অসুস্থতার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তাঁর ভাই অশোক কুমার মণ্ডল। তিনি জানান, মনি কিশোর নানা রোগে ভুগছিলেন। হার্টের সমস্যার পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও শ্বাসকষ্ট ছিল তাঁর। কয়েক মাস ধরে এই সমস্যা প্রকট হয়েছে।

লম্বা বিরতি কাটিয়ে সংগীতে ফেরার পর কি ছিলে আমারসহ তাঁর গাওয়া জনপ্রিয় গানগুলো নতুনভাবে করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন মনি কিশোর। এ ছাড়া আরও ১৫০টি নতুন গানের পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগেই না-ফেরার দেশে চলে গেলেন তিনি।

নড়াইল জেলার লক্ষ্মীপুরে মামাবাড়িতে ১৯৫৮ সালে জন্ম মনি কিশোরের। পুলিশ কর্মকর্তা বাবা অনিল কুমার মণ্ডলের ছেলে অরুণ কুমার মণ্ডল ছিলেন কিশোর কুমারের ভক্ত। ডাকনাম ছিল মনি। কিশোর কুমারের ভক্ত ছিলেন বলে নামের সঙ্গে ‘কিশোর’ জুড়ে নিয়েছিলেন।

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে বিয়ে করেন মনি কিশোর। বিয়ের সময়ই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন তিনি। সে হিসেবে তাঁর মরদেহ দাফন করা হবে। মনি কিশোর বেঁচে থাকা অবস্থায় বিষয়টি একমাত্র মেয়ে নিন্তিকে জানিয়েছিলেন। নিন্তি যুক্তরাষ্ট্রে থাকায় মনি কিশোরের দাফনের বিষয়টি দেখভাল করছেন তাঁর ভাই অশোক কুমার। তিনি জানান, আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। তারাই নির্ধারণ করবে কোথায় তাঁর দাফন হবে।

জনপ্রিয় গান

কি ছিলে আমার

আমি মরে গেলে

মুখে বলো ভালোবাসি

ফুল ঝরে পাতা ঝরে

ডেকো না আমারে তুমি

বন্ধু কি শোনাইলা

তুমি দুঃখ পেলে

থাকবো চিরদিন

সেই দুটি চোখ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

twelve − ten =