পাকিস্তানকে ধবল ধোলাই করে বাংলাদেশ ভারতের মুখোমুখি বাংলাদেশ

সালেক সুফী

দাপুটে ক্রিকেট খেলে যোগ্য দল হিসাবে পাকিস্তানকে রাউয়াপিন্ডিতে ২-০ ব্যাবধানে পরাজিত করে টেস্ট সিরিজে ধবল ধোলাই করেছে বাংলাদেশ। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে বর্তমান পর্বে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ভারত, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের পর চতুর্থ অবস্থানে। বাংলাদেশের পরবর্তী কঠিন এসাইনমেন্ট টেবিলের শীর্ষস্থানে থাকা ভারতের বিরুদ্ধে। দুটি টেস্ট অনুষ্ঠিত হবে ভারতের মাটিতে।সাম্প্রতিক অতীতে ভারতের মাটিতে দুনিয়ার কোনো দেশ ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট ক্রিকেটে সুবিধা করতে পারে নি। ব্যাটিং বোলিং সর্ব ক্ষেত্রে ভারত দল অত্যন্ত ভারসাম্যপূর্ণ এবং শক্তিশালী দল।  গতবার ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার সাথে পরাজিত হওয়ার পর থেকে এবারে শিরোপা জয়ের জন্য মুখিয়ে আছে। তবে একই সঙ্গে আমি বলবো ক্রমাগত পরিণত এবং এখন ভালো খেলে জিততে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল কিন্তু টেস্ট ফরম্যাটে এখন একেবারে হেলা ফেলার দল নয়। দ্বিপাক্ষিক মোকাবিলায় ভারত নিঃসন্দেহে ফেভারিট দল। কিন্তু বাংলাদেশ আসন্ন সিরিজে লড়াই করবে বলে বিশ্বাস রাখি। চেন্নাই এবং কানপুরে অনুষ্ঠিতব্য টেস্ট দুইটি অবশ্যই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে।

বাংলাদেশ দল ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের পর পাকিস্তান থেকে দেশে ফিরেছে। শুধুমাত্র সাকিব আল হাসান পূর্ব অনুমতির ভিত্তিতে ইংলিস কাউন্টি ক্রিকেটে সারে কাউন্টি দলের হয়ে খেলার জন্য এখন লন্ডনে। কয়েকদিন ছুটি কাটিয়ে বাংলাদেশ দল ৮ সেপ্টেম্বর থেকে অনুশীলন শুরু করবে। ১৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ দল ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজ খেলতে রওয়ানা দিবে। এবারে বাংলাদেশ দুটি টেস্ট এবং তিন টি ২০ ম্যাচ খেলবে। বাংলাদেশ ভারত দ্বিপাক্ষিক সিরিজের শেষ পর্বে বাংলাদেশ ঢাকার মিরপুরে অনুঠিত টেস্ট ম্যাচটি তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার পর হেরেছিল।

ভারত ভারতে এখন প্রায় অপ্রতিদ্বন্দী। আছে কয়েক জন বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যান এবং বোলার।  উইকেট অনেক সময়  ভারত দলের শক্তিমত্তা বিবেচনায় নিয়ে প্রস্তুত করা হয়। বাংলাদেশ দলেও কিন্তু আছে বিশ্ব মানের স্পিনার। এখন কয়েকজন উদীয়মান পেস বলার বাংলাদেশ বোলিং আক্রমণকে সমৃদ্ধ করেছে। ঠিক ভারতের সঙ্গে তুলনীয় না হলেও বাংলাদেশের মিডল অর্ডার ব্যাটিং কম সমৃদ্ধ না। তদুপরি ভালো প্রস্তুতি থাকায় এবং নিজেদের সক্ষমতার উপর আস্থা স্থাপিত হওয়ায় দলটি একাট্টা হয়ে আস্থার সঙ্গে খেলছে।

আমি ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ লড়াই করবে বলে মনে করি। তাসকিন, শরিফুল, হাসান মাহমুদ, নাহিদ রানার সঙ্গে এবাদত যোগ হবে কিনা জানিনা। চেন্নাই এবং কানপুর উইকেট সচরাচর স্পিন সহায়ক হয়ে থাকে। সেই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তিন পেসার দুই স্পিনার নাকি দুই পেসার তিন নিয়ে খেলবে সেটি বড় সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশ দলে সাকিব, মিরাজ দুইজন অলরাউন্ডার থাকায় একজন বাড়তি স্পিনার অথবা বাড়তি পেসার খেলানোর সুযোগ আছে। ভারতের তুখোড় ব্যাটিং মোকাবিলা করার জন্য আমি তাইজুলকে খেলানোর সুপারিশ করবো। আমার মনে হয়না তরুণ রিশাদ হোসেনকে এখনো লাল বল ক্রিকেটে ভারতের বিরুদ্ধে খেলানোর সময় এসেছে। রিশাদকে অবশ্যই টি ২০ দলে খেলাতে হবে। বাংলাদেশের সমস্যা অবশ্যই টপ অর্ডার ব্যাটিং। সাদমান, জাকির পাকিস্তানে মোটামুটি উৎরে গেছে। স্কোয়াডে থাকবে মাহমুদ হাসান জয়। ভারতের বুমরা, সিরাজ এখন অনেক পরিণত। ওদের বিরুদ্ধে ওপেনার সহ অধিনায়ক শান্তকে আরো অনেক দৃঢ়তার পরিচয় দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ের শক্তিমত্তা  মোমিনুল, মুশফিক, সাকিব, লিটন, মেহেদী মিরাজের সমন্বয়ে গোড়া মিডল অর্ডার। ভারতের স্পিন আক্রমণ অনেক সমৃদ্ধ। রাবিচান্দ্রা অশ্বিন, রবীন্দ্র জাদেজা, আক্সার প্যাটেল ভারতীয় উইকেটে যে কোনো ব্যাটিং লাইন আপের জন্য হুমকি। ওদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে বাংলাদেশের মোমিনুল, মুশফিক, সাকিব, লিটন, মিরাজদের অন্তত তিন জনকে নিয়মিত হাল ধরতে হবে। কুলদীপ যাদব হয়ত খেলবে। জসপ্রীত বুমরা হতো খেলবে না। মোহাম্মদ সিরাজ এবং মুখেশ কুমারকে খেলতে বাংলাদেশকে অসুবিধা হবার কথা না। তবে ভারতের বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইন আপের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ইদানিং উন্নত হতে থাকা বোলিং আক্রমণকে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। রোহিত শর্মা, ইয়াসাবি জাসোয়াল অত্যন্ত আক্রমণাত্মক এবং কুশলী ওপেনিং ব্যাটসম্যান, তিন নম্বরে শুভমান গিল পরিণত ব্যাটসম্যান, বিরাট কোহলিকে নতুন করে পরিচত করিয়ে দেয়ার কিছু নেই। সরফরাজ খান, দেবদূত পাড়িখাল হয়ত দলে থাকবে, জাদেজা, অশ্বিন, এমনকি আক্সার, সিরাজ প্রয়োজনে ব্যাট হাতে দাঁড়িয়ে যায়। এহেন দলের বিরুদ্ধে টিকে থাকতে যে কোনো দলকে অনেক পরিকল্পনা করে এগুতে হয়। আশা করি বাংলাদেশ পরিকল্পনা করবে আর নতুন বাংলাদেশ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে শিখেছে। আমি উত্তম প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ একটি সিরিজ দেখার অপেক্ষায় আছি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

12 − 9 =