ইন্দোনেশিয়ায় তৈরি হওয়া নতুন একটি হোটেল যে পৃথিবীর সবচেয়ে সরু হোটেলের তকমাটা নিজের করে নেওয়ার জোর দাবিদার তাতে সন্দেহ নেই। অবিশ্বাস্য হলেও হোটেলটি মোটে ৯ ফুট চওড়া। তবে এটির নির্মাতা বলছেন বিশ্ব রেকর্ড গড়াই এর একমাত্র উদ্দেশ্য নয়, ছোট্ট যে শহরটিতে তিনি বাস করেন সেটিকে পৃথিবীর মানুষের নজরে আনাও বড় একটি ব্যাপার। এসব তথ্য জানা যায় সিএনএনের এক প্রতিবেদনে।
পিতুরুমস নামের হোটেলটির মালিক, নির্মাতা কিংবা নকশাকার সবকিছুই অ্যারি ইন্দ্র। মধ্য জাভার সালাতিগা শহরে বেড়ে ওঠেন তিনি। স্থাপত্যবিদ্যায় পড়ালেখা করা অ্যারি পেশাগত কারণে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা ও সিঙ্গাপুরে কাটান বেশ কয়েকটি বছর। তারপরই বাড়ি ফেরার এবং নিজের প্রতিভা সেখানে কাজে লাগানোর তাড়না অনুভব করলেন।
নিজের শহরে এসে এমন এক টুকরো জায়গা খুঁজে পেলেন যার প্রতি কারও আগ্রহ নেই। কারণ এর অদ্ভুত আকৃতি। আর এখানেই এখন দাঁড়িয়ে আছে পিতুরুমস। জাভার ভাষায় পিতু অর্থ সাত, হোটেলটির কামরা সংখ্যাও সাত। আর এটি চওড়ায় কেবল ৯ ফুট (২.৮ মিটার)।
পাঁচতলা দালানটির সাতটি কামরার প্রতিটিতেই একটি ডাবল বেডের জায়গা হয়ে যায় সুন্দরভাবে। গোসলের ব্যবস্থা এবং টয়লেটসহ বাথরুম আছে প্রতিটি কামরার সঙ্গে। স্থানীয় বিভিন্ন চিত্রকলার উপস্থিতি এবং ভেতরের অংশ আলাদাভাবে সাজানোতে প্রত্যেকটি কামরারই আলাদা বৈশিষ্ট্য নজর কাড়ে।
‘আমি চাই মানুষ সালাতিগাতে নতুন ধরনের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করুক’ সিএনএনকে বলেন অ্যারি ইন্দ্র, ‘আমি আমার নিজস্ব টিম নিয়ে পিতুরুমের নকশা করেছি এবং এটি পরিচালনা করছি। স্থানীয় সম্প্রদায়কে জড়িত করে একটি নতুন ধরনের পর্যটন এলাকা তৈরি করার জন্য আমার নতুন একটি প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে এটি।’
সালাতিগা জাকার্তার ৩০০ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত এবং বেশিরভাগ বিদেশি পর্যটকের জায়গাটি সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। তারা ছুটি কাটানোর জন্য যোগিয়াকার্তা, সুরাবায়া কিংবা নিকটবর্তী বালি দ্বীপে যান।
ইন্দ্র সিএনএনকে বলেন, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে উদ্বোধন হওয়া পিতুরুমসে আসা মানুষদের মধ্যে ভিনদেশি কেবল পাঁচ শতাংশ। তবে ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে সালাতিগার ভালো খাবার, ভালো অবকাঠামো এবং চমৎকার জীবনযাত্রার জন্য আলাদা নাম আছে বলে মনে করেন ইন্দ্র। ঔপনিবেশিক যুগে ডাচদের কাছে ছুটি কাটানোর জন্যও এটি একটি জনপ্রিয় গন্তব্য ছিল।
ইন্দ্র জানান, বেশির ভাগ ইন্দোনেশিয়ান সালাতিগাকে অবসর কাটানোর জন্য একটি সুন্দর জায়গা বলে মনে করে। কিন্তু তিনি মনে করেন পিতুরুমস তার ভবিষ্যতের প্রকল্পগুলোর প্রথম ধাপ হিসেবে কাজ করবে, যা ভিনদেশিদের কাছে প্রমাণ করবে সালাতিগা কোনো মতে টিকে থাকা একটি শহরের চেয়ে অনেক বেশি কিছু।
‘প্রযুক্তিগত অসুবিধাগুলি বাদ দিলে, সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল পর্যটনকে ঘিরে সাধারণত মানুষের মধ্যে যেসব মানসিকতা কাজ করে, যেমন বৃহত্তম, লম্বা, সবচেয়ে বিলাসবহুল ইত্যাদির থেকে মানুষকে বের করে আনা। এখানে উল্টো আমরা সবচেয়ে সরু।’ আর্কিটেকচার ব্লগ ডিজিনকে বলেন ইন্দ্র।
‘আমরা এই সীমাবদ্ধতাটিকে আমাদের সবচেয়ে শক্তিশালী বাণিজ্য কৌশলে পরিণত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। ছোট্ট একটি জায়গায় নির্মিত হলেও অতিথিরা “পর্যাপ্ত” জায়গায় চলাচল এবং সময় কাটানোর সম্ভাবনা অনুভব করতে পারবেন।’ বলেন তিনি।
শহরটি মাউন্ট মেরবাবুর পাদদেশে অবস্থিত। পর্বতটিকে পিতুরুমসের অতিথিরা তাদের কামরা থেকেই দেখতে পাবেন। রুম ছাড়াও হোটেলটির ছাদে রেস্তোরাঁ আছে। স্থানীয় বাসিন্দারাও এখানে সময় কাটাতে পারেন। পিতুরুমস কর্তৃপক্ষের এখানে বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং শিল্প প্রদর্শনী আয়োজনেরও পরিকল্পনা রয়েছে।
কাজেই আপনি যদি ভ্রমণ ও রোমাঞ্চপ্রেমী হোন ইন্দোনেশিয়া জাভার আশ্চর্য এই হোটেলে অন্তত একটি রাত কাটানোর সুযোগ হাতছাড়া করবেন না আশা করি।
যে হোটেলে বুকিং দিতে পারবেন না কখনোই
অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যের রাজধানী মেলবোর্নের এক সড়কের পাশে হোটেল ইস্টলিংকের অবস্থান। এ হোটেলে কখনোই থাকার জন্য একটি কামরা পাওয়া সম্ভব হবে না আপনার পক্ষে। কারণ দেখে একটি হোটেলের মতো মনে হলেও এটি আসলে কোনো হোটেলই নয়।
হোটেল ইস্টলিংক আদপে একটি ভাস্কর্য। স্থানীয় শিল্পী কলাম মর্টনের নকশা করা হোটেল ইস্টলিংকের উদ্বোধন হয় ২০০৭ সালে। কিন্তু ১৬ বছর পরও এটি এই পথে যাতায়াত করা গাড়ির আরোহীদের বিভ্রান্ত করে।
হোটেল ইস্টলিংক অবশ্য খুব বড় কোনো কাঠামো নয়। উচ্চতা ২০ মিটার বা ৬৫ ফুটের মতো, চওড়ায় ১২ মিটার বা ৩৯ ফুট। তবে এর পাশ দিয়ে যখন দ্রুতগতিতে কোনো গাড়ি বা মোটরসাইকেল যায় এর চালক বা যাত্রীদের বোঝার সাধ্য নেই এটি সত্যিকারের কোনো হোটেল নয়। আরও বেশি বিভ্রান্তি ছড়ায় রাতে। কারণ তখন হোটেলের কামরা বলে যে জিনিসগুলোকে মনে হয় সেখানকার কোনো কোনোটিতে বাতিও জ্বলতে দেখা যায়। এটা দেখে যে কারও মনে হবে ভেতরে মানুষ আছে। চলতি পথে এক নজর দেখা এই হোটেলে মুগ্ধ কেউ কেউ পরে ইন্টারনেটে এখানকার একটি কামরার বুকিং দিতে গিয়েই বোকা বনে গেছেন। কারণ হোটেলটি ইস্টলিংকে কোনো রুমই নেই। এমনকি এতে প্রবেশেরও সুযোগ নেই। এটি শোভাবর্ধনকারী একটি ভাস্কর্য ছাড়া আর কিছু নয়।
‘গাড়ির আরোহীদের কাছে একে একটি হোটেল বলেই মনে হবে। তবে সময়ের সঙ্গে থিম পার্ক কিংবা ফিল্মের সেট থেকে চলে আসা একটা কিছু বলে একে বিবেচনা করবে মানুষ।’ নির্মাণ শেষে বলেছিলেন শিল্পী কলাম মর্টন। কিন্তু মজার ঘটনা দেড় যুগেরও বেশি পেরিয়ে গেলেও রাস্তাটা পেরোনো গাড়ির আরোহীদের বিভ্রান্ত করে মর্টনের ভাস্কর্য।
প্রথম দেখায় বড় লাল সাইনে ‘হোটেল’ লেখা আয়তাকার দালানটিকে সাধারণই মনে হবে আপনার। তবে একটু ভালোভাবে খেয়াল করলেই বুঝবেন দেখে যা মনে হচ্ছে এটি আসলে তা নয়। তাছাড়া খোলা একটি মাঠের মধ্যে একাকী দাঁড়িয়ে আছে কাঠামোটি। বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়বে আপনার মনে। একপর্যায়ে বুঝতে পাবেন এক শিল্পীর করা নকশায় দৃষ্টিবিভ্রমের শিকার হয়েছেন।
আশ্চর্য এই ভাস্কর্যের দেখা পেতে হলে আপনাকে যেতে হবে মেলবোর্নের ডানডেনংয়ের পাশের ইস্টলিংক টোল রোডে। ইস্টলিংক আর্ট স্কাল্পচার পার্কের অংশ হিসেবে ইস্পাত, কংক্রিট ও কাচ দিয়ে তৈরি করা হয় এটি। নির্মাণে খরচ হয় ৬ লাখ ৫৫ হাজার ডলার (এখনকার হিসেবে ৬ কোটি ৯৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকা)।
হোটেল ইস্টলিংক ফ্যান সাইট সূত্র জানা যায়, প্রচুর সংখ্যায় মানুষ হোটেলটির রুম ভাড়া, রুম খালি আছে কিনা কিংবা পার্কিংয়ের কী অবস্থা জানতে যোগাযোগ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের পাংক ব্যান্ড ভায়োলেন্ট ফেমসের ২০১৯ সালের অ্যালবাম হোটেল লাস্ট রিসোর্ট অ্যালবামের কভারে স্থান পায় হোটেলটি।
ট্রিপ এডভাইজরে একজন এর রিভিও করেছেন এভাবে, একে প্যারালাল ইউনিভার্সের কিছু একটা বলে মনে হয়। নকল হোটেলে বেড পাওয়ার চেষ্টা করবেন না কখনো। হোটেল ইস্টলিংক অতিথি গ্রহণ করে না, সত্যি বলতে কখনো কেউ থাকেইনি এখানে।
লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: বিচিত্র