পোড়াবাড়ির চমচম

মাসুম আওয়াল

মিষ্টি মিষ্টি বাতাস, দূরে আকাশ দারুণ নীল,

করম আলী ট্রেনে চড়ে যাচ্ছে টাঙ্গাইল।

খেতে যাচ্ছে পোড়াবাড়ির নামকরা চমচম,

হেলে দুলে যাচ্ছে ছুটে রেলগাড়ি ঝমঝম।

এই মিষ্টির স্বাদ কী আছে আগের মতো আর?

জানতে হলে যেতেই হবে ধলেশ্বরীর পাড়।

করম আলীর মন মানে না কাজ করে না ব্রেন,

ভাবতে ভাবতে টাঙ্গাইলে পৌঁছে গেছে ট্রেন।

ট্রেন থেকে সে নেমে চড়ে একটা ছোট যানে,

পোড়াবাড়ির চমচমেরা তাকে কাছে টানে।

টাঙ্গাইলের শহর থেকে কিলোমিটার ছয়,

পাড়ি দিয়েই ভাবটা এমন বিশ্ব হলো জয়।

সারি সারি দোকান থেকে মিষ্টিরা দেয় ডাক,

ভাবে করম আগে কটা মিষ্টি খাওয়া যাক।

যেই ভাবা সেই কাজই আগে এক দোকানে ঢুকে,

মিষ্টি কিনে টপ টপা টপ নিলো পুরে মুখে।

অসাধারণ খেতে দুচোখ বন্ধ হয়ে আসে,

করম আলী মিষ্টি খেতে দারুণ ভালোবাসে।

মিষ্টি খেয়ে আঁকুপাকু করতে থাকে মন,

এ চমচমের ইতিকথা জানা প্রয়োজন।

বুড়ো একজন ময়রা সেসব বলতে হলো রাজি,

আর দেরি নয় আমরা সেসব শুনবো বসে আজই।

পোড়াবাড়ির চমচম আছে দুইশ বছর টিকে,

ব্রিটিশ আমল থেকে সুনাম ছড়ানো চারদিকে।

লালচে পোড়া ইটের রঙের সুস্বাদু চমচমে

চিনির গুড়া মাখানো হয় স্বাদটা কী আর কমে!

বানাবে এই মিষ্টি লোকে চেষ্টা করে কতো,

স্বাদ আসে না টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির মতো।

কে বানালো প্রথম এটা? যশোরথ হালই নাম,

নামটা আছে ইতিহাসে, ছড়াতেও লিখলাম।

দুধের ছানা, চিনি, সাথে ধলেশ্বরীর পানি,

যশোরথের প্রচেষ্টাতে চমচম এলো জানি।

পোড়াবাড়ির পাশে ছিলো স্টিমারের ঘাট,

রাজা বাদশা পাইক পেয়াদা, আসতো বড় লাট।

পোড়াবাড়ির চমচমে মন সবার খুশি হতো,

যশোরথের ব্যবসা জমেছিলো ভালো মতো।

মুনি যশোরথ বাবু সেই আসাম থেকে এসে,

কাটালো দিন মিষ্টি বেচে ভালোই খেলে হেসে।

নদী পথে সড়ক পথে আসে দামি লোক,

যশোরথের মিষ্টি খেয়ে বন্ধ করে চোখ।

নামি দামি অনেক মানুষ এই মিষ্টি খেতেন,

আব্দুল হামিদ খান ভাসানী

জাদু সম্রাট পিসি সরকার

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী

পোড়াবাড়ির চমচম খেতে পোড়াবাড়ি যেতেন।

ওয়াজেদ আলী খান পন্নী বিশাল জমিদার,

পোড়াবাড়ির চমচম খুব প্রিয় ছিলো তার।

নবাব আলী চৌধুরী ও প্রমথ নাথও নাকি,

খেয়েছেন এই মিষ্টি কারো জানা আছে তা কি!

প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁয়ের নামটা আছে জানা?

তিনিও বলেন এই চমচম দারুণ মজার খানা।

শেরেবাংলা ফজলুল হক টাঙ্গাইলে এসে,

অন্য সবার মতোই নাকি মিষ্টি খেতেন হেসে।

দোকান ছিলো অনেক, ছিলো বেচা-কেনার ঝোঁক,

নদী পথেও আসতো অনেক বিদেশ থেকে লোক।

এ চমচমের স্বাদের কথা ছড়িয়ে ছিলো ভালো,

শুকিয়ে গেলো নদী, তখন সবকিছু থমকালো।

হায় রে ধলেশ্বরীর পাড়ে লঞ্চ-স্টিমার নেই,

ঝুললো তালা চমচমের ওই দোকানগুলোতেই।

ইতিহাসের সেদিনগুলো এখন শুধুই গল্প,

পোড়াবাড়ির সেই চমচম আছে এখন অল্প।

চমচম গড়ার আদি কারিগরেরা কেউ নাই,

এখন তাদের উত্তরসুরিদেরকে খুঁজে পাই।

আজও পোড়াবাড়ির চমচম সবার অনেক প্রিয়,

কী কারণে? জানতে কী চাও বলছি জেনে নিও।

বদলেছে দিন অনেক সময় পাল্টেছে নিশ্চয়,

এক নিয়মেই আজও আদি চমচম তৈরি হয়।

তাই তো আজও একই রকম সে চমচমের স্বাদ,

আহ কী মজা বলে লোকে খুব করে আহ্লাদ।

টাঙ্গাইলের পাঁচআনিতে বাজারটা নেই খালি,

প্রসিদ্ধ দুই দোকান আছে গোপাল ও জয়কালি,

গোপাল মিষ্টির প্রধান পুরুষ ছিলেন না তো হাদা,

হালই বংশের রাধাবল্লভ দাসের তিনি দাদা।

তার ছেলেরা দোকান চালান এখন হাসি মুখে,

‘জয়কালি’ চালাচ্ছেন স্বপন নাম রাখো তার টুকে।

আদি চমচম দেখতে কেমন কী দিয়ে তা বানায়,

এসো বন্ধু ছড়ায় ছড়ায় রেসিপিটা জানাই।

চমচমের উপরে মিষ্টি চিনির গুঁড়ো থাকে,

ভেতরটা খুব নরম যেন মধু ভরা চাকে।

জাল করে দুধ বানাতে হয় ছানা সবার আগে,

আড়াই শো গ্রাম ময়দা নতুন ছানার সাথে লাগে।

ময়দা ছানার মিষ্টি বানাও লম্বা ও গোল-গাল,

চিনির শিরায় সেটা এবার দিতে হবে জ্বাল।

আধাঘণ্টায় মিষ্টি হবে পোড়া ইটের মতো,

খাও গপাপপ মিষ্টিগুলো এবার ইচ্ছে যতো।

খাবে নাকি পোড়াবাড়ির বিখ্যাত চমচম,

মিষ্টি হবে বেশি বেশি কথা হবে কম।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: নিবন্ধ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

five × four =