পোর্ট এলিজাবেথ টেস্ট: দ্বিতীয় দিন শেষে দেয়ালে পিঠ বাংলাদেশের

সালেক সুফী: বাংলাদেশ ক্রিকেটের তৃণ্ষার্থ আবেগী সমর্থকরা হয়তো আবারো হতাশ হতে চলেছে। চলমান দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ঐতিহাসিক ওডিআই সিরিজ জয় এবং খর্বশক্তির টেস্ট দলের বিরুদ্ধে ডারবান টেস্টে চোখে চোখ রেখে চার দিন খেলার পর শেষ সকালে সুনামি আক্রান্ত ৫৩ রানে গুটিয়ে যাওয়া সমর্থকদের আশাহত করে। আশা ছিল দ্বিতীয় টেস্টে ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু   পোর্ট এলিজাবেথের সেন্ট জর্জেস পার্কে দেয়ালে পিঠ রেখে বাংলাদেশের অপেক্ষা  আরো একটি লজ্জাজনক অবস্থাদৃষ্টে বিশাল পরাজয়ের।

স্বাগতিক দলে প্রথম চয়েস ৮ জন খেলোয়াড় নেই। ওরা ভারতে আইপিএল খেলছে। ওদের ছাড়াই  স্বাগতিক দলের ৪৫৩ রানের জবাবে ১৩৯ রান করতেই বাংলাদেশের ৫ জন ব্যাটসম্যান ফিরেছে সাজঘরে। অপমানজনকক ফলো অন  এড়াতেই এখন প্রয়োজন  আরো ১১৫ রান। ব্যাটিং করছে মুশফিক ৩০ রানে সঙ্গে ইয়াসির। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় একমাত্র তিন দিন বৃষ্টি হলে বাংলাদেশ রক্ষা পেতে পারে। অবশ্য ক্রিকেটে মিরাকেল হয়। মুশফিক, ইয়াসির, মিরাজের হাত ধরে মিরাকেল হলে সবার মতো আমিও উৎফুল্ল হবো।

যেখানে ম্যাচের অবস্থান সেখান থেকে রক্ষা পেতে মুশফিক, ইয়াসির, মিরাজকে হুইল চেয়ারে চড়ে মাউন্ট এভারেস্ট আরোহন করতে হবে। মনে হয় না বাংলাদেশ খেলাটি চতুর্থ দিনে নিতে পারবে। উইকেটে স্পিন ধরছে।  দ্বিতীয় ইনিংসে মহারাজ, হার্মার অক্টোপাসের মতোই জড়িয়ে ধরবে। সাদা সিংহের দেশে বাংলার রয়েল বেঙ্গলদের  বেড়াল মনে হচ্ছে।যেভাবে বাংলাদেশ নিজেদের কাছে বার বার হেরে যাচ্ছে ভুল কৌশল আর দুর্বল নেতৃত্বের কারণে, মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে।

কাল  সকালে ২৭৮/৫ উইকেটে শুরু করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। দ্বিতীয় বল তখনও চকচকে।  শুধুমাত্র ঝটপট দু তিনটি উইকেট নিলেই বাংলাদেশ খেলায় ফিরতে পারতো। খালেদ ভালো বোলিং করে ভেরিনকে ফেরালো। কিন্তু ওই বল হাতে সিরিজে বাংলাদেশের জম কেশব মহারাজ এবার ব্যাট করে বাংলাদেশকে ভারত মহাসাগরে ছুড়ে ফেললো। চার বোলার নিয়ে টেস্ট খেলার কৌশল যে আত্মঘাতী আবারো প্রমাণিত হলো।

প্রথম ম্যাচে অপাক্তেয় করে রাখা তাইজুল ৫০ ওভার একাই বল করে ১৩৫ রানের বিনিময়ে ৬ উইকেট নিয়ে তবুও কিছুটা স্বস্তি দিলো। খালেদ ( ৩/১০০) মন্দ করেনি। আগেই লিখেছি এই মাঠেই গড় প্রথম ইনিংস রান ৩০৫।  নাহয় হতো ৩৫০।  যখনি তারা ৩৫০ পেরিয়েছে আমি টুইট করেছি ম্যাচ থেকে ছিটকে গেলো বাংলাদেশ। চার জন নিয়ে টেস্ট খেলার ঝুঁকি হলো একজন ছন্দ হারালে দলের আক্রমণ নির্বিষ হয়ে যায়। মিরাজ এবং এবাদত এই ইনিংসে সাদামাটা বল করেছে।  ফল যা হবার তাই।

দক্কিন আফ্রিকা দলের ৪৫৩ রানের জবাবে ব্যাটিং করতে নেমে প্রথম ওভারেই প্রথম টেস্টে বাংলাদেশের ব্যাটিং হিরো মাহমুদুল হাসান জয়কে হারালো। বেশ কিছুদিন পর দলে ফিরে তামিম নিজের ছন্দে ছিল। শান্তর যোগাযোগে দ্বিতীয় উইকেটে ৮০ রান যোগ হলো। কিন্তু ওই যে অফ স্টাম্পের বাইরে থ্রি কোয়াটার লেংথে পিচ করা ইন সুইং বলে যে দুর্বলতা সেটাই কাল হয়ে দাঁড়ালো তামিমের জন্য।  আবারো ৪৭ রানের প্রতিশ্রুতি দেখানো ইনিংস মুকুলেই ঝরে গেলো। একই পথে সহগামী হলো শান্ত। ৮২-১২২ এরই মাঝে প্রথম সারির চার উইকেট তামিম, শান্ত, মোমিনুল, লিটনকে হারিয়ে বাংলাদেশ প্রায় সর্বশান্ত।

জানিনা কি হয়েছে মমিনুলের।  ব্যাটসম্যান হিসাবে ওর অবস্থান দলে  এখন নড়বড়ে। দলকে চালাতেও পারছে না। হয়তো টিম ম্যানেজমেন্ট ওকে পর্যাপ্ত স্বাধীনতা দিচ্ছে না। যাহোক ১৩৯/৫ অবস্থানে কঠিন যুদ্ধে বাংলাদেশ। মুশফিক আছে ৩০ রানে। এখনো ১১৫ করতে হবে ফলো অন এড়াতে।  উইকেটে স্পিন ধরছে। মহারাজ, হারমারের বলে আগুন ছড়াবে কাল।  দেখার অপেক্ষা বাংলার বাঘেরা  যুদ্ধের মাঠে কি করতে পারে।

এখন থেকেও টেস্ট ক্রিকেটে ঘুরে দাঁড়ানোর নজির আছে। তবে ইতিহাস সমর্থন দেয না। এই মাঠে গড় দ্বিতীয় ইনিংস স্কোর ২৩৫।  সেই দূরত্বেও বাংলাদেশ পৌঁছাতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না। আমি সবসময় বাংলাদেশ নিয়ে আশাবাদীদের দলে।  যা লিখেছি হয়তো বাস্তবতার নিরিখে যথার্থ।  কিন্তু ক্রিকেট মাঝে মাঝে সমীকরণ মানে না। অঘটন ঘটন পটিয়সী বলেই টেস্ট  ক্রিকেট সবাই ভালোবাসে। হোক না তেমন কিছু এই টেস্টে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

two + sixteen =