সালেক সুফী
অনেক তর্ক বিতর্ক শেষে হাইব্রিড পদ্ধতিতে পাকিস্তান এবং সংযুক্ত আরব এমিরেটসে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড আয়োজিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫। গ্রুপ পর্যায়ে ভারতের খেলাগুলো হবে দুবাইতে। ভারত কোয়ালিফাই করলে একটি সেমিফাইনাল এবং একই কারণে ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে দুবাইতে। না হয় বাদবাকি সকল খেলা পাকিস্তানের করাচী ,লাহোর এবং রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত হবে. বরাবরের মত এই টুর্নামেন্টেও ভারত একই ভেনুতে সকল ম্যাচ খেলার বাড়তি সুবিধা পাবে। টুর্নামেন্টের অপরাপর দলগুলোর পাকিস্তানে খেলা নিয়ে নিরাপত্তা শংকা না থাকলেও ভারত নিরাপত্তার অজুহাতেই পাকিস্তান যাচ্ছে না. এই নিয়ে পানি কম ঘোলা হয় নি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্রিকেটের স্বার্থে পাকিস্তান মেনে নিয়েছে আইসিসির ব্যাবস্থাপনা।
১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ করাচী ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে পাকিস্তান এবং নিউজিল্যান্ডের মধ্যে খেলা দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু হবে. ফাইনাল হবে ৯ মার্চ ২০২৫। ভারত যদি ফাইনাল খেলে ফাইনাল হবে দুবাই আর না হলে লাহোর। ৮ দলের অংশগ্রহণে ১৫ ম্যাচের এই টুর্নামেন্ট পাকিস্তান এবং সংযুক্ত আরব এমিরেটসে হাইব্রিড পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পাকিস্তান ,ভারত ,নিউজিল্যান্ড ,বাংলাদেশ আছে এক গ্রূপে ,অন্য গ্রূপে আছে অস্ট্রেলিয়া ,ইংল্যান্ড ,দক্ষিণ আফ্রিকা এবং আফগানিস্তান। দুই গ্রুপের সেরা দুটি দল সেমী ফাইনাল খেলার পর বিজয়ী দলদুটি ফাইনাল খেলবে।
খেলার সূচী :
১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫: পাকিস্তান বনাম নিউজিল্যান্ড ,করাচী ন্যাশনাল স্টেডিয়াম।
২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ : বাংলাদেশ বনাম ভারত দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম।
২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ : দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম আফগানিস্তান করাচী ন্যাশনাল স্টেডিয়াম।
২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ : অস্ট্রেলিয়া বনাম ইংল্যান্ড গাদ্দাফি স্টেডিয়াম লাহোর।
২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ : পাকিস্তান বনাম ভারত দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম।
২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫: বাংলাদেশ বনাম নিউজিল্যান্ড রাওয়ালপিন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়াম।
২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫: অস্ট্রেলিয়া বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা রাওয়ালপিন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়াম।
২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫: আফগানিস্তান বনাম ইংল্যান্ড গাদ্দাফি স্টেডিয়াম লাহোর।
২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫: বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান রাওয়ালপিন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়াম।
২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫: আফগানিস্তান বনাম অস্ট্রেলিয়া গাদ্দাফি স্টেডিয়াম লাহোর
০১ মার্চ ২০২৫ : দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম ইংল্যান্ড ন্যাশনাল স্টেডিয়াম করাচী।
০২ মার্চ ২০২৫: ভারত বনাম নিউজিল্যান্ড দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম।
০৪ এবং ০৫ মার্চ দুইটি সেমিফাইনাল ভারত উত্তীর্ণ হওয়া সাপেক্ষে দুবাই বা লাহোরে অনুষ্ঠিত হবে. একই ভাবে ০৯ মার্চ ফাইনাল খেলার ভেন্যু একই ভাবে নির্ধারিত হবে.
যাক সেই প্রসঙ্গ। টুর্নামেন্টকে সামনে রেখে আটটি দল ১২ জানুয়ারি ২০২৫ র মধ্যে ১৫ জনের প্রাথমিক স্কোয়াড ঘোষণা করেছে। ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ পর্যন্ত প্রাথমিক দলে যৌক্তিক কারণে পরিবর্তন আনা যাবে। আমি যদিও বাংলাদেশ এবং অস্ট্রেলিয়ার দৈত নাগরিক কিন্তু স্বাভাবিক কারণেই মায়ের দেশ বাংলাদেশের প্রতি ভালোবাসা আবেগ আছে.
বাংলাদেশ ঘোষিত স্কোয়াড: নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক) , তানজিদ হাসান তামিম, সৌম্য সরকার, তাওহীদ হৃদয় , মুশফিকুর রহিম ,মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ , মেহেদী হাসান মিরাজ, জাকির আলী অনিক , রিশাদ হোসেন, পারভেজ ইমন , তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, নাসুম আহমেদ, তানজিম হাসান শাকিব, নাহিদ হাসান রানা।
সাধারণ ভাবে বিদ্যমান অবস্থায় নির্বাচিত দল নিয়ে তামিম ,সাকিব প্রসঙ্গ এবং লিটনের বাদ পড়া আলোচনা হতে পারে।
অনেক কথা হয়েছে বাংলাদেশের এই স্কোয়াডে তামিম ইকবাল এবং সাকিব আল হাসান খেলবে কিনা। দুই জনকে নিয়ে দুই ধরণের ইসু. বিগত টি ২০ বিশ্বকাপের আগে তামিমকে নিয়ে নাটক হয়েছে নানা ভাবে। তৎকালীন হেড কোচ চন্দ্রিকা হাতুরাসিংহে ,সাকিব আল হাসান এবং তামিমকে ঘিরে নানা বিতর্ক ,তামিমের অবসর ঘোষণা আবার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে খেলতে সম্মতি এর পর বিতর্কিত ভাবে টি ২০ বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়া এগুলো নিয়ে কম জল ঘোলা হয় নি। এর পর থেকে তামিম নিজেকে গুটিয়ে রাখে। কিন্তু অবসরের ঘোষণা দেয় নি. ইতি মধ্যে বাংলাদেশ নানা জনকে দিয়ে ওপেনারের দায়িত্ব পালন করলেও কেউ তামিমের যোগ্য উত্তরসূরি হতে পারে নি. তামিম দীর্ঘ বিরতির পর এনসিএল এবং বিপিএল খেলা শুরু করায় আশা জেগেছিলো হয়তো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলবে। কিন্তু সবার মাঝে আশা জাগলেও তামিম নিজের ফেস বুকে ঘোষণা দিয়েছে অবসরের। শেষ হয়েছে তামিমের বর্নাডো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবনের। এবার আসুন সাকিব প্রসঙ্গে। তর্ক বিহীন ভাবেই বলা যায় সাকিব নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট চৌকষ ক্রিকেট খেলোয়াড়। শুধুমাত্র ব্যাটিং বা বোলিং দিয়ে সাকিব এখনো বাংলাদেশ কেন বিশ্বের অধিকাংশ দেশের ক্রিকেট দলে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। কিন্তু সাকিব খেলোয়াড়ি জীবন শেষ না করেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্র জনতার গণআন্দোলনে পতিত সরকারের বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে হয়েছিল সাংসদ। দেশে তার নাম মামলা আছে. এছাড়াও ব্যাবসায়িক নানা প্রসঙ্গে বিতর্ক আছে. তাই রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর দেশের মাটিতে দেশের হয়ে খেলা হয় নি. এমনকি বিদেশে বাংলাদেশের হয়ে খেলেনি কয়েকটি সিরিজ। ইদানিং তার বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ ওঠায় দুবার পরীক্ষা হয়েছে। বার্থ হয়েছে সাকিব। বর্তমান অবস্থায় ১ বছর আন্তর্জাতিক খেলায় বোলিং করতে পারবে না সাকিব , নির্বাচক মন্ডলী শুধু ব্যাটসম্যান হিসাবে সাকিবকে অন্তর্ভুক্তি না করার কথা বললেও নেপথ্যে রাজনীতি আছে বলা যায়.
লিটন নিকট অতীতেও বাংলাদেশের হয়ে সব ফরম্যাটে অপরিহার্য ছিল। কিন্তু বেশ কিছু সময় জুড়ে সকল ফরমেট বিশেষত ওডিআই ফরম্যাটে নিদারুন রান খরায় ভুগছিল লিটন। নির্বাচকরা ঝুঁকি নিতে চান নি. ওর স্থানে তরুণ উদীয়মান পারভেজ ইমনকে সুযোগ দেয়া হয়েছে। লিটন কিন্তু চলমান বিপিএল টি ২০ ,২০২৫ টুর্নামেন্টে পর পর দুটি দর্শনীয় ইনিংস খেলে দারুন ভাবে ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছে। লিটন কিন্তু দক্ষ উইকেট রক্ষক। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ব্যাট হাতে বার্থ হলেও উইকেট রক্ষক এবং অধিনায়ক হিসাবে টি ২০ সিরিজে দারুন সফল ছিল. জানিনা লিটনকে স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্তি পুনঃ বিবেচনার সুযোগ আছে কিনা। দেখতে হবে বিপিএল অবশিষ্ট ম্যাচ গুলো কেমন খেলে লিটন ?
পেস বোলিং ইউনিট নিয়ে কিছু বলার আছে. এই মুহূর্তে বাংলাদেশের ভান্ডার অত্যন্ত সমৃদ্ধ। তাসকিন ,মুস্তাফিজ ,নাহিদ রানা এবং তানজিদ সাকিবকে নির্বাচনে ভুল কিছু দেখি না. হাসান মাহমুদ এবং শরিফুলকে বাদ দিতে নির্বাচকদের হয়ত অনেক কিছু বিবেচনায় নিতে হয়েছে। নাসুম এবং শেখ মাহেদীর মাঝ থেকে নাসুমকে হয়ত নেয়া হয়েছে সাকিব না থাকায়।
আমি মনে করি অতীতে যাই হয়ে থাকে এই দল নিজেদের সামর্থ অনুযায়ী খেলতে পারলে ভারত ,পাকিস্তান ,নিউজিল্যান্ড গ্রূপ থেকে সেমী ফাইনালে ওঠার যোগ্যতা রাখে। শুধু মনে রাখতে হবে হারার আগে যেন না হেরে যায় বাংলাদেশ।