প্রিমিয়ার লিগের রেকর্ড ২০তম শিরোপা জয় করলো লিভারপুল

টটেনহ্যামকে ৫-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে চার ম্যাচ হাতে রেখে রোববার ঘরের মাঠ এ্যানফিল্ডে প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জয়ের উৎসব করেছে লিভারপুল। এনিয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাথে রেকর্ড স্পর্শকারী ২০তম লিগ শিরোপা ঘরে তুললো অল রেডসরা। খবর বাসস

আর্নে স্লটের দল ম্যাচের শুরুতে গোল হজম করলেও তাতে মোটেই বিচলিত হয়নি। ৬০ হাজার স্বাগতিক সমর্থকদের উল্লাসে ভাসিয়ে ঠিকই দাপুটে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে স্লট বাহিনী। ম্যাচ শেষে পুরো এ্যানফিল্ড পরিনত হয়েছিল লাল সাগরে।

লিগের বাকি ম্যাচগুলোতে দ্বিতীয় স্থানে থাকা আর্সেনালের পক্ষে আর লিভারপুলকে ধরা সম্ভব নয়। প্রিমিয়ার লিগ যুগে এনিয়ে এটি লিভারপুলের দ্বিতীয় শিরোপা। তবে ১৯৯০ সালের পর এ্যানফিল্ডে হাজার হাজার সমর্থকদের সামনে শিরোপা জয় এটিই প্রথম। ২০২০ সালে করোনা মহামারীর কারনে দর্শকশুন্য স্টেডিয়ামে তাদের শিরোপা নিশ্চিত হয়েছিল।

ইংলিশ ফুটবলে এটাই স্লটের প্রথম মৌসুম। আর প্রথমবারই এত বড় সাফল্য, এ যেন রূপকথার গল্পের স্বপ্নের বাস্তবায়ন। জার্গেন ক্লপ নয় বছরের সফল মেয়াদে যা কিছু রেখে গেছেন সেই ধারাবাহিকতায় স্লট যেন নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য এক উচ্চতায়। ম্যাচ শেষে উচ্ছসিত স্লট বলেছেন, ‘প্রায় পুরো মৌসুমই আমরা টেবিলের শীর্ষে ছিলাম। এই দলের শিরোপা জয় করা ছাড়া উপায় ছিলনা। আমরা সবাই জানি প্রিমিয়ার লিগে খেলা কতটা কঠিন। কিন্তু শিরোপা জয়ে সবসময়ই নিজেদের উপর আস্থা ছিল। মৌসুম শুরুর সময় আমরা শীর্ষ চারে থাকাতেই সন্তুষ্ট ছিলাম। কিন্তু যে মানের খেলোয়াড়রা আমার দলে রয়েছে তাতে শুধুমাত্র শীর্ষ চারে থাকা মোটেই যৌক্তিক নয়। পুরো মৌসুমেই তারা সেটা প্রমান করেছে।’

সমর্থকদের উচ্চস্বরের সুরের মূর্ছনায় পুরো স্টেডিয়াম জুড়ে যখন ক্লাব সঙ্গীত ‘তুমি কখনো একা হাঁটবে না’ শোনা যাচ্ছিল, তখন মনে হয়েছে এমন পরিবেশ যেন শুধুমাত্র এই ক্লাবটিকেই মানায়।

যদিও ১২ মিনিটে ডোমিনিক সোলাঙ্কে যখন গোল করে টটেনহ্যামকে এগিয়ে দিয়েছিলেন তখন কিছু সময়ের জন্য পুরো এ্যানফিল্ড নিস্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। মাঠে অবশ্য তার রেশ পড়তে দেয়নি সালাহ, গাকপো, দিয়াজরা। ১৬ মিনিটেই লুইস দিয়াজ স্বাগতিকদের সমতায় ফেরান। এরপর আর লিভারপুলকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২৪ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুন করেন এ্যালেক্সিস ম্যাক এ্যালিস্টার। ৩৪ মিনিটে কোডি গাকপোর গোলে ব্যবধান ৩-১ হলে লিভারপুলের জয় সময়ের ব্যপার হয়ে দাঁড়ায়।

বিরতির পর ক্লাবের শীর্ষ গোলদাতা মোহাম্মদ সালাহ প্রথম গোলের যোগানদাতা ডোমিনিক সোবোজলাইয়ের পাস থেকে কোনাকুনি শটে বল জালে জড়ান। গোল করেই দৌড়ে গ্যালারির কাছে গিয়ে ভক্তের ফোন নিয়ে সবার সাথে সেলফি তুলে উদযাপন করেছেন মিশরীয় এই তারকা। ম্যাচ শেষের ২১ মিনিট আগে স্পার্স ডিফেন্ডার ডেসটিনি উদোগির আত্মঘাতি গোলে লিভারপুলের জয়ের ব্যবধান বেড়েছে।

এই জয়ে ৩৪ ম্যাচে ৮২ পয়েন্ট নিয়ে আর্সেনালের থেকে ১৫ পয়েন্ট এগিয়ে লিগ শিরোপা ঘরে তুলেছে লিভারপুল। অন্যদিকে মৌসুমের ১৯তম পরাজয়ে টটেনহ্যাম টেবিলের ১৬তম স্থানে নেমে গেছে। এর ফলে কোচ আনগে পোস্তেকোগ্লুর উপর চাপ আরো বাড়লো।

অথচ মৌসুমের শুরুতে পেপ গার্দিওলার দল টানা পঞ্চম বারের মত শিরোপা জয়ের পথে সুস্পষ্ট ফেবারিট ছিল। আগের চার মৌসুমে সিটিজেনরা যেভাবে দাপট দেখিয়েছে তার ধারেকাছে এবার তারা ছিলনা। গত দুই আসরের মতই আর্সেনাল এবারও শিরোপা জয়ের অন্যতম দাবীদার হয়ে উঠলেও শেষের দিকে বেশ কয়েকটি ড্রয়ে স্লটের দলের কাছে আর পেরে উঠেনি।

স্লটের নতুন কৌশলের সাথে মানিয়ে উঠতে শুরুতে খেলোয়াড়দের কিছুটা সময় লাগলেও সময়ের সাথে সাথে সেই সমস্যাও দুর হয়ে যায়। তবে দলের তিন তারকা মোহাম্মদ সালাহ, অধিনায়ক ভার্জিল ফন ডাইক ও ট্রেন্ট আলেক্সান্দার-আর্নল্ডের ভবিষ্যত নিয়ে স্লট বেশ বেকায়দায় পড়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত সালাহ ও ফন ডাইক দুই বছরের জন্য চুক্তি নবায়ন করতে পারলেও ইংলিশ ডিফেন্ডার আলেক্সান্দার আর্নল্ডের সাথে রিয়াল মাদ্রিদের যোগাযোগের গুঞ্জন রয়েছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

12 − 6 =