প্রযোজক সমিতির তথ্যমতে, এ বছর ৫০টি দেশীয় ও ৬টি ভারতীয় সিনেমা মুক্তি পেয়েছে দেশের হলে। অর্ধশত দেশীয় সিনেমার মধ্যে ব্যবসাসফল হয়েছে মাত্র দুটি সিনেমা—‘প্রিয়তমা’ ও ‘সুড়ঙ্গ’। আলোচিত হয়েছে ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’, ‘প্রহেলিকা’, ‘লিডার’, ‘ওরা ৭ জন’, ‘কিল হিম’, ‘মায়ার জঞ্জাল’, ‘মা’, ‘১৯৭১: সেই সব দিন’, ‘এম আর নাইন’, ‘অন্তর্জাল’, ‘আদিম’, ‘ক্যাসিনো’ ও ‘সাঁতাও’।
গত বছর ‘হাওয়া’ ও ‘পরাণ’ ছিল ব্যবসাসফল সিনেমার তালিকায়। এবারও বছরশেষের হিসাব টানতে গেলে মাত্র দুটি নাম উঠে আসছে—‘প্রিয়তমা’ ও ‘সুড়ঙ্গ’। ঢাকাই সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি এখন হয়ে গেছে উৎসবনির্ভর। দুই ঈদ ছাড়া সিনেমাগুলো তেমন দর্শক টানতে পারছে না হলে। প্রযোজক-পরিচালকেরাও বছরের অন্য সময়ের তুলনায় দুই ঈদে সিনেমা মুক্তি দিতে বেশি উৎসাহী। ফলে দুই বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, একেক ঈদে পাঁচ-ছয়টি সিনেমা থাকছে মুক্তির তালিকায়। মানসম্পন্ন বাংলা সিনেমার সংকটে বছরের অন্য সময়ে হলগুলো ধুঁকেছে।
এ শূন্যস্থান কিছুটা হলেও পূরণ করেছে ভারতীয় সিনেমা। অনেক বছর বন্ধ থাকার পর এ বছর দেশের হলে ভারতীয় সিনেমার মুক্তি শুরু হয়েছে। শাহরুখ খান অভিনীত ‘পাঠান’ দিয়ে এই যাত্রা শুরু হয়। এরপর একে একে এসেছে ‘কিসি কা ভাই কিসি কি জান’, ‘জওয়ান’, ‘অ্যানিমেল’, ‘মানুষ’ ও ‘ডানকি’। এখন হলমালিকদের প্রধান ভরসা হয়ে উঠেছে এসব সিনেমা। প্রথম বছরে সিনেপ্লেক্সগুলো ছাড়া ভারতীয় সিনেমা দিয়ে সিঙ্গেল স্ক্রিন তেমন সুবিধা করে উঠতে পারেনি বটে। তবে ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। আগামী বছর দেশের হলে মুক্তি পাওয়া ভারতীয় সিনেমা নিয়ে দর্শকদের আগ্রহ আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশীয় সিনেমা এগিয়ে আসতে না পারলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ঢালিউড, এ আশঙ্কাও রয়েছে।
এ বছর দেশের হলে যেমন শাহরুখ, সালমান, রণবীর, জিৎরা এসেছেন; তেমনি বাংলাদেশের একাধিক তারকা ভারতে গিয়ে কাজ শুরু করেছেন। জয়া আহসান ও বাঁধনের বলিউডযাত্রা ছিল বছরের অন্যতম আলোচিত ঘটনা। এ ছাড়া তাসনিয়া ফারিণ অভিনয় করেছেন টালিউডের ‘আরও এক পৃথিবী’ সিনেমায়, জিয়াউল ফারুক অপূর্ব করেছেন ‘চালচিত্র’, ‘পদাতিক’ দিয়ে টালিউডে কাজ শুরু করেছেন চঞ্চল চৌধুরী, শাকিব খান ভারতে গিয়ে করেছেন যৌথ প্রযোজনার ‘দরদ’, ‘যত কাণ্ড কলকাতাতেই’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন কাজী নওশাবা আহমেদ। এ ছাড়া জাতির জনকের বায়োপিক ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ বাংলা ও হিন্দি ভাষায় চলেছে সারা ভারতে।
বাংলা সিনেমা নিয়ে খুব বেশি সুসংবাদ এ বছর ছিল না। তবে ২০২৩ সালে বিদেশের হলে বাংলা সিনেমার মুক্তি বেড়েছে, এটা অনেকটা স্বস্তির। মুজিব: একটি জাতির রূপকার, ব্ল্যাকওয়ার, প্রিয়তমা, প্রহেলিকা, সুড়ঙ্গ, ১৯৭১: সেই সব দিন সিনেমাগুলো মুক্তি পেয়েছে আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন মহাদেশে। এতে একদিকে যেমন দেশীয় সিনেমার বাজার বেড়েছে, একই সঙ্গে প্রবাসীদের কাছেও দেশের সিনেমা পৌঁছে দেওয়া সহজ হয়েছে। তবে অনেকে এটাও মনে করছেন, ধর্মঘটের কারণে ২০২৩ সালে হলিউডের সিনেমা তেমন মুক্তি না পাওয়ায় বিদেশের হলে বাংলা সিনেমা জায়গা পেয়েছে। আগামী বছর হলিউডের রমরমা বাজারে বাংলা সিনেমা কতটা জায়গা পাবে, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।