বদলে যাওয়া বাংলাদেশে তিন মাসের ব্যস্ত সফর

সালেক সুফী

নভেম্বর ৬, ২০২৩ থেকে ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৪ তিন মাস ছিলাম এবার বাংলাদেশে। অগাস্ট ২০০৫ থেকে প্রবাসী হওয়ার পর এবারের মতো এতো দীর্ঘদিন বাংলাদেশ থাকা হয়নি। সময়টা ছিল ঘটনাবহুল। বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং চ্যালেঞ্জিং। নানা বৈষয়িক কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো অর্থনীতি, বিশেষত মুদ্রাস্ফীতি, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা, জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে ব্যতিব্যস্ত বাংলাদেশ। মেগা অবকাঠামো  সমূহ বাংলাদেশকে উন্নয়নের মহীসোপানে ধাবিত করেছে।

ব্যবস্থাপনা নিয়ে, সুশাসন নিয়ে নানা বিতর্ক,মতানৈক্য আছে। ১৫ বছরে ধারাবাহিক তিন টার্ম ক্ষমতায় থাকলেও স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী সরকার গণতন্ত্রের ভিত্তি মজবুত করেছে বলা যাবে না। জানুয়ারি ৭, ২০২৪ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সরকারি দল এবং প্রধান বিরোধী দলগুলোর মধ্যে ছিল টানপোড়ন। এই সময়টায় তাই রাজপথে  দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক স্রোতের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে অস্থিরতা। ইচ্ছা থাকলেও তাই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ইচ্ছা অনুযায়ী ঘুরে দেখা সম্ভব হয়নি।

তবুও মেগাপ্রকল্প মেট্রো রেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেস, মাতারবাড়ি-মহেশখালী জ্বালানি বিদ্যুৎ হাব, কক্সবাজার রেল স্টেশন, জ্বালানি বিদ্যুতের নানা সরকারি স্থাপনা পরিদর্শন করেছি। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় , ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ার্স উপস্থিত হয়ে জ্বালানি বিদ্যুৎ চ্যালেঞ্জ নিয়ে কথা বলেছি। বাংলাদেশ পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট, কয়েকটি বিদ্যুৎ এবং গ্যাস কোম্পানির কর্মকর্তাদের সঙ্গে, জ্বালানি বিদ্যুৎ সেক্টর পলিসি মেকার্সদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।

সুযোগ হয়েছে বসুন্ধরা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে দুবার আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলা এবং শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ক্রিকেট খেলা দেখার।  ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় খেলাধুলা এবং বিদ্যুৎ জ্বালানি নানা বিষয়ে কথা বলেছি। পত্র পত্রিকায় লিখেছি।  বাংলাদেশে সশরীরে উপস্থিত থেকেই দেখেছি আলোচিত জাতীয় নির্বাচন, নির্বাচন শেষে নতুন ভাবে পুরোনো সরকারের দায়িত্ত্ব গ্রহণ, নতুনভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার শপথ শুনেছি। শেষ দিকে কক্সবাজার এবং সেন্ট মার্টিন সফর করে জানার তৃষ্ণা মিটিয়েছি। অস্ট্রেলিয়া ফিরে তৃতীয় বারের মতো কোভিড১৯ আক্রান্ত হয়ে সবে সুস্থ হলাম, পায়ের জখম সেরে উঠেছি। ভাবলাম বাংলাদেশ সফর নিয়ে কয়েক পর্বে বিস্তারিত লিখি।

বদলে যাওয়া বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জগুলো

আমি মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম। সম্পৃক্ত থেকেই দেখেছি স্বাধীনতার সূর্যোদয়।  দেখেছি ঝরাপালকের ধ্বংসস্তূপ থেকে বাংলাদেশের  জাগরণের কঠিন চ্যালেঞ্জ। ১৯৭৫, ১৯৯০, ১৯৯৬, ২০০১-২০০৬ দেখেছি বাংলাদেশের পালাবদল। ১৯৭৭-২০০৫ স্বাধীনতার মূলমন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের জ্বালানি সেক্টর উন্নয়নে কাজ করেছি। দেশের জ্বালানি বিদ্যুৎ খাতের পাশাপাশি, ক্রীড়া সংস্কৃতি, সাংবাদিকতার অঙ্গনেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত থেকেছি।

দেখেছি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান, সেনা শাসক জেনারেল এরশাদ, বেগম খালেদা জিয়া, শেখ হাসিনা এবং দ্বিতীয় বার খালেদা জিয়া সরকারের শাসন। গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দায়িত্ব পালন কালে কায়েমী স্বার্থবাদীদের ষড়যন্ত্রের কারণে মিথ্যা অভিযোগে চাকরি হারিয়ে প্রবাসী হয়েছি। দক্ষিণ এশিয়া,পশ্চিম এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকায় বিভিন্ন দেশে জ্বালানি বিদ্যুৎ বিষয়ে ব্যাস্ত জীবন কাটিয়েছি।

অনেকের স্বপ্নের দেশ অস্ট্রেলিয়ায় স্থিতু হলেও বাংলাদেশকে ভুলে যাইনি। নানা ভাবে নানা মিডিয়ায় বাংলাদেশকে নিয়ে কথা বলেছি, নিয়মিত লিখেছি, লিখছি বাংলাদেশ এবং বিভিন্ন দেশের পত্রপত্রিকায়। আর তাই বলতে পারি বদলে যাওয়া বাংলাদেশ নিয়ে আমার জানার ক্ষেত্র অনেক প্রসারিত। এক কথায় বলবো আকারে পরিসরে বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক সম্প্রসারিত হলেও সুশাসন এবং কার্যকরী গণতন্ত্রের অভাবে বাংলাদেশ আজো কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে  পৌঁছাতে সংগ্রাম করছে।

আমার বিবেচনায় বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জগুলো নিম্নরূপ

বিশ্বজোড়া নানা ভূরাজনৈতিক বিবর্তনের সময়ে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা, মুদ্রাস্ফীতি সামাল দেওয়া, দ্রব্যমূলের উর্ধগতি সামলানো

জ্বালানি বিদ্যুৎ সংকট নিরসনে দ্রুত নিজেদের জ্বালানি সম্পদ আহরণ, ব্যবহার এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে সতর্ক ভাবে রূপান্তর।

সমাজ জীবনের সকল ক্ষেত্র থেকে অবাধ দুর্নীতি নির্মূল, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা। পাচার কৃত অর্থ সম্পদ ফিরিয়ে আনা।

জনগণকে সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়নে সম্পৃক্ত করা

বিশ্ব পরিস্থিতির প্রতি নিবিড় দৃষ্টি রেখে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখা।

মূল শহরগুলোর যান জট, শব্দ দূষণ, জল জট , বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ।

বাস্তবমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা এবং জনস্বাস্থ্যের সংস্কার।

পর্যটন শিল্পের বাস্তব মুখী বিকাশ এবং বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করা

সর্বোপরি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং মেধা পাচার রোধ।

চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা আছে দেশে প্রবাসে।  পর্যায়ক্রমে লিখবো। আমার মনে হয় বর্তমান প্রজন্ম অনেক মেধাবী। সঠিক পথের দেখা পেলে বর্তমান প্রজন্ম বাংলাদেশকে পরিবর্তনের মহাযজ্ঞে সঠিক নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত হচ্ছে। প্রয়োজন শুধু পথের বাধা সরিয়ে দেওয়া।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

three × 3 =