বরেন্দ্রের জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৬১ হাজার ৮১১টি পরিবার সুপেয় পানি পাবে

আয়নাল হক, বাসস

রাজশাহী, ১৭ নভেম্বর, ২০২৩: খরা প্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ২,৪৮,৩৫১ জনসংখ্যার প্রায় ৬১,৮১১টি পরিবার সুপেয় পানি পাবে। এই লক্ষে পানীয় জলের জন্য ১৩৪টি সাবমারসিবল পাম্প স্থাপন করা হবে এবং ১৬টি ম্যানেজড অ্যাকুইফার রিচার্জ সিস্টেম, ২৪টি রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং সিস্টেম এবং ২০টি পুকুর গৃহস্থালি কাজে ব্যবহারের জন্য পুনঃখনন করা হবে।

সুবিধাভোগীদের কল্যাণে সম্পূরক সেচের জন্য চেক ড্যাম নির্মাণ এবং জল সংরক্ষণের জন্য নয়টি খাল একসঙ্গে পুনঃখননের বিধান রয়েছে।

এছাড়াও,বোরো ধান চাষের জন্য পানির খরচ কমাতে ৯০০টি সেচ ব্যবস্থা স্থাপন করা হবে এবং ফল বাগানে ৪৪টি ড্রিপ সেচ পদ্ধতিকে পানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তি এবং তিনটি মাটির বাঁধের প্রমাণিত উপায় হিসেবে প্রচার করা হবে।

‘বরেন্দ্র ট্র্যাক্টে দুর্বল সম্প্রদায়ের জন্য পানি ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের পক্ষে সুবিধাভোগীদের সামগ্রিক জীবনযাত্রা এবং জীবিকার অবস্থার উন্নতির ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে ভৌত অবকাঠামোগুলোকে প্রচার করা হবে।

কোকা-কোলা ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তায় নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার আটটি ইউনিয়নে তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শুরু করেছে ডাসকোহ ফাউন্ডেশন।

প্রকল্পের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হল: ভূপৃষ্ঠ ও বৃষ্টির পানির সর্বোত্তম ব্যবহার, পানির সংরক্ষণ, ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী বিশেষকরে চরম দরিদ্র এবং জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিরাপদ ও নিরাপদ পানি সরবরাহ করা এবং তাদের বাড়ির চারপাশে পানি সংরক্ষণ করা শুরু করা।

প্রকল্প ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম খান বাসস’কে বলেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ততা ও ব্যবহারের মাধ্যমে টেকসই,কার্যকর, অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বরেন্দ্র এলাকার সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য পানির প্রাপ্যতা বাড়ানোর ওপর সর্বোচ্চ জোর দেওয়া হবে।

প্রকল্পটি প্রায় ২৪,২৩২ পরিবারকে সেবা প্রদান করবে যার মধ্যে ৯৬,৫৪০ প্রত্যক্ষ সুবিধাভোগী রয়েছে এবং তাদের মধ্যে ৭০ শতাংশ চরম দরিদ্র এবং অনগ্রসর জাতিগত সংখ্যালঘু। ১,৪৪,৮১০ জনসংখ্যার প্রায় ৩৬,০৪৯ অন্যান্য পরিবার প্রকল্পের কার্যক্রম থেকে সুবিধা পাবে। কীভাবে সম্প্রদায়গুলো ভূ-উৎস থেকে উত্তোলিত জলের প্রয়োজনীয়তা কমাতে পারে এবং কীটনাশক, পলল, ধাতু এবং সার দিয়ে পৃষ্ঠের জলের দূষণ কমাতে পারে সে সম্পর্কে সুবিধাভোগীদের জ্ঞান দেওয়া হবে। তিনি উল্লেখ করেছেন,প্রকল্পটি সম্প্রদায়গুলোকে সাংগঠনিক সরঞ্জাম সরবরাহ করার জন্য একটি অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়া ব্যবহার করবে যা তাদেরকে তাদের

বিদ্যমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে এবং ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা করতে সক্ষম করে।

এটি সম্প্রদায়গুলোতে পানি পরিষেবার প্রাপ্যতা এবং মান উন্নত করার জন্য চাহিদা মেটাতে এবং সচেতনতা তৈরিতেও কাজ করবে। ভূ-গর্ভস্থ পানি সংরক্ষণ এবং খাল, বিল, পুকুরসহ প্রাকৃতিক জলাশয়ে বৃষ্টির পানি

সংরক্ষণের জন্য পানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তির প্রচার, সংরক্ষিত ভূ-পৃষ্ঠের পানির মাধ্যমে সম্পূরক সেচের ওপর জোর দেওয়া হবে।

পানীয় এবং সেচের পানি ছাড়াও প্রকল্পটি প্রাথমিকভাবে কমিউনিটি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে ফোকাস করবে কারণ, উন্নত পানি ব্যবস্থাপনার চাহিদা রয়েছে।

পানিহারা গ্রামের একজন সুবিধাভোগী মনিকা হেমব্রম (৪৫) প্রকল্পটি পানি সম্পদ ব্যবহারের ধরণ পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত পানির চাপযুক্ত এলাকায় একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে ।

তারা ফসলের ধরণ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে উপকৃত হবে বিশেষকরে কম পানি ব্যবহারকারী ফসলের চাষ, সংরক্ষিত ভূপৃষ্ঠের পানি ব্যবহার, জলাধার রিচার্জ করার জন্য বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করা এবং দূষণ থেকে নিরাপদ পানির উৎস

রক্ষা করা।

গ্রাম-বেলডাঙ্গা মিসনপাড়ার আরেকজন সুবিধাভোগী ভূপেন টুডু (৫৫) বলেন,ইউনিয়ন পরিষদ এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া সম্প্রদায়ের কাছে ন্যায়সঙ্গত পানি পরিষেবা সরবরাহ করতে স্থানীয় সরকারের সক্ষমতা উন্নত করবে।

রসুলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মুত্তালিব বলেন, তাদের এলাকাটি অনগ্রসর এবং কঠোর জলবায়ু এবং পানির স্বল্পতার কারণে উন্নয়ন সূচকে পৌঁছানো কঠিন।

তিনি অবশ্য বলেছেন, প্রকল্পটি তাদের বিদ্যমান পানি সংকট প্রশমনের মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য আনতে অনেক অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

19 + 8 =