বাংলাদেশ ক্রিকেটে জয়ের ধারাবাহিকতা প্রয়োজন

সালেক সুফী: আন্তর্জাতিক ক্রীড়া অঙ্গনে একমাত্র ক্রিকেটের কারণে বাংলাদেশকে চিনে বিশ্ব।  যদিও দক্ষিণ এশিয়ার ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকার মতো বাংলাদেশের সাফল্য সীমিত। প্রতিভা নিয়ে প্রশ্ন নেই।  কিন্তু উপযুক্ত পরিবেশ, যথাযথ আধুনিক স্থানীয় অবকাঠামো এবং সর্বোপরি নির্ভেজাল বিসিবির তত্ত্বাবধানের অভাবে সাফল্যের ধারাবাহিকতা আসেনি।

তবে সম্প্রতি সুবাতাস আসতে শুরু করেছে। সংশ্লিষ্ট সবার সংযত আচরণ, আমিত্ব পরিহার করলে বাংলাদেশ ক্রিকেট তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে শীর্ষ পাঁচে স্থান করে নিতে পারবে। প্রয়োজন ক্রিকেট ঘনিষ্ঠদের নিজেদের চেনা। পেশাদারি ক্রিকেট খেলছে বাংলাদেশ। কিন্তু কারো কারো ক্ষেত্রে পেশাদারিত্বের নাম নিশানা নেই।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আড়াই দশক হয়ে গেলেও বাংলাদেশের কিন্তু কোনো আন্তর্জাতিক আসরে শিরোপা অর্জন করেনি। অনুর্ধ ১৯ দল একবার বিশ্বকাপ জয় করেছে। এর বাইরে অর্জন বলতে এশিয়া কাপে দুইবার ফাইনাল খেলা। ওডিআই ক্রিকেটে মূলত পঞ্চপান্ডব খ্যাত বিশ্বমানের ৫ ক্রিকেটার সমসাময়িক থাকায় বাংলাদেশ সমীহ জাগানো দলে পরিণত হয়েছে।

মাশরাফি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নেই। তামিম, মাহমুদুল্লাহ ক্রিকেট জীবনের গোধূলি লগ্নে।  সাকিব, মুশফিক এখনো ফর্মের তুঙ্গে।  সেই সঙ্গে তাইজুল, লিটন, মুস্তাফিজ, তাসকিন, মেহেদী মিরাজ পরিণত হওয়ায়, শান্ত নিজেকে মেলে ধরায় সব ফরম্যাটে এখন  উন্নয়ন ধারা সুস্পষ্ট। পাশাপাশি মানসম্মত তাওহীদ হৃদয়, এবাদত, হাসান মাহমুদ বিকশিত হতে থাকায় বাংলাদেশ ক্রিকেট সবে সাফল্য আসতে শুরু করেছে।

সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে দৃষ্টিভঙ্গিতে।  বাংলাদেশ এখন ৮ ব্যাটসম্যান ৩ বোলার নিয়ে সংরক্ষণশীল ক্রিকেট খেলছে না। দেশের উইকেট বিশেষত সিলেট এবং চট্টগ্রামে স্পোর্টিং হওয়ায় বাংলাদেশ ৫ জন বোলার (দুইজন অলরাউন্ডার) নিয়ে সাহসী ক্রিকেট খেলছে। সম্প্রতি বিশ্বজয়ী ইংল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ড দলকে টি২০ সিরিজে হারানোর পর একমাত্র টেস্ট চার দিনে জয় করেছে। ২০২৩ বাংলাদেশকে এশিয়া কাপ, ওডিআই বিশ্বকাপে খেলতে হবে। জয়ের ধারা অক্ষুণ্ন রাখতে অর্জনগুলো সুসংহত রাখতে হবে।

স্থানীয় ক্রিকেটে আমূল পরিবর্তন চাই

ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটের পাশাপাশি খুলনা, রাজশাহী, বগুড়া, কক্সবাজারে সুন্দর খেলার মাঠ আছে।  বরিশাল, রংপুর, কুমিল্লা, সাতক্ষীরা, ময়মনসিংহ, যশোর, ফরিদপুরে একটু শুভ দৃষ্টি দিলেই ভালো উইকেটসহ  ক্রিকেট স্টেডিয়াম গড়ে তোলা যায়। আইপিএলের মতো বিপিএল হোম এবং আওয়ে পদ্ধতিতে করতে হলে কিছু আবাসন সুবিধা উন্নয়ন করতে হবে।

এখন অনেক শহরেই অভিজাত আবাসন ব্যবস্থা আছে। বিসিবি, ক্রীড়া মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিয়ে এগুলেই তিন থেকে পাঁচ বছরে ৭-৮ টি ভেন্যুকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য প্রস্তুত করা যাবে। জয়ের ধারবাহিকতা রক্ষা করতে হলে পরাজয়ের ঝুঁকি নিতে হবে।

আমি দেখছি লিটন, শান্ত, তাওহীদ হৃদয়, শামীমের মতো অপেক্ষাকৃত নবীন খেলোয়াড়েরা আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলছে। আগ্রাসী রূপে আবির্ভুত হয়েছে তাসকিন, এবাদত, হাসান মাহমুদ। ভালো উইকেটে নিজেদের উজাড় করে করে সঠিক তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশে পেস আক্রমণে বৈচিত্র এসেছে। ফিল্ডিং অনেক উন্নত হয়েছে, রানিং বিটুইন দি উইকেট অনেক সমৃদ্ধ।

দেশের ক্রিকেটে ভালো খেলা সবাইকে পরিকল্পনা মাফিক গড়ে তুলে তিন ফরম্যাটে অন্তত ৬০ জন (প্রতি ফরম্যাটে ২০ জন) খেলোয়াড় ট্যালেন্ট পুল নিশ্চিত করতে হবে। অন্ত ৩-৪ লেগ স্পিনার প্রয়োজন  বিদেশে সাফল্য পেতে হলে। সব দলে এমনকি নেপালেও আছে। বিসিবিতে বিভাগীয় ভিত্তিতে পরিচালক আছে।

আমি খুলনা, রাজশাহী, যশোরে, বরিশাল অঞ্চলে ক্রিকেট পরিবেশে হতাশ।  সম্প্রতি খুলনা স্টেডিয়ামের হতশ্রী রূপ থেকে কষ্ট হয়েছে।  একটু সচেতন হলেই কক্সবাজার স্টেডিয়ামটি এতদঅঞ্চলের সেরা হতে পারে। পদ্মা পাড়ে একটি আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট কমপ্লেক্স গড়ে তোলার সুযোগ আছে।

আমি ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে দেশে বিদেশে ক্রিকেট ঘনিষ্ট। সেই সূত্রে ক্রিকেট বিশ্লেষক বিশেষত সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় বন্ধুদের অনুরোধ করবো স্পেকুলেটিভ লেখালিখি থেকে নিজেদের সংযত রাখার।

একজন ক্রিকেটারকে বড় করতে চেষ্টা করে অন্যকে খাটো করবেন না। ক্রিকেটের ইতিহাস জানুন।  দলের গঠনমূলক আলোচনা সমালোচনা করুন।  তাহলেই বাংলাদেশ ক্রিকেটে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা আসবে। অচিরেই বাংলাদেশ কোনো এক ফরম্যাটে বিশ্বজয়ী হবে।

সালেক সুফী: আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিশ্লেষক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

five × one =