‘বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিই এখন বিশ্বে অনুকরণীয়’

বাংলাদেশকে ঘিরে ভূরাজনীতি এখনও চলছে; তবে যেসব দেশ নেতিবাচক খেলেছে তারা সফল হয়নি। এডিটরস গিল্ড আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় এমন মন্তব্য করে বিশিষ্টজনরা বলেন, সকলের সাথে সমান সুসম্পর্ক রাখায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিই এখন বিশ্বে অনুকরণীয়।

শনিবার বনানীর ঢাকা গ্যালারিতে এডিটরস গিল্ড আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্টজনরা জানান, অস্থিতিশীল মিয়ানমার শুধু বাংলাদেশ নয়, চীন-ভারত এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও উদ্বেগের।

বিশ্ব নেতাদের আগ্রহ এখন বে অফ বেঙ্গল। এ অঞ্চলের শক্তিধর দেশ চীন বা ভারত যেন তার দখল নিতে না পারে তাই ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ অবশ্য এই তিন শক্তির মাঝে থেকে, সকলের সাথে সুসম্পর্ক রেখে, নিজেদের শক্ত অবস্থান জানান দিয়েছে।

ভোরের কাগজ-এর সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, ভূরাজনীতিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এটি। এই অঞ্চলের যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তাতে আমাদের ওপরে এতো বড় একটা জনগোষ্ঠীর চাপ, এটার বহুমাত্রিক প্রভাব বাংলাদেশের ওপর পড়বে। এটা যদি আমরা খুব ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ না করি। আমার মনে হচ্ছে শুরুর দিকে আমাদের পলিসির কিছুটা ঝামেলা হয়েছিল। পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যেও যে একটা মতপার্থক্য আছে, সে জায়গা থেকে সবচেয়ে সুবিধা বাংলাদেশ নিতে চায়।

সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ বলেন, পশ্চিমাদের মনোভাব নির্বাচনের পর কোনো পরিবর্তন হয়নি। কারণ, যদি এক এগারোর মতো সরকার আসতো তবে তারা কীভাবে প্রশ্ন করতো। ধারাবাহিকভাবে আমরা সকল দেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক-বহুপাক্ষিক সম্পর্ক বজায় রেখেছি। তবে অফিসিয়ালি স্বীকৃতি দেয়নি। নির্বাচন পছন্দ না করলেও তারা কুটনৈতিক সম্পর্ক থেকে সরে আসবে না।

নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক এয়ার কমডোর (অব.) ইশফাক ইলাহী চৌধুরী বলেন, এখন মাথা চাপড়ানো ছাড়া বিএনপির উপায় নেই। যদি তারা নির্বাচনে আসত, তাহলে বিরান সংখ্যক আসন নিয়ে তারা সংসদে থাকত। তারা সংসদেও থাকতো, বাইরেও থাকতো। এখন কী হলো? তারা সংসদেও নেই, বাইরেও নেই।

বক্তারা জানান, নির্বাচনের আগে যারা বাংলাদেশের নেতৃত্ব আর পররাষ্ট্র নীতি নিয়ে আশঙ্কা জানিয়েছে তারাই এখন সুসম্পর্ক তৈরিতে এগিয়ে আসছে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমেদ বলেন, এতো চাপের মুখে বাংলাদেশ কী করবে? আমার মনে হয় বাংলাদেশ যা করছে, সেটাই অব্যাহত রাখবে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, চীন চাইবে না এখানে আমেরিকার কাঠামো তৈরি হোক, ভারতও চাইবে না। তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারের ভেতরে দুই ভাগে ভাঙন ধরেছে। এবার যে ভাঙন ধরেছে তাতে পশ্চিমা দেশগুলো সমর্থন করেছে। যুক্তরাষ্ট্র বার্মা অ্যাক্ট করেছে। চীনের সমর্থন বিদ্রোহীদের সাথে। এই নৃগোষ্ঠী কেউ স্বাধীন হতে চায় না। তাদের নিজেদের আর্মি ও মুদ্রা আছে। সেইখানে আরাকান আর্মি সান প্রভিন্সে জেতার পর তারা আরাকানে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করছে। এ অঞ্চলে মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ সমাধানে চীন ভারতের মতো শক্তিরা কখনোই যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ পছন্দ করবে না।

নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, প্রথম কথা হচ্ছে আমরা চাই রোহিঙ্গারা আমাদের কাছে না আসুক। সারাবিশ্বে থাকা রোহিঙ্গাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাদের কী করা উচিত।

তিনি আরও বলেন, আমাদের নিজেদের সমাধান নিজেদেরই করতে হবে। মিয়ানমার চীন থেকে বের হতে পারবে না। আমরা বড় রাজনীতির মধ্যে না ঢুকে আমাদের বলতে হবে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান। আমাদের সাথে সম্পর্ক যা আছে তা একই রকম রাখতে দিতে হবে। ভারতের সমস্যা চীন। আমাদের সমস্যা আরাকান।

আইনজীবী ও গবেষক ড. ফারজানা মাহমুদ বলেন, ৭ জানুয়ারির আগে নিষেধাজ্ঞার ভয় ছিলো। জো বাইডেনের চিঠিটা দেখেন, তারা সামনে কাজ করতে চায়। মিয়ানমারের সাথে কূটনৈতিকভাবে কী করতে পারি। বিনিয়োগ বড় দেশের রয়েছে। যার যতোই অর্থনৈতিক আগ্রহ থাকুক না কেন আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা দরকার।

এডিটরস গিল্ডের সভাপতি মোজাম্মেল বাবু বলেন, বাংলাদেশ তার অন্তর্গত শক্তিতে পৃথিবীর সকল পরাশক্তির সাথে যে ভারসম্যের যে রাজনীতি করে যাচ্ছে সেটা নিশ্চয় অব্যাহত থাকবে। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ তার অবস্থান বিশ্বকে জানান তিতে পেরেছে। যেটা প্রথমদিকে কেবল স্লোগান ছিলো, ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’। এখন এটাই পৃথিবীর মেইনস্ট্রিম কূটনীতি এবং এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সম্পদে পরিণত হয়েছে।

একাত্তর টিভি 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

eighteen + 11 =