সালেক সুফী: বাংলাদেশের ক্রীড়ামোদীরা যখন বেঙ্গল টাইগার্সদের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর নিয়ে মত্ত ঠিক তখনি নিরবে নিভৃতে বাংলার বাঘিনীরা বিশ্বকাপ মিশন শেষ করলো কিউই পাখির দেশ নিউজিলান্ডে। বিশ্বকাপ অথচ বাংলাদেশ মিডিয়ায় খুব একটা আলোড়ন নেই। অথচ সীমিত সুযোগ আর পৃষ্টপোষকতার বাংলাদেশ নারী দল প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলতে এসে ভালোই করেছে বলবো। পাকিস্তান দলের বিরুদ্ধে জয়ী হয়েছে। তুখোড় বোলিং এবং তৎপর ফিল্ডিং করে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড দলের সঙ্গেও ম্যাচগুলোর এক পর্যায় পর্যন্ত তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা সৃষ্টি করেছিল। আরো কিছু ম্যাচের অভিজ্ঞতা থাকলে নিঃসন্দেহে জিততে পারতো ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিরুদ্ধে। আমি কিন্তু ফারজানা, নিগার, শামীমা, সালমা, নাহিদা, জাহানারাদের খেলায় অনেক আত্মবিশ্বাস দেখেছি। দলটিকে যথাযথ পরিচর্যা করা হলে, দেশে মেয়েদের প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ক্রিকেট নিয়মিত করা হলে মেয়েদের দলটি নিয়মিত জয় পেতে থাকবে।
দেখেছি এই দলের খেলা ২০১৯এর টি২০ বিশ্বকাপে। ওই দলটির অধিকাংশ খেলোয়াড় বর্তমান দলে আছে। দলের লড়াই করার মানসিকতা আছে। স্পিন আক্রমণ অনেক উন্নত, ফিল্ডিং প্রখর। তবে দুর্বলতা আছে পেস বোলিংযে এবং সীমাবদ্ধতা আছে বাটিংয়ে। চারজন উঁচু মানের স্পিনার থাকায় প্রায় প্রতিটি দলকেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যাটিং করার সময় সাচ্ছন্দ্য বোধ করেনি। দলে যদি জাহানারার সমমানের দুইজন পেসার থাকতো তাহলে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মতো দলগুলোকে চেপে ধরেও টার্গেট সীমিত রাখতে পারেনি। সিডনিতে ভালো খেলতে থাকা জান্নাতুল সুমনাকে দলে নেওয়া হলে দল উপকার পেতো।
ব্যাটিং সামর্থ প্রথম চার জনে (দুই শামীমা, ফারজানা, নিগার ) সীমিত। সালমা, রুমানা মাঝে মাঝে কিছু রান করলেও অধিকাংশ লেট মিডল অর্ডার এন্ড লেট্ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা ক্রস বাটে খেলে। তাই কিছু কিছু ম্যাচে প্রতিপক্ষকে ধরা ছোঁয়ার সীমানায় সীমিত করলেও ম্যাচ জয় করতে পারেনি। বর্তমান অবস্থায় ভালো বোলিংয়ের বিরুদ্ধে দলটিকে ১৭০-১৮০ রানের বেশি করার সামর্থ আছে বলে মনে হয়নি। তবে সব কিছু মিলিয়ে দলটির পারফরমেন্স সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ দলের টি ২০ বিশ্বকাপের থেকে উন্নততর মনে হয়েছে। দলটিকে বিশ্বকাপ খেলার আগে আরো কিছু আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ দিলে অন্তত আরো দুটি ম্যাচ জয় করতে পারতো। একটি দলকে বিশ্ব কাপের মতো আসরে ভালো খেলতে হলে অন্ত ৩ জন ভালো মানের পেস বোলার এবং ৬-৭ জন ভালো মানের ব্যাটসম্যান দরকার। আমি সুপারিশ করবো দেশের বিকেএসপি গুলোতে মেয়েদের ক্রিকেট খেলার সুবিধা আরো সুগঠিত করতে, মেয়েদের টি২০ টুর্নামেন্ট এবং ওডিআই লীগ করতে। বিশেষত ফুটবলের মতো ক্রিকেটেও যদি রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবন এলাকার পাহাড়ি কিশোরীদের যদি সুযোগ করে দেয়া করা যায় তাহলে মেয়েরা আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে সম্মান বেয়ে আনবে।